Advertisement
E-Paper

পাকা মাথাতেই ভরসা সিপিএমের

দু’জন বিদায়ী বিধায়ক-সহ তিন জন পুরনো প্রার্থী। নতুন মুখ দু’জন। তবে তাঁরাও এলাকায় দলের পুরনো মুখ। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ন’টি আসনের মধ্যে যে পাঁচটির জন্য সিপিএম সোমবার প্রার্থী ঘোষণা করল, তাতে দেখা গেল এই চিত্রই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০২:২১
প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই দেওয়াল লিখন রানিগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র।

প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই দেওয়াল লিখন রানিগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র।

দু’জন বিদায়ী বিধায়ক-সহ তিন জন পুরনো প্রার্থী। নতুন মুখ দু’জন। তবে তাঁরাও এলাকায় দলের পুরনো মুখ। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ন’টি আসনের মধ্যে যে পাঁচটির জন্য সিপিএম সোমবার প্রার্থী ঘোষণা করল, তাতে দেখা গেল এই চিত্রই।

গত বিধানসভা ভোটে শিল্পাঞ্চলের ন’টি আসনের মধ্যে আটটিতে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। শুধু কুলটিতে ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী। দু’টি বাদে বাকি সব আসনেই তৃণমূলের কাছে হেরেছিল বামেরা। শুধু জামুড়িয়া ও পাণ্ডবেশ্বরে জিতেছিল সিপিএম। এ বার বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতার মধ্যে এই অঞ্চলের পাঁচটি আসনে নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিল সিপিএম। বাকি আসনগুলির ক’টি কংগ্রেসের জন্য আর ক’টি অন্য শরিক দলের জন্য ছেড়ে রাখা হল, তা এখনও জানা যায়নি।

সোমবার সিপিএম যে পাঁচ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে তাঁদের মধ্যে গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় ও জাহান আরা খান গত বার পাণ্ডবেশ্বর ও জামুড়িয়া থেকে জিতেছিলেন। রুনু দত্ত রানিগঞ্জে পরাজিত হন সোহরাব আলির কাছে। তাঁদের গত বারের কেন্দ্রেই প্রার্থী করা হয়েছে। তবে বারাবনি ও দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে দুই নতুন মুখ— শিপ্রা মুখোপাধ্যায় ও সন্তোষ দেবরায়।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার গোড়া থেকেই প্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ তুলে আনার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অধিকাংশ সদস্য। তা মেনেই বারাবনিতে প্রার্থী করা হয়েছে শিপ্রা মুখোপাধ্যায়কে। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি পরিচিত মুখ। ২০০৩ সালে তিনি সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হয়েছিলেন। ২০০৮-এ জেলা পরিষদের সদস্যও হন। গত বার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের বিধান উপাধ্যায়ের কাছে প্রায় কুড়ি হাজার ভোটে হেরেছিলেন সিপিএমের আভাস রায়চৌধুরী।

গত বার দুর্গাপুর পূর্বে সিপিএমের প্রার্থী, শহরের প্রাক্তন কাউন্সিলর আলপনা চৌধুরী প্রায় সাড়ে আট হাজার ভোটে হেরে যান তৃণমূলের নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। এ বার সেখানকার নতুন প্রার্থী সন্তোষবাবু দলের দুর্গাপুর পশ্চিম ১ জোনালের সম্পাদক। এ ছাড়া সিটু নেতা হিসেবে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের শ্রমিক আন্দোলনের পরিচিত মুখ। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই আসনে প্রার্থী করার দাবি উঠেছিল দলের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনালের সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকারকে। কমবয়সী হিসেবে নতুন প্রজন্মেরও পছন্দ ছিলেন তিনি। তবে সংগঠন আরও পোক্ত করার ব্যাপারে পঙ্কজবাবুকে কাজে লাগানোর জন্যই এ বার তাঁকে প্রার্থী করা হল না বলে সিপিএম সূত্রের খবর। পঙ্কজবাবু নিজেও বলেন, ‘‘মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার একমাত্র রাস্তা সংগঠন। আমি সেটাই করতে চাই।’’ প্রার্থী হওয়ার পরে সন্তোষবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এখন চিকিৎসার জন্য বাইরে রয়েছি। শীঘ্রই ফিরব। দল যে দায়িত্ব দিয়েছে তা বরাবর পাল করে এসেছি। এ বারও করব।’’

রানিগঞ্জে গত বিধানসভা ভোটে রুনুবাবু মাত্র সতেরোশো ভোটে হেরে যান। লোকসভা ভোটে সেখানে তৃণমূল এবং সিপিএম— দু’পক্ষকেই টপকে যায় বিজেপি। কিন্তু গত পুরভোটে অনেকটা জমি ফিরে পায় সিপিএম। ১১টির মধ্যে পাঁচটি ওয়ার্ডে জেতেন দলের প্রার্থীরা। সব মিলিয়ে তৃণমূলের থেকে হাজার দুয়েক ভোট বেশি পায় সিপিএম। দলের রানিগঞ্জ জোনাল সম্পাদক রুনুবাবুর নেতৃত্বে এই সাফল্য আসার পরে বিধানসভা ভোটে ফের তাঁকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয় বলে সিপিএম সূত্রের খবর। রুনুবাবুর অভিযোগ, ‘‘পুরভোটে চারটি ওয়ার্ডে মানুষকে ভোট দিতেই দেয়নি তৃণমূল। তা না হলে আমাদের ফল আরও ভাল হত।’’

পাণ্ডবেশ্বরে গত বার প্রায় আট হাজার ভোটে জেতেন গৌরাঙ্গবাবু। কিন্তু তার পরে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে সেখানে ভরাডুবি হয়েছে সিপিএমের। কিন্তু গৌরাঙ্গবাবুর থেকে যোগ্য কোনও প্রার্থী এই এলাকায় দলের নেই বলে জেলা সিপিএমের একটি সূত্রের দাবি। ফের প্রার্থী হওয়ার পরে গৌরাঙ্গবাবু বলেন, “দলের নির্দেশ মাথায় পেতে নিচ্ছি।” জামুড়িয়ায় জাহান আরা খান প্রায় চোদ্দো হাজার ভোটে জিতেছিলেন আগের বার। লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রে বিজেপি হাওয়ার মধ্যেও জামুড়িয়ায় এগিয়েছিল সিপিএম। যদিও পুরভোটে এখানে মুখ থুবড়ে পড়ে দল। ১৩টি ওয়ার্ডের মাত্র দু’টিতে জেতে তারা। জেলার এক সিপিএম নেতা বলেন, ‘‘এই আসনে ভি শিবদাসনকে প্রার্থী করে অবাঙালি ভোটের উপরে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু ভোটের বড় অংশ যাতে আমাদের দিকেই আসে, জাহান আরাকে ফের প্রার্থী করে সেই কৌশল নেওয়া হল।’’ জাহান আরা বলেন, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে কোনও নির্বাচন অবাধ হয়নি। এ বার সবাই ভোট দিতে পারলে আমরাই জিতব।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বংশগোপাল চৌধুরীরও বক্তব্য, “পাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া— তিনটি আসনেই আমরা জিতব।”

আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ, কুলটি এবং দুর্গাপুর পশ্চিম— এই চার আসনে এ দিন কোনও প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। এর মধ্যে তিনটি আসন কংগ্রেসের জন্য ছাড়া হবে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। কুলটি আসনটি ছাড়া নিয়ে অবশ্য ফরওয়ার্ড ব্লকের অন্দরে খানিক আপত্তি রয়েছে। ১৯৭৭ সালে প্রথম এই আসনটি দখল করে তারা। ১৯৮৭ সালে কংগ্রেসের কাছে হারলেও ১৯৯২ সালে ফের দখলে নেয় ফরওয়ার্ড ব্লক। ২০০৬ থেকে এই আসন তৃণমূলের দখলে। ফরওয়ার্ড ব্লক সূত্রে জানা যায়, এ বার এই আসন কংগ্রেসকে ছাড়ার প্রশ্নে স্থানীয় নেতারা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আপত্তির কথা জানিয়েছেন। দলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘জোট আমরাও চাই। তবে কুলটির আসনটি আমাদের দেওয়া উচিত।’’ যদিও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা কুলটির প্রাক্তন বিধায়ক মানিকলাল আচার্য বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নেবেন, বৃহত্তর স্বার্থে তা মেনে নিতে হবে।’’

CPM Leaders Senior
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy