Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পথে বিমান, ভোর থেকে ভিড়

বিমানটি কলকাতা থেকে রাজস্থানের জয়পুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ট্রেলারে করে।

দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে উড়ালপুলের নীচে তখনও আটকে রয়েছে বিমানটি। মঙ্গলবার সকালে। ছবি: বিকাশ মশান

দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে উড়ালপুলের নীচে তখনও আটকে রয়েছে বিমানটি। মঙ্গলবার সকালে। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৩২
Share: Save:

জাতীয় সড়কে বিমান!

ভোর থেকে ছড়িয়ে পড়েছিল খবরটা। ঘন কুয়াশার মধ্যেও তাই অনেকে তড়িঘড়ি হাজির হন দুর্গাপুরের মেনগেট এলাকায়। গিয়ে অবশ্য দেখেন, বিমান নামেনি। ট্রেলারে করে একটি পরিত্যক্ত বিমান নিয়ে যাওয়ার সময়ে সেটি আটকে গিয়েছে সার্ভিস রোডের উপরে থাকা উড়ালপুলের তলায়। তার সামনে দাঁড়িয়েই নিজস্বী তুলতে শুরু করেন অনেকে। মঙ্গলবার বেলা যত বেড়েছে, বিমান দেখতে ভিড়ও তত বেড়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিমানটি কলকাতা থেকে রাজস্থানের জয়পুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ট্রেলারে করে। বাতিল হওয়ার পরে সেটি কিনে নিয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি) টাউনশিপ থেকে কারখানায় ঢোকার জন্য সংযোগকারী রাস্তার উড়ালপুলটি গিয়েছে জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে। সেটির নীচ দিয়ে যাওয়ার সময়েই বিমানের পিঠ আটকে যায় উড়ালপুলে।

কুয়াশার মধ্যে আস্ত একটি বিমানকে দেখে পথচলতি কেউ-কেউ মনে করেন, কোনও ভাবে বিমানটি বোধহয় জাতীয় সড়কে নেমে পড়েছে। কিন্তু কাছে যেতে তাঁদের ভুল ভাঙে। এরই মধ্যে রাস্তার উপরে বিমানের খবর ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। দলে-দলে মানুষজন জড়ো হতে থাকেন মেনগেটে। বিমানের কাছে যাওয়ার জন্য কুয়াশার মধ্যে বিপজ্জনক ভাবে রাস্তা পারাপারও করতে দেখা যায় অনেককে। উড়ালপুলের উপর থেকেও সার দিয়ে বহু লোকজনকে বিমান দেখতে দেখা যায়।

আটকে পড়া বিমান নিয়ে রীতিমতো উৎসবের মেজাজ তৈরি হয়ে যায় এলাকায়। শহরের লিঙ্ক রোড এলাকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়া রায় বাবার সঙ্গে এসেছিল বিমান দেখতে। সে বলে, ‘‘বিমানে তো চড়িনি। তাই এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়ে মজা হচ্ছে।’’ বিমানটির পাশে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তুলতে দেখা যায় দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া পিন্টু বর্ধমান, খুশি আগরওয়ালদের। তাঁদের কথায়, ‘‘এমন তো সচরাচর হয় না। তাই ক্যামেরাবন্দি করে রাখছি।’’ সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিমানের ছবি-ভিডিয়ো পোস্ট করেন অনেকে।

প্রথমে ট্রেলারের চাকার হাওয়া খুলে বিমানটি সরানোর চেষ্টা হয়। তা সফল না হওয়ায় সামনের দিকের কয়েকটি চাকা খুলে ফেলার ব্যবস্থা হয়। এর পরে একটি ট্রাক দিয়ে টেনে ট্রেলারটিকে উড়ালপুল পার করানো হয়। প্রায় আট ঘণ্টা পরে, সকাল ১১টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে টানাহ্যাঁচড়ায় ট্রেলারের এক দিকে সরে যায় বিমানটি। সেটি উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এর পরে ট্রেলারের সে দিকে কাউকে ঘেঁষতে দেয়নি পুলিশ। রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বিমানটিকে।

পথচলতি মানুষজন তো বটেই, মোটরবাইক, গাড়ি থেকে নেমেও কাছে এসে বিমান দেখতে দেখা যায় অনেককে। আসানসোল থেকে গাড়িতে বর্ধমান যাচ্ছিলেন তুষার মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দূর থেকে ভেবেছিলাম ট্যাঙ্কার। কাছে এসে দেখি, এ তো বিমান!’’ খবর শুনে পানাগড় থেকে এসেছিলেন রাজা সাউ। তিনি বলেন, ‘‘সকালে বন্ধুদের সঙ্গে দুর্গাপুরে চলে এসেছি। তবে যেমনটা ভেবেছিলাম তেমন নয়। পুরনো, রং চটা বিমান। পাখাও নেই।’’

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানান, বিনা অনুমতিতে বিপজ্জনক ভাবে জাতীয় সড়ক দিয়ে ট্রেলারে চাপিয়ে বিমান নিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি। আগাম অনুমতি নেওয়া দরকার ছিল। সংশ্লিষ্ট পরিবহণ সংস্থাকে তলব করা হয়েছে। ক্ষতির জন্য তাদের জরিমানা করা হতে পারে বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Air India Plane Kolkat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE