Advertisement
১৮ মে ২০২৪

জল-চুরি চলছেই, গ্রীষ্মের আগে পদক্ষেপের নির্দেশ জেলাশাসকের

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জেলার দুই মহকুমাশাসক ও আটটি ব্লকের বিডিও-দের নিয়ে বৈঠক করে জল-সমস্যা মেটানোর বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। বৈঠকে উপস্থিত জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আধিকারিকদেরও একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন।

জলের খোঁজে পাড়ি। সালানপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে। নিজস্ব চিত্র

জলের খোঁজে পাড়ি। সালানপুরে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪০
Share: Save:

ফি বছর এই শিল্পাঞ্চলে পানীয় জলের সঙ্কট একটা বড় সমস্যা। এর জন্য প্রধানত দায়ী জল-চুরি, অভিযোগ জেলার নানা এলাকার বাসিন্দাদের। ইতিপূর্বে প্রশাসনিক স্তরেও বিষয়টি নজরে এসেছে, এমনও ঘটেছে। এ বার খোদ জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) শশাঙ্ক শেঠি গ্রীষ্মের আগেই জল-চুরিতে অভিযুক্ত বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জেলার দুই মহকুমাশাসক ও আটটি ব্লকের বিডিও-দের নিয়ে বৈঠক করে জল-সমস্যা মেটানোর বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। বৈঠকে উপস্থিত জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আধিকারিকদেরও একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘গ্রীষ্মে গ্রামীণ এলাকায় পানীয় জলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

কিন্তু খোদ জেলাশাসককেই নির্দেশ দিতে হল কেন?

জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দারা জানান, জল-চুরি কোনও নতুন ঘটনা নয়। প্রধানত সালানপুর, বারাবনি, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় অজস্র ইটভাটায় অবৈধ ভাবে জলের সংযোগ নেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যায়, নদী থেকে মূল জলাধারে যাওয়ার পাইপলাইন ফাটিয়েই ইটভাটা মালিকেরা জলের অবৈধ সংযোগ নেন অনেক সময়েই। এ ছাড়া রাস্তার পাশে থাকা হোটেল, খাবারের দোকান ও অন্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিও অবাধে পাইপ ফাটিয়ে জলের সংযোগ নিচ্ছে। অবস্থা এমনই হয়, অনেক সময়ে মূল জলাধারে জল ওঠে না।

জল-চুরির বিষয়টি অতীতেও নজরে এসেছে। গত বছর জুলাইয়ে আসানসোল পুরসভার কয়েক জন ‘অসাধু’ কর্মীর বিরুদ্ধে জাল কাগজপত্র বানিয়ে চালু পাইপলাইন থেকে অবৈধ সংযোগ জোড়া, জলভর্তি ট্যাঙ্কার এলাকায় সরবরাহের কথা বলে আসলে এলাকার ছোটখাটো কারখানায় ট্যাঙ্কার সরবরাহ করার অভিযোগ ওঠে। মোটা টাকার বিনিময়ে এই জল-পাচার চলে, অভিযোগ করেছিলেন পুরসভার কর্তারাই। সেই ‘অসাধু’ কর্মীদের চিহ্নিত করার কথাও জানিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু তার পরেও কতটা লাভ হয়েছে, তা নিয়ে সংশয়ে নাগরিকদের একাংশ।

এই পরিস্থিতিতে জল-চুরিতে ‘জড়িত’ বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে গ্রীষ্মের আগেই পদক্ষেপ করার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ও বিডিও-দের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গ্রামীণ এলাকায় জল-সঙ্কট মেটাতে আরও কিছু পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছেন জেলাশাসক। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো গভীর নলকূপ, কুয়ো ও জলের পাইপলাইন মেরামতির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বিশেষ তহবিল থেকে অর্থ অনুমোদনের ব্যবস্থা করার কথাও জানিয়েছেন জেলাশাসক। জেলা প্রশাসন জানায়, গ্রীষ্মে মাইথন জলাধার থেকে জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকদের ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জল প্রকল্পগুলিতে অবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে থাকে, সে বিষয়েও নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলে জেলা

প্রশাসন জানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Water District Magistrate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE