Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Bahanaga Train Accident

শাড়ি নিয়ে ফেরেনি ছেলে,  পুজোয় আঁধার মায়ের মুখে

জুন মাসের গোড়ায় ওই পরিবারের চার তরুণ-যুবক ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার জন্য করমণ্ডল এক্সপ্রেসে সওয়ার হন।

বাহানাগা ট্রেন দুর্ঘটনা।

বাহানাগা ট্রেন দুর্ঘটনা। —ফাইল চিত্র।

প্রণব দেবনাথ
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৩১
Share: Save:

কাটোয়া-পঞ্চাননতলা রোড ধরে এগোলে নানা জায়গায় রাস্তার পাশে কাশফুল ফুটেছে। অন্য বছরের মতোই। গ্রামে ঢোকার মুখে বাসস্টপ। সেখান থেকে গ্রামের পথে দু’দিকের জমি সবুজ হয়ে রয়েছে বড় হয়ে ওঠা ধানগাছে, এই সময়ের যা চেনা ছবি। গ্রামে ২২টি পুজো হয়। এ বারও সব ক’টিই হচ্ছে।

দৃশ্যত সবই হচ্ছে অন্য বছরের মতোই। কিন্তু কাটোয়া শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে এই করুই গ্রামে চারটি পরিবারের কাছে অনেক কিছুই পাল্টে গিয়েছে কয়েক মাসের মধ্যে। পরিবারের তরতাজা ছেলেদের হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে না পারা ওই পরিবারগুলিতে পুজোর রোশনাই নেই।

জুন মাসের গোড়ায় ওই পরিবারের চার তরুণ-যুবক ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার জন্য করমণ্ডল এক্সপ্রেসে সওয়ার হন। সংসারের হাল ফেরাতে কেউ সদ্য সাবালক হয়েই বাবার সঙ্গে কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে যাচ্ছিলেন। কেউ দেড় মাসের সন্তানকে দেখে ফের কেরলে ফিরছিলেন। আবার কেউ মেয়ের বিয়ের জন্য নেওয়া দেনা শোধ করার জন্য যাচ্ছিলেন কাজ করতে। ওড়িশায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে ট্রেনটি। দু’দিন পরে গ্রামে ফিরে আসে বছর আঠারোর ছোট্টু সর্দার, বছর আটত্রিশের সঞ্জয় ওরফে সঞ্জিত সর্দার ও সৃষ্টি রায় এবং বছর পঁচিশের কলেজ সর্দারের দেহ।

গ্রামের মণ্ডপগুলি সেজে উঠেছে। উমার আগমনে চার দিকে উৎসবের আমেজ। গ্রামের চার বাড়িতে শুধু বিষাদ। পুজো আসতেই তাঁদের কষ্ট যেন আরও বেড়ে গিয়েছে। দুর্ঘটনার পরে রেল ও রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। পড়শিদের অনেকেরই স্মৃতি ফিকে হচ্ছে। কিন্তু পরিবারগুলির লোকজন এখনও রাতে ঘুমোতে পারেন না। চোখ বন্ধ করলেই কারও স্বামী, কারও ছেলের মুখ ভেসে ওঠে তাঁদের কাছে।

ছোট্টুর মা ঝর্না সর্দার বলেন, “আমার স্বামী কেরলে শ্রমিকের কাজ করতেন। করোনার সময়ে বাড়ি ফিরে আর যাননি। কিন্তু সংসারে অভাব। ছেলেটা সবে আঠারো বছরে পা দিয়েছিল। সে-ও কাজে যাবে বলে ঠিক করল। কিন্তু ওই যাওয়াই যে শেষ যাওয়া হবে, তা ভাবিনি।’’ দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামী বেঁচে গেলেও, ছেলে ও ভাগ্নে কলেজের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলে চলেন, ‘‘বাড়ি থেকে যাওয়ার সময়ে ছেলে বলেছিল, পুজোয় নতুন শাড়ি নিয়ে আসবে। কিন্তু ছেলেটাই তো আর এল না। পুজো আসায় ছেলেটার মুখটা বড় মনে পড়ছে। আর সহ্য করতে পারছি না।’’

একই পরিস্থিতি সঞ্জয়ের বাড়িতেও। তাঁর স্ত্রী টুসু সর্দার বলেন, ‘‘মেয়েদের দেনা করে বিয়ে দিয়েছি। সেই টাকা শোধ করার জন্যই কেরলে যাচ্ছিল। স্বামীর মৃত্যুর পরে আর্থিক সাহায্য পেয়েছি। কিন্তু মনে তো শান্তি নেই। পুজোর আনন্দ ম্লান হয়ে গিয়েছে।’’ মৃতদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাড়ির খুদেদেরও এ বার জামাকাপড় কেনা হয়নি পুজোয়। তবে পাড়ার কিছু লোকজন জামা কিনে দিয়েছেন।

করুই পঞ্চায়েতের সদস্য সুকেশ চৌধুরী বলেন, “আমাদের গ্রামে সব ক’টি পুজোই হচ্ছে। করমণ্ডল দুর্ঘটনায় মৃতেরা যে পাড়ার বাসিন্দা, ওখানে পুজো হত না। আমরা মৃতদের পরিবারগুলির খোঁজ সব সময়েই রাখি। পুজোর সময়ে ওঁরা আরও শোকার্ত হয়ে পড়ছেন, সেটাই স্বাভাবিক। দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করি, এমন দুর্ঘটনা আর যেন না হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Katwa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE