Advertisement
১৮ মে ২০২৪
কালনায় নির্মীয়মাণ বাড়িতে বোমা ফেটে জখম তিন

বিকট শব্দ-ধোঁয়া, আতঙ্কে স্কুল

হই হট্টগোল খানিক কম। মিড-ডে মিল খেয়ে সবে ক্লাসে ফিরেছে পড়ুয়ারা। শিক্ষকেরাও চক-ডাস্টার নিয়ে ক্লাসে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আচমকা, কান ফাটানো শব্দ, ধোঁয়া।

বিস্ফোরণের পরে ঘরের চারপাশে ভিড়। স্কুল থেকে পড়ুয়াদের বের করছেন প্রধান শিক্ষিকা। নিজস্ব চিত্র।

বিস্ফোরণের পরে ঘরের চারপাশে ভিড়। স্কুল থেকে পড়ুয়াদের বের করছেন প্রধান শিক্ষিকা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৩
Share: Save:

হই হট্টগোল খানিক কম। মিড-ডে মিল খেয়ে সবে ক্লাসে ফিরেছে পড়ুয়ারা। শিক্ষকেরাও চক-ডাস্টার নিয়ে ক্লাসে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আচমকা, কান ফাটানো শব্দ, ধোঁয়া। বাইরে বেরোতেই দেখা যায়, স্কুলের পাঁচিল লাগোয়া রান্নাঘরের পাশ থেকে ধোঁয়া আসছে। সঙ্গে ঝাঁঝালো বারুদের গন্ধ। জানা যায়, বিস্ফোরণ হয়েছে স্কুলের উল্টো দিকে নির্মীয়মাণ বাড়িতে। গুরুতর জখম হয়েছেন তিন জন।

বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ওই ঘটনার পরেই আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় কালনার কৃষ্ণদেবপুর পঞ্চায়েতের হরিহরপা়ডা এলাকায়। স্কুল থেকে পড়ুয়াদের নিরাপদে বের করে নিয়ে আসেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। হাজির হয়ে যান আশপাশে থাকা অভিভাবকেরাও। তাঁরাই জানান, ওই বাড়িটি স্থানীয় বাসিন্দা, তৃণমূল নেতা বাবু মণ্ডলের। প্রায়ই বাড়ির কাজ দেখতে আসেন তিনি। তবে সেখানে যে বোমা বাঁধার কাজ চলছে তা জানা ছিল না বলেও তাঁদের দাবি। ঘটনার পরে বাড়িটিতে আরও বোমা রয়েছে কি না দেখতে আসে বম্ব ডিসপোসাল স্কোয়াড। তিন জনকে কালনা হাসপাতাল, রাতে কলকাতায় পাঠানো হয়।

ঘটনার মিনিট দশেকের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকা ধোঁয়ায় ঢাকা। নির্মীয়মান ঘরের ভেতর থেকে ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার করছেন এক যুবক। পুলিশের দাবি, ঘরের মেঝেতে বালি ছড়ানো ছিল। মুখ, হাত-পা ঝলসানো অবস্থায় পড়েছিলেন এক যুবক। কিছু টিনের পাত্র, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত জিনিসপত্র, হলুদ খামে ভরা কিছু চিঠিপত্রও ছড়িয়ে ছিল। জানা যায়, ওই যুবকের নাম নব বাগ। কাছেই নন্দগ্রামের বাসিন্দা তিনি। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, বিস্ফোরণের পরে সঙ্গী আরও দু’জন জানালা দিয়ে ঝলসানো অবস্থাতেই পালায়। তার মধ্যে উদয় বারিক নামে এক জন নিজেই ভ্যানে করে হাসপাতালে পৌঁছন। আর এক জন বুদ্ধ মালিক ঘর থেকে বেরিয়ে স্কুলের পাশে লুটিয়ে পড়েন। তাকেও হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। পুলিশের দাবি, বুদ্ধর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। ন’মাস আগে একটি বোমা বাঁধার সময় ডান হাতের বুড়ো আঙুল উড়ে যায় তার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আড়াই বছর আগে নকশাল থেকে তৃণমূলে যোগ দেন বাবু। তৃণমূলের নানা শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে তাঁর যোগ রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচিতেও দেখা যায় তাঁকে। মাঝেমধ্যেই পুকুর পাড়ের এই বাড়ির কাজ দেখতে তিনি আসতেন বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। তাঁরা আরও জানান, রোজই মালপত্র নিয়ে মিস্ত্রিরা আসাযাওয়া করতেন। তার মাধে এমন কাণ্ড চলছে বোঝেননি তাঁরা। এলাকার মঞ্জুরি পোদ্দার বলেন, ‘‘সবে ভাত খেতে বসেছি। হঠাৎ বিকট আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গে ছেলের স্কুলে ছুট লাগাই।’’ অন্যদেরও আশঙ্কা, স্কুল ছুটির পরে অনেক খুদেই রাস্তায় খেলা করত। ভাগ্যিস তখন কিছু হয়নি। প্রধান শিক্ষিকা প্রভা সরকার জানান, ১৯৮৪ সাল থেকে স্কুলটি রয়েছে। একেবারে জনবহুল এলাকা। এমন হবে ভাবতে পারেননি তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘শব্দ শুনে বাইরে আসতেই দেখি চারিদিক ধোঁয়ায় ঢাকা। আগে খুদেদের জড়ো করে বাইরে বের করি আমরা। একটু এ দিক হলে কী যে হতো!’’

ওই ঘরে বালির নীচে আরো বোমা মেলার আশঙ্কায় মহকুমা পুলিশের কর্তারা দুর্গাপুরের বম্ব ডিসপোসাল স্কোয়াডে খবর দেন। বিকেলে এসে কিছু নমুনা নিয়ে যান তাঁরা। তবে কী উদ্দেশ্য বাড়িটিতে দিনেদুপুরে বোমা বাঁধা চলছিল তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এসডিপিও প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা সকেট বোমা বাঁধা হচ্ছিল। বিস্তারিত জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ ওই তৃণমূল নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ফোনও বন্ধ ছিল।

বিরোধীদের অবশ্য দাবি, দলের মদতেই ওই কাজ চলত। বিজেপির জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘‘ওই নেতা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের ঘনিষ্ঠ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এলাকাকে অশান্ত করতে বোমা বাধা চলছিল।’’ সিপিএমের কালনা জোনাল সম্পাদক সুকুল শিকদারেরও দাবি, ‘‘নৈরাজ্য চালাচ্ছে তৃণমূল।’’ তৃণমূল জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ অবশ্য বলেন, ‘‘উনি দলে ছিলেন একসময়। কিন্তু কোনও পদে নেই। দলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

construction Explosion School Panic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE