Advertisement
E-Paper

ই-টেন্ডারে জাল নথি, প্রশ্নে পদ্ধতি

ই-টেন্ডারে সমস্ত নথি জমা দিয়ে বর্ধমান জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল সাফসুতরো রাখার দায়িত্ব পেয়েছিল বহরমপুরের একটি সংস্থা। দেড় বছর পর স্বাস্থ্য দফতর জানতে পারল, দরপত্রের সঙ্গে দেওয়া মূল নথিটাই জাল।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৮
Share
Save

ই-টেন্ডারে সমস্ত নথি জমা দিয়ে বর্ধমান জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল সাফসুতরো রাখার দায়িত্ব পেয়েছিল বহরমপুরের একটি সংস্থা। দেড় বছর পর স্বাস্থ্য দফতর জানতে পারল, দরপত্রের সঙ্গে দেওয়া মূল নথিটাই জাল।

শুধু তাই নয়, তদন্তে জানা গিয়েছে কাজ শুরুর পরেও বাধ্যতামূলক ভাবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে টাকা জমা রাখা কিংবা কর্মীদের ভবিষ্যনিধিতে টাকা জমা দেয়নি ওই সংস্থা। এ বার ওই ঠিকাদার সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করলেন বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায়। সংস্থার দুই কর্ণধারের বিরুদ্ধে এফআইআর করার জন্য বর্ধমান থানায় শুক্রবার চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও জেলা শাসককেও। প্রণববাবুর কথায়, ‘‘সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করেছে ওই সংস্থা। দুর্নীতির খোঁজও মিলেছে। তাই তাদের কালো তালিকাভুক্ত করে এফআইআর করা হয়েছে।’’ যদিও ওই ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধারদের দাবি, পুরো বিষয়টাই চক্রান্ত।

তবে জালিয়াতি ধরা পড়ার সঙ্গে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ই-টেন্ডারের পদ্ধতি নিয়েও। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পদ্ধতিতে অনলাইনে সমস্ত নথিপত্রের সফট্‌ কপি জমা দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতেই ঠিক হয় কাজের বরাত কে পাবে। এর সঙ্গে নথিপত্র যে আসল তার স্বপক্ষে একটি সই করা চিঠিও জমা দেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলেও বলা থাকে চিঠিতে। এরপরে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই নথিপত্র সঠিক কি না তা খতিয়ে দেখার কথা স্বাস্থ্য দফতরের। এ ক্ষেত্রে সেই পদ্ধতিতে কোথাও ফাঁক থেকে গিয়েছে স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশের অনুমান।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, বর্ধমানের বিভিন্ন প্রাথমিক, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মহকুমা হাসপাতাল পরিস্কার রাখার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ই-টেন্ডার ডাকে। দরপত্র খোলার পরে দায়িত্ব পায় মুর্শিদাবাদের ওই ঠিকাদার সংস্থা। ওই বছরের ৩১ মার্চ সংস্থাটিকে কাজ শুরুর জন্য সিএমওএইচ চিঠি দেন। এর কয়েক মাস পরেই সংস্থাটির সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে চেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে চিঠি পাঠান কাটোয়ার এক ঠিকাদার শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা যায়, ওই সংস্থার ‘লেবার কন্ট্রাক্টর লাইসেন্স’টিই জাল। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার ওই লাইসেন্সটি বাতিল করে দিয়েছিলেন। তারপরেও ওই সংস্থা ই-টেন্ডারে সেটি জমা দেয়। শিবপ্রসাদবাবু আরও জানতে পারেন, বর্ধমান সদর, কাটোয়া ও কালনা মহকুমা হাসপাতাল, প্রাথমিক ও ব্লক মিলিয়ে ১৪৬ জন কর্মচারীর মোটা অঙ্কের টাকা ভবিষ্যৎনিধি ও ইএসআইতে জমা পড়ছে না। অথচ ওই দুটি প্রকল্পের জন্য সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ঠিকাদার সংস্থাকে দিয়েছে। এরপরেই স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ করেন তিনি। হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে অভিযোগগুলি ঠিক কি না তা জানাতে নির্দেশ দেয়। তবে তার আগেই তদন্ত করে সংস্থাটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে স্বাস্থ্য দফতর।

এ বছরের ২১ জুলাই বর্ধমানে তদন্তে আসেন ডেপুটি স্বাস্থ্য অধিকর্তা বরুণ সাঁতরা। তদন্ত চলাকালীন লিখিত ভাবে দরপত্রে নথি জমা দেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের ভুল হয়েছিল বলে স্বীকার করেন ওই ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য ও শিবপ্রসাদ ঘোষ। কর্মীদের সুযোগ-সুবিধাও না দেওয়ার কথাও উঠে আসে। ৩ সেপ্টেম্বর ডিএইচএসকে চিঠি দিয়ে পুরো ঘটনাটি জানান প্রণববাবু। ২২ সেপ্টেম্বর ডিএইচএস নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। প্রথমেই ওই ঠিকাদার সংস্থার কাছ থেকে সমস্ত দায়িত্ব কেড়ে নেয় জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তারপরে এ দিন ‘দুর্নীতি ও প্রতারণা’র দায়ে থানায় অভিযোগও হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ওই সংস্থার হাতে জেলার বেশ কিছু হাসপাতালের রোগীদের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব রয়েছে তাও নিয়ে নেওয়া হতে পারে।

ওই সংস্থার অন্যতম কর্ণধার ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘নথি জমা দেওয়ার সময়ে তো তা সঠিক কী না দেখেই কাজের বরাত দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। বর্ধমানে একটা চক্র কাজ করছে। আমরা তারই শিকার হয়েছি।’’ যদিও স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ই-টেন্ডারে নথিটি জাল কি না তা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়।’’

E-tendering Fake Document Bardhaman

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}