শোকার্ত: মা ও বোনের দেহ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সামনে দাঁড়িয়ে পিয়ালি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
বোনকে বাড়ি যেতে বারণ করেছিলেন দিদি। মাকেও চলে আসতে বলেছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার ভোরে বাবার হাতে মা-বোনের খুন হওয়ার পরে এই কথাগুলোয় বারবার বলছিলেন বছর কুড়ির পিয়ালি রুইদাস। এ দিনই অন্ডালের মাধবপুরের বাসিন্দা, তপন রুইদাস হাতুড়ি মেরে খুন করেছেন স্ত্রী পদ্মাদেবী (৩৭) ও ছোট মেয়ে পাপিয়াকে (১৬)। তার পরে বড় মেয়ে পিয়ালি, বধূর বাপের বাড়ির লোক জন থেকে এলাকাবাসী, সকলেরই দাবি, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক তপন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তপনের ছোট মেয়ে পাপিয়া কাজোড়া হাইস্কুল থেকে ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে। তার পরে পানগড়ে রণডিহার একটি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। পানাগড়ে মামার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে সে। সেখানেই থাকেন দুর্গাপুর মধুসূদন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পিয়ালিও। পিয়ালি জানান, বুধবারই মাধবপুরে বাবা-মায়ের কাছে আসে পাপিয়া। সেটাই কাল হল, আক্ষেপ পদ্মাদেবীর দাদা বিজয় ওঝা ও পিয়ালির।
বছরখানেক ধরে মা-বাবার মধ্যে লাগাতার অশান্তি চলত বলে দাবি পিয়ালির। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘মাকে বলেছিলাম মামার বাড়ি চলে আসতে। এ কথা বলার পরে অশান্তি খানিকটা কমায় মা আর বাবাকে ছেড়ে আসেনি। বারণ করা সত্ত্বেও বোন বুধবার বাড়ি এসেছিল। আমার কথা শুনল না ওরা। শুনলে এই দিনটা দেখতে হতো না।’’
কেন এমন নৃশংস খুন? পড়শিদের দাবি, খুনের কারণ নিয়ে ধন্দ রয়েছে। তবে ওই দম্পতির মধ্যে অশান্তির আওয়াজ প্রায়ই কানে আসত। এলাকার বাসিন্দা কৌশল সিংহের দাবি, ‘‘যত দূর জানি, গৃহশিক্ষকতা করে মাসে ছ’সাত হাজার টাকা রোজগার করতেন তপন। সম্প্রতি তা-ও কমে যায়। তার পরেই অশান্তি আরও বাড়ে, তপনকেও অবসাদগ্রস্ত মনে হতো।’’ অশান্তির কারণে, দু’বছর আগে তিনিও মামার বাড়িতে চলে যান বলে জানান পিয়ালি।
তদন্তে নেমে অন্ডাল থানার পুলিশ জানতে পেরেছে, ১৯৯৮ সালে ভাইকে খুনের মামলাতেও নাম জড়িয়েছিল আদতে কাজোড়া গ্রামের বাসিন্দা তপনের। সে যাত্রা তাঁদের বাবা মামলা প্রত্যাহার করায় রেহাই পান তপন। এর পরে প্রথমে কেসি পাল কোলিয়ারি এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে ও পরে এক দশক ধরে মাধবপুরে সপরিবার থাকতে শুরু করেন তপন। স্বামী-স্ত্রী, দু’জনকেই এলাকায় খুব একটা মিশতে দেখা যেত না বলে দাবি পড়শিদের। তবে আপাত শান্ত গৃহশিক্ষক তপনই যে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না এলাকাবাসীর।
এ দিন যদিও পড়শি এবং মৃতার দাদা বিজয়বাবুর দাবি, ‘‘ওই লোকটার যেন কঠিন শাস্তি হয়।’’ এ দিন তপনকে দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে ১৪ দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy