Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল

টানা বন্ধ ইউএসজি, ভোগান্তিতে রোগীরা

মাস খানেক ধরে পেটের যন্ত্রণায় ভুগছেন আকন্দবেড়িয়ার বাসিন্দা বছর চল্লিশের রেক্সোনা বিবি। গত মাসের ১২ তারিখ হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ইউএসজি-র তারিখ পেয়েছিলেন এক মাস বাদে।

বন্ধ ইউএসজি কেন্দ্রের সামনে ভিড় রোগীদের। —নিজস্ব চিত্র।

বন্ধ ইউএসজি কেন্দ্রের সামনে ভিড় রোগীদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৬:৫৫
Share: Save:

পেটের যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে এক রোগী হাসপাতালের ইউএসজি করাতে এসেছিলেন। কিন্তু এসে দেখলেন ইউএসজি কেন্দ্র বন্ধ। বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন ওই রোগী। আচমকা লিকলিকে চেহারার এক যুবক পাশ থেকে বলে উঠলেন, ‘‘দাদা এ দিকে। ৫০০ টাকা দিন পেটের ছবি হয়ে যাবে।’’— ছবিটা কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের। রোগীদের অভিযোগ, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইউএসজি কেন্দ্র বন্ধ। বেহাল এক্স-রে কেন্দ্রটিও। আর সেই সুযোগে পোয়াবারো দালালদের।

মাস খানেক ধরে পেটের যন্ত্রণায় ভুগছেন আকন্দবেড়িয়ার বাসিন্দা বছর চল্লিশের রেক্সোনা বিবি। গত মাসের ১২ তারিখ হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ইউএসজি-র তারিখ পেয়েছিলেন এক মাস বাদে। রেক্সোনা বলেন, ‘‘২ ঘণ্টা বাসে চড়ে এসেছি। এসে দেখি ১৬ তারিখের পরে ইউএসজি হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।’’ একই দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন বড়ইটনার সেরিনা বিবি, দুরমুটের জায়রুল শেখেরা।

কেন এমন হাল? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্যাথলজি বিভাগের ভিতরেই রয়েছে ইউএসজি কেন্দ্রটি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্যাথলজি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক না আসার জেরেই এই বিপত্তি। যদিও ওই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক সঞ্জীব সাহা বলেন, ‘‘অসুস্থতার জেরে ছুটিতে রয়েছি। আজ, সোমবার হাসপাতালে যাব।’’

একই হাল এক্স-রে বিভাগেও। এই বিভাগের বাইরে লেখা, ‘‘বড় ফিল্ম না থাকায় এখন এক্স-রে হবে না। নতুন ফিল্ম এলে হবে।’’ এই অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েছে রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। যেমন, মঙ্গলকোটের চকবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হারুনাল রসিদ। তিনি জানান, অ্যাপেনডিক্সের সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু হাসপাতালে এসেও লাভ হল না। যদিও এক্স-রে একেবারে না হওয়ার কথা স্বীকার করতে চাননি বিভাগের টেকনিশিয়ান আদিত্য সিনহা। তাঁর দাবি, ‘‘যাঁরা ভর্তি আছেন তাঁদের এক্স-রে করা হচ্ছে। কিন্তু বড় ফিল্মের অভাবে মেরুদন্ড, বুকের এক্স-রে করা যাচ্ছে না। তবে এই সমস্যা বহির্বিভাগেই রয়েছে।’’ যদিও হাসপাতাল সুপার রতন শাসমলের দাবি, ‘‘এক্স-রে ফিল্ম না থাকার বিষয়টি জানা নেই। টেকনিশিয়ানের সঙ্গে কথা বললে বিষয়টি জানা যাবে।’’

দু’টি কেন্দ্রই কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্ধমান ছাড়াও বীরভূম, নদিয়া, মুর্শিদাবাদেরও বিভিন্ন এলাকার রোগীরাও দুর্ভোগে পড়ছেন বলে খবর। এই পরিস্থিতিতে অনেক রোগীকেই থেকে বেশি খরচে বেসরকারি ক্লিনিক থেকে এক্স-রে, ইউএসজি করাতে বাধ্য হচ্ছেন। যেমন, হারুনাল বলেন, ‘‘২৩ জুন ফের আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু আর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছি না। বাইরে কোথাও করাতে হবে।’’ হাসপাতালে নিখরচায় এই দুই পরিষেবা মেলে। কিন্তু বাইরে থেকে এক্স-রে করানোর খরচ প্রায় ৩০০ টাকা।

অনেকে আবার দালালদের খপ্পরে পড়ছেন বলে অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেল, অনেক সময়েই ১০০ থেকে ৫০০ টাকা চেয়ে বেসরকারি বিভিন্ন ইউএসজি বা এক্স-রে কেন্দ্রে রোগীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এক রোগী জানান, কাটোয়ার কাছারি রোড, সার্কাস ময়দান, টেলিফোন ময়দান-সহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বেসরকারি ইউএসজি ও এক্স-রে কেন্দ্রগুলিতে রোগীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল চত্বরে ইউএসজি, এক্স-রে কেন্দ্রের আশেপাশে হরদম এই দালালদের আনাগোনা নজরে পড়ছে বলে জানান রোগীদের একাংশ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ খানেক ধরে দালাল রাজের বিষয়ে রোগীদের সতর্ক করে নির্দেশিকা টাঙানো হয়। কিন্তু নতুনহাটের এক রোগীর আক্ষেপ, ‘‘নির্দেশিকায় টনক যে নড়েনি, হাসপাতালে গেলেই সেটা মালুম হয়।’’ যদিও হাসপাতাল জুড়ে দালাল-রাজের কথা স্বীকার করেননি বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রণব কুমার রায়। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও অভিযোগ পাইনি। ওই হাসপাতালের সুপার কোনও অভিযোগ করেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ECG Katwa hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE