নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পরে খানিক হুঁশ ফিরেছে রেল কর্তৃপক্ষের। কুম্ভের যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়াতে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছেন পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন কর্তৃপক্ষ। রবিবার সকালে সেই সব ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন ডিআরএম চেতনানন্দ সিংহ। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কিন্তু তার পরেই এ দিন সন্ধ্যায় আসানসোল-মুম্বই এক্সপ্রেস ধরার সময়ে যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে অভিযোগ। আসানসোল ডিভিশন কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, বড় কোনও গোলমাল ঘটেনি।
রেলের তরফে দাবি করা হয়েছে, ১৪ দফা সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ডিআরএম জানান, কুম্ভের যাত্রীদের জন্য আসানসোল থেকে কয়েক জোড়া বিশেষ ট্রেন দেওয়া হয়েছে। সেগুলিতে যথেষ্ট ভিড় হচ্ছে। আসানসোল ও যশিডি থেকে বেশি সংখ্যায় যাত্রীরা চড়ছেন। গত শুক্রবার রাতে আসানসোল থেকে গুজরাটগামী একটি ট্রেনে অস্বাভাবিক ভিড় হয়। তবে আরপিএফ সেই ভিড় সামলে যাত্রীদের ট্রেনে তুলে দেয় বলে দাবি স্টেশন কর্তৃপক্ষের। কিন্তু দিল্লির ঘটনার পরে যাত্রীর ভিড় সামাল দিতে আরও কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানান ডিআরএম। তাঁর দাবি, যাত্রীর ভিড় বাড়ছে, তাই অসংরক্ষিত টিকিটের যাত্রীদের বিক্ষিপ্ত ভাবে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তাঁদের স্টেশনের বাইরে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জমায়েত করানো হবে। পরে দড়ি দিয়ে ঘেরা নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে আরপিএফের সাহায্যে অসংরক্ষিত কামরায় তুলে দেওয়া হবে। স্টেশনের বাইরে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া একটি রাস্তা আছে। সেই রাস্তা ধরেই যাত্রীদের সরাসরি ট্রেনে তুলে দেওয়া হবে। তাঁদের মূল প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাতে ট্রেনে ওঠা-নামা নিরাপদ হবে। ডিআরএম বলেন, ‘‘দিল্লির ঘটনার পরেই এই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তাতে সংরক্ষিত ও অসংরক্ষিত কামরার সব যাত্রীই সহজে ট্রেনে উঠতে পারবেন।’’
রেল সূত্রের দাবি, হাওড়া, শিয়ালদহ বা কলকাতা থেকে যে ট্রেনগুলি প্রয়াগরাজ পর্যন্ত যাচ্ছে, সেগুলিতে আসানসোল থেকে বেশি ভিড় হচ্ছে না। আসানসোল থেকে যে বিশেষ ট্রেনগুলি দেওয়া হয়েছে, সেগুলিতেই অতিরিক্ত মাত্রায় ভিড় হচ্ছে। ডিআরএম জানান, কোন ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্মে আসছে, তা এক বার মাইকে ঘোষণা করা হলে, পরে আর প্ল্যাটফর্ম পরিবর্তন করা হবে না। তাঁর আর্জি, কেউ যদি কোনও ট্রেনে উঠতে না পারেন, তার জন্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই। প্রচুর ট্রেন দেওয়া হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ট্রেনের বিষয়ে ঘোষণা করে জানানো হবে। রেলের এই ব্যবস্থা কার্যকরের জন্য একটি বিশেষ দল গড়া হয়েছে। সেই দলে আরপিএফ, বিদ্যুৎ বিভাগ, সাধারণ প্রশাসন ও বাণিজ্য— সব বিভাগের বিশেষজ্ঞেরা রয়েছেন। এই দলটি আসানসোল ও যশিডি স্টেশনে কাজ করবে বলে জানিয়েছে রেল। এ ছাড়া, কুম্ভমেলার জন্য নির্দিষ্ট সব ট্রেন অন্তত ৪৫ মিনিট আগে প্ল্যাটফর্মে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর।
তবে এ সবের পরেও রবিবার সন্ধ্যায় আসানসোল স্টেশনে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে।
রেলের যদিও দাবি, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)