শিকলে বাঁধা খায়রুল। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যমিকের ফল বেরনোর সময় এলেই মন খারাপ হয় মায়ের। আঠারো বছর আগে এই পরীক্ষার সময়েই অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছিল ছোট ছেলে। কিছুদিন পরে সেজ ছেলেরও একই অবস্থা হয়। ছেলেদের চিকিৎসায় ডাক্তার-বদ্যি, কিছুই বাকি রাখেননি প্রৌঢ় দম্পতি। খরচ জোগাতে কপর্দকশূন্য হয়েছেন। এখন আর নিয়মিত চিকিৎসাও হয় না। জানালেন, এক ছেলের অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও অন্য জনের এমনই অবস্থা যে পায়ে শিকল বেঁধে রাখতে হয়। সম্প্রতি সাহায্যের আশায় কাটোয়ার মহকুমাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই দম্পতি।
কেতুগ্রামের রায়খাঁর বাসিন্দা ফজলুল হক শেখের ইট-বালি সরবরাহের ব্যবসা ছিল। দিনমজুরি আর কাপড় ফেরিই ভরসা এখন। তাঁর চার ছেলের মধ্যে সেজ রফিকুল এহসান শেখ ও ছোট খায়রুল হান শেখ মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে জন্ম থেকেই তাঁরা এমন নয়। ফজলুল জানান, রাজুরবান্ধব স্কুলের ছাত্র খায়রুল মাধ্যমিকের আগে ভৌতবিজ্ঞানের টেস্টের দিন হঠাৎ প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফিরে আসে। ক্রমশ মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। ভাইয়ের আচরণ দেখে রফিকুলও অসুস্থ হয়ে পড়েন। জমি বিক্রি করে বহরমপুর, বর্ধমান পরে কলকাতায় এনআরএস ও বাঙুরে চিকিৎসা হয় দুই ছেলের। কিন্তু লাভ হয়নি। ২০১৩-র পরে টাকার অভাবে নিয়মিত চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। মা খায়রুন্নেসা বিবি বলেন, ‘‘সতেরো বছরে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করেছি।’’
বর্তমানে রফিকুল থাকেন কলকাতায় দাদার কাছে। খায়রুল থাকেন রায়খাঁতেই। মাঝেমধ্যে হিংস্র হয়ে ওঠায় তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন বাবা-মা। খায়রুন্নেসা জানান, একবার ঝাড়খণ্ড, আর একবার মালদহ পালিয়েছিল খায়রুল। ফজলুল বলেন, ‘‘ওকে হোমে রাখা ছাড়া উপায় নেই। প্রশাসনই ভরসা।’’ বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি।
তবে একজন মানসিক রোগীকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখাকে বেআইনি বলছে জেলা সমাজকল্যাণ দফতর। তাদের বক্তব্য, ওই পরিবারের আগেই যোগাযোগ করা উচিত ছিল। ভারপ্রাপ্ত জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অনুপম দত্ত জানান, ১৮ বছরের নীচে হলে শিশুকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে হোমে পাঠানো হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রয়েছে সল্টলেকের লুম্বিনী পার্ক ও বহরমপুরের মানসিক হাসপাতাল। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে সেখানে পাঠানো সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy