জমির বদলে জমি, আর্থিক ক্ষতিপূরণ, চাকরি-সহ নানা দাবিতে বুধবার সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু হয় বিমানগরীতে। বিমানবন্দরে ঢোকার রাস্তায় জমিদাতারা জড়ো হয়ে অবস্থান শুরু করেন। দুপুরে সেখানে রান্নাবান্না করে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। তবে জোর করে গাড়ি বা যাতায়াত আটকাননি আন্দোলনকারীরা। পরে, জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাঝির সঙ্গে বৈঠকের পরে
অবস্থান ওঠে।
অণ্ডালে প্রস্তাবিত বিমাননগরীর জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয় ২০০৭ সালে। অণ্ডাল ও দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের ১৩টি মৌজার ৩০টি গ্রামের প্রায় ২,৫০০ একর জমি নেওয়া হয়। জমির জন্য নগদ বিঘা প্রতি আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ছাড়াও, প্রতি একর জমির জন্য প্রকল্প এলাকার ভিতরে এক কাঠা করে বাণিজ্যিক ব্যবহারের উপযোগী জমি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া, যাঁদের এক বিঘার কম জমি ছিল, তাঁদের পাঁচ বছর পর্যন্ত বার্ষিক আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। প্রশাসনের হিসেবে, প্রথম তালিকায় রয়েছেন ১,৫২৬ ও দ্বিতীয় তালিকায় আছেন ৪,২৯৫ জন রয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত অক্টোবরে দুর্গাপুরের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে ‘ভূমির জন্য ভূমিদান’ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। লটারি করে ১,৫২৬ জন জমিদাতাকে যাঁর যেমন জমি ছিল সেই অনুপাতে এক থেকে ছ’কাঠা পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যবহারের জমি দেওয়া হয়। এ ছাড়া, যাঁরা জমি পাননি, তাঁদের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার প্রক্রিয়া চলছে।
গত ৮ ডিসেম্বর রানিগঞ্জের সভা থেকে পাঁচজনের হাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমির কাগজ তুলে দিয়ে ভূমির জন্য ভূমিদান প্রকল্পের সূচনা করেন। সে কাগজ বিএলএলআরও কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জমি ‘রেকর্ড’ এখনও হয়নি, অভিযোগ অণ্ডাল বিমাননগরী কৃষক-শ্রমিক ও যুব স্বার্থরক্ষা কমিটির সম্পাদক কালাচাঁদ গড়াই ও যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস ঘোষালের। পঙ্কজ হাজরা দেড় কাঠা ও র়ঞ্জিত পাল সাড়ে পাঁচ কাঠা জমির শংসাপত্র পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘অণ্ডাল ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে গেলে এক আধিকারিক জানান, এখন তাঁদের নামে জমি নিবন্ধীকরণ হবে না।’’ বিএলএলআরও দফতরের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি এ বিষয়ে।
দেবাশিসবাবু আরও বলেন, ‘‘আমাদের কাছ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা কাঠা প্রতি জমি নিয়ে এখন সাড়ে ছ’লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ, আমরা জমিদাতারা আজও বঞ্চনার শিকার। ভূমির জন্য ভূমিদান প্রকল্পের আওতার বাইরে থাকা জমিদাতাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। প্রকল্প শুরুর সময়ে ১,৭০০ জনকে আইটিআই প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও এক জনেরও চাকরি হয়নি।’’ জমিদাতা অসীম গোপ বলেন, ‘‘ভূমির জন্য ভূমিদান প্রকল্পে সব রকম নাগরিক পরিষেবা যুক্ত জমি দেওয়ার কথা। একটি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। সে জমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। অবিলম্বে আমাদের জমির রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।’’
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি-ও। দলের জেলা সহ-সম্পাদক অভিজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে কাগজ দিয়েছিলেন, সে কাগজ বিএলএলআরও দফতর মানছে না। ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। সিঙ্গুরেও জমি ফেরত দেবেন বলেছিলেন। কিছু হয়নি।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। একটু সময় লাগবে। এই সব সমস্যা দূর করতেই অণ্ডাল বিমানগরীতে রাজ্য সরকারের শেয়ারের পরিমাণ বেড়েছে।’’ সমস্যা মেটাতে জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন আসানসোলে। পূর্ণেন্দুবাবুর আশ্বাস, ‘‘সাত দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’
বিএপিএল-এর এক আধিকারিক জানান, এ দিনের বিক্ষোভের সঙ্গে সরাসরি যোগ নেই তাঁদের।