Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বৃষ্টিতে উঠোন ধসে যেতেই বেরিয়ে এল বধূর দেহ

প্রায় আড়াই মাস ধরে খোঁজ ছিল না বধূর। মাস দেড়েক আগে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে স্বামী-সহ পরিজনেরা। বুধবার রাতে বৃষ্টির পরে বাড়ির উঠোনের একাংশ বসে গিয়েছিল। সেখান থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে উঠোন খুঁড়ে মিলল নিখোঁজ বধূর দেহ।

ঘটনাস্থল: এই বাড়ির উঠোন থেকেই বৃহস্পতিবার উদ্ধার হয় বধূর দেহ। বুদবুদে। নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থল: এই বাড়ির উঠোন থেকেই বৃহস্পতিবার উদ্ধার হয় বধূর দেহ। বুদবুদে। নিজস্ব চিত্র

বিপ্লব ভট্টাচার্য
বুদবুদ শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ০০:২২
Share: Save:

প্রায় আড়াই মাস ধরে খোঁজ ছিল না বধূর। মাস দেড়েক আগে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে স্বামী-সহ পরিজনেরা। বুধবার রাতে বৃষ্টির পরে বাড়ির উঠোনের একাংশ বসে গিয়েছিল। সেখান থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে উঠোন খুঁড়ে মিলল নিখোঁজ বধূর দেহ।

বৃহস্পতিবার সকালে পূর্ব বর্ধমানের বুদবুদের দক্ষিণ রাইপুরে বনলতা বাউরি (২৭) নামে ওই বধূর দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর স্বামী বাপন বাউরিকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হন প্রতিবেশীরা। পুলিশ জানায়, বাপনের খোঁজ চলছে। দেহটি পচেগলে যাওয়ায় কী ভাবে বনলতার মৃত্যু হয়েছে তা জানা যায়নি। ময়না-তদন্ত রিপোর্ট পেলেই তা পরিষ্কার হবে বলে জানায় পুলিশ।

মানকর লাগোয়া দক্ষিণ রাইপুরে অনেক দিনের বাস বাপনের। প্রতিবেশীদের দাবি, বাপনের তিন স্ত্রীর মধ্যে বনলতা দ্বিতীয়। বছর ছয়েক আগে তাঁদের বিয়ে হয়। চার বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তিন স্ত্রী ও মোট তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে এক বাড়িতেই থাকত বাপন। স্থায়ী কোনও পেশা ছিল না তার। মাস কয়েক আগে এলাকার একটি পুকুরে রাতপাহারার কাজ করত সে। বনলতা ওয়ারিয়ায় দিনমজুরির কাজ করতেন। বাপনের সঙ্গে এলাকার কারও বিশেষ সদ্ভাব ছিল না বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি।

প্রতিবেশীদের অভিযোগ, মাঝে-মধ্যেই বাপনের সঙ্গে বনলতার অশান্তি হত। সরস্বতী পুজোর পর থেকে বনলতাকে দেখা যাচ্ছিল না। তবে তাঁর মেয়ে ছিল। আগেও বনলতাকে কয়েক বার বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে দেখায় গোড়ায় তাঁরা বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দেননি বলে জানান। কিন্তু বাপন-সহ পরিবারের সকলে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় সন্দেহ আরও বাড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা দয়াময় আঁকুড়ে জানান, এ দিন বাপনের বাড়ির পাশেই মাটির দেওয়াল তৈরি করছিলেন কয়েকজন। তাঁরাই খেয়াল করেন, উঠোনের একটি অংশ অনেকটা বসে গিয়েছে এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খবর পেয়ে জড়ো হন বাসিন্দারা। বুদবুদ থানায় খবর দেওয়া হয়।

উঠোনের এই গর্তেই মেলে দেহ।

পুলিশ আসার পরে শৌচাগারের সামনে উঠোনের ওই অংশে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। চার ফুট গর্ত করার পরে দেহ মেলে। পরনের শাড়িটি দেখে বাসিন্দারা জানান, সেটি বনলতার দেহ। স্থানীয় বাসিন্দা সোমা আঁকুড়ে, সুধা বাউরিরা বলেন, ‘‘বৃষ্টি না হলে কিছু বোঝাই যেত না! বাপন-সহ বাড়ির বাকিদের কঠোর শাস্তি চাই।’’

বুদবুদের এই ঘটনায় ফিরে এসেছে বছরখানেক আগে দুর্গাপুরের বেনাচিতির উত্তরপল্লিতে স্ত্রীকে খুনে করে পুঁতে রাখার ঘটনার স্মৃতি। সেই ঘটনায় স্ত্রীর দেহ ভাড়া বাড়িতে পুঁতে প্লাস্টার করে সেখানেই রাজমিস্ত্রি হায়দার আলি বাস করছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ হায়দারকে গ্রেফতার করেছিল। এ দিন বুদবুদের দক্ষিণ রাইপুরের বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেন, পাড়ার অধিকাংশ লোকজনের সঙ্গেই গণ্ডগোল বাধত বাপনের। হুমকি, গালিগালাজ থেকে মারধর— বাপনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে প্রতিবেশীদের। তাঁদের দাবি, বিবাহিত বনলতাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছিল বাপন। তার পরিবারে বনলতাই ছিলেন মূল উপার্জনকারী।

ওই এলাকাতেই থাকেন বাপনের দাদা হেলা বাউরি। তাঁর দাবি, ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না তাঁর। তাই কী ঘটেছে, তা তাঁদের জানা নেই। পুলিশ জানায়, বনলতার বাপের বাড়ি কোথায়, তা এখনও জানা যায়নি। বাপনেরও হদিস মেলেনি। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে কী ভাবে মৃত্যু তা জানা যাবে বলে মনে করছে পুলিশ। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dead Body Mysterious Death Murder Wife Missing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE