Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Bardhaman

‘নাড়া পোড়াতে দেব না’, বিয়ের দিনে অঙ্গীকার

নাড়া পোড়ানো রুখতে প্রচার শুরু করেছে মেমারি ১ ব্লকের পল্লিমঙ্গল সমিতি। তাঁদের প্রচারে যুক্ত হচ্ছেন সঞ্জয় ও সুদেষ্ণা।

অঙ্গীকারপত্র হাতে। নিজস্ব চিত্র

অঙ্গীকারপত্র হাতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:১২
Share: Save:

কয়েকদিন আগেই মাঠে নাড়া পোড়াতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধ চাষির। মর্মান্তিক সেই ঘটনা নাড়া দিয়েছে মেমারি ১ ব্লকের মামুদপুরের কৃষক মহল্লার বাসিন্দাদের। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে অভিনব পদক্ষেপ করেছেন ওই এলাকার এক নবদম্পতি। মঙ্গলবার বিয়ের অনুষ্ঠানে ওই দম্পতি একটি লিখিত অঙ্গীকারপত্রে স্বাক্ষর করেন। তাতে সঞ্জয় ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী সুদেষ্ণা ঘোষ লেখেন, ‘নাড়া পোড়াব না, নাড়া পোড়াতে দেব না। পরিবেশ বাঁচান, নিজে বাঁচুন। নাড়া না পুড়িয়ে জমির উর্বরতা শক্তি ধরে রাখুন।’

বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির অতিথিদের সঙ্গে কথা বলার সময় নবদম্পতি তাঁদের নাড়া পোড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। দম্পতি জানান, নাড়া পোড়ানোর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে চাষিদের সচেতন করতে তাঁরা প্রচার করবেন।

নাড়া পোড়ানো রুখতে প্রচার শুরু করেছে মেমারি ১ ব্লকের পল্লিমঙ্গল সমিতি। তাঁদের প্রচারে যুক্ত হচ্ছেন সঞ্জয় ও সুদেষ্ণা। দম্পতি বলেন, ‘‘আমরা এলাকায় কাউকে নাড়া পোড়াতে দেব না। পোস্টার ছাপিয়ে প্রচার করব। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাড়া না পোড়ানোর অনুরোধ করব।’’ সঞ্জয়ের পরিবারের সকলেই চাষের সঙ্গে যুক্ত। ওই এলাকার প্রায় সকলেই জীবিকা চাষ। পিকু ঘোষ এবং প্রবীর ঘোষ নামে দুই চাষি নাড়া পোড়ান না। সঞ্জয়-সুদেষ্ণার বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁরা হাজির ছিলেন। ওই দুই চাষিকে কৃষি সরঞ্জাম দিয়ে সংবর্ধনা জানান নবদম্পতি।

সঞ্জয় ও সুদেষ্ণা বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগেই এই এলাকার এক চাষি জমিতে নাড়া পোড়াতে গিয়ে মারা গিয়েছেন। নাড়ার ধোঁয়ায় বিষ ছড়াচ্ছে পরিবেশে। তাই নাড়া পোড়ানোর কুফল সম্পর্কে বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির অতিথিদের সচেতন করেছি।’’ সুদেষ্ণা সংস্কৃতে স্নাতোকত্তর। এখন ‘বি এড’ পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘‘নাড়া পোড়ালে জমি বন্ধ্যা হয়ে যায়। এই কাজ বন্ধ না হলে খাদ্যসঙ্কট দেখা দেবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই নাড়া না পোড়ানোর অঙ্গীকার করেছি।’’

জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তরফে নাড়া পোড়ানো বন্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। নাড়া না পুড়িয়ে মেশিনের মাধ্যমে তা কুঁচিয়ে অনুখাদ্য মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। হচ্ছে সেমিনার। তবুও অনেক জায়গা থেকে নাড়া পোড়ানোর খবর আসছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।

জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা আশিস কুমার বারুই জানান, নাড়ার আগুনে পুড়ে চাষের জমির উপরি ভাগের ক্ষতি হয়। উরবর্তা শক্তি হারায় জমি। মারা যায় চাষের উপযোগী বন্ধু পোকা। তিনি বলেন, ‘‘নাড়া পোড়ানো বন্ধে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা নানা অভিনব উপায়ে প্রচারে সামিল হচ্ছেল। তাঁদের সাধুবাদ জানাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Stubble Burning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE