Advertisement
০৮ মে ২০২৪

বাড়ির লোককে সান্ত্বনা দিচ্ছিল খুনে অভিযুক্তই

রাতদুপুরে বাড়ির লোক যখন তন্নতন্ন করে খুঁজছে মেয়েটিকে, তখন বাড়ির লোককে সান্ত্বনা দিচ্ছিল যুবকটি। ভোর থেকে সবার সঙ্গে গ্রামের চারপাশ খোঁজার সময়েও সঙ্গে দেখা গিয়েছে তাকে। এমনকী, বুধবার সকালে বাড়ি থেকে চারশো মিটার দূরে শুকনো সেচখালের ধার থেকে ছ’বছরের মেয়েটির দেহ তোলার সময়েও গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিথর হয়ে বসেছিল সে।

ধৃত সহদেব মুর্মু। নিজস্ব চিত্র।

ধৃত সহদেব মুর্মু। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জামালপুর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০২:৫৯
Share: Save:

রাতদুপুরে বাড়ির লোক যখন তন্নতন্ন করে খুঁজছে মেয়েটিকে, তখন বাড়ির লোককে সান্ত্বনা দিচ্ছিল যুবকটি। ভোর থেকে সবার সঙ্গে গ্রামের চারপাশ খোঁজার সময়েও সঙ্গে দেখা গিয়েছে তাকে। এমনকী, বুধবার সকালে বাড়ি থেকে চারশো মিটার দূরে শুকনো সেচখালের ধার থেকে ছ’বছরের মেয়েটির দেহ তোলার সময়েও গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিথর হয়ে বসেছিল সে। অথচ সেই যুবকই মেয়েটিকে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধ করে খুনে অভিযুক্ত।

বুধবার রাতেই সহদেব মুর্মু নামে বছর পঁচিশের ওই যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশও দেন বিচারক। তার বাড়ি হুগলির গোঘাট থানার লঙ্কাবেড়িয়া গ্রামে। জামালপুরের গোপীকান্তপুরের মুদিপাড়ায় ওই বাড়িতে মেয়েটির বাবার এক বন্ধুর সঙ্গে মঙ্গলবার এসেছিল সে। পুলিশ ওই বন্ধুটিকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকে রেখেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকার বাবা পেশায় মোটরভ্যান চালক। অবসর সময়ে এ গ্রাম, সে গ্রামে ফুটবল খেলে বেরাতেন। সেই সূত্রে লঙ্কাবেড়িয়া গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। মঙ্গলবার বিকেলে ওই যুবকের সঙ্গেই সহদেব তাঁদের বাড়িতে আসে। মেয়েটির ঠাকুরদা বলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না, আমার ঘরে কালসাপ ঢুকেছিল! ওর চরম শাস্তি চাই। তা না হলে আবার কার ঘরে সিঁদ কেটে আমাদের মতো চরম ক্ষতি করবে কে জানে।’’

কী হয়েছিল ওই রাতে?

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতোই দাদু-ঠাকুমার কাছে ঘুমিয়েছিল প্রথম শ্রেণির ওই ছাত্রী। গরমে গ্রিল ঘেরা বাড়ির বারান্দায় শুয়েছিলেন তাঁরা। ঘরের ভিতরে মা আট মাস বয়সের ছোট বোনকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। বাড়ির ছাদে শুয়েছিলেন নাবালিকার বাবা ও তাঁর দুই বন্ধু। মেয়েটির ঠাকুমার দাবি, গভীর রাতে ঘুম ভাঙলে বড় নাতনি দেখতে পাননি তিনি। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেও সে আসছে না দেখে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দেন। রাতেই টর্চ, ব্যাটারির আলোয় খোঁজাখুজি শুরু হয়। বন্ধুর মেয়েকে খুঁজতে বেরোয় সহদেবও। গোপীকান্তপুরের বাসিন্দা বিভাস মুদি, প্রশান্ত মুদিরা বলেন, “আমাদের মতোই গ্রামের চারিদিকে মেয়েটিকে খোঁজার জন্য ছোটাছুটি করেছে ও। কী ভাবে খুঁজব, পরামর্শ দিয়েছে। দেহ উদ্ধারের পরেও চুপ করে বসেছিল। কিছু বুঝতেই পারিনি আমরা।’’

তাহলে সন্দেহ হল কী ভাবে? পুলিশের দাবি, সবুজ রঙ করা একতলা বাড়ি থেকে চারশো মিটার দূরে সামান্য গর্ত করে নাবালিকার নিথর দেহটি শোয়ানো ছিল। তার উপরে বালি চাপা দেওয়া ছিল। বুধবার সকালে ও দিকে গিয়ে হাতের আঙুল বেরিয়ে থাকতে দেখেন এক মহিলা। পুলিশ আসে। জামালপুর থানার ওসি দীপঙ্কর সরকার ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়ির সবাইকে একে একে জেরা করেন। তাতেই সহদেব অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে। পুলিশের দাবি, জেরায় জানা যায় মেয়েটির বাবা ও তাঁর দুই বন্ধু সন্ধ্যার পরে স্থানীয় মদের আসরে যায়। অথচ সহদেব জেরায় বলে, পেট খারাপ থাকায় বাড়ি থেকে বের হয়নি সে। মেয়েটির ঠাকুমাও জানান, রাতে এক বার সহদেবকে হাত মুছতে মুছতে উপরে উঠতে দেখেছেন তিনি। যদিও সহদেবের জবাব ছিল, পেট খারাপ থাকায় দু’বার শৌচাগার যেতে হয় তাকে। পুলিশের দাবি, মুখে পেট খারাপের কথা বললেও বাড়ির কাউকে তা জানাননি সহদেব। কোনও ওষুধও খাননি। বরং দেহ মেলার পরেই বাড়ি যাওয়ার তাড়া দিচ্ছিলেন। তাতেই সন্দেহ হয়।

পরে বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই সেচ খালের কাছে একটি মাচায় রক্তের দাগ দেখতে পান। ডাক্তারি পরীক্ষায় মেয়েটির ও ওই যুবকের গোপনাঙ্গে রক্তের দাগ মিলেছে বলেও পুলিশের দাবি। তারপরেই পুলিশ নিশ্চিত হয়, ধর্ষণের পরে গলা টিপে ওই নাবালিকাকে খুন করা হয়েছে। পরে দেহ লোপাটের জন্য মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়।

ঘটনায় উত্তজিত স্থানীয় বাসিন্দারা। এমন অপরাধী সাজা না পেলে আরও আরও অনেকের ক্ষতি করতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। মৃতার মা-ও কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার যা গেল তা গেল। আর কারও মায়ের কোল যেন খালি না হয়। ওই জানোয়ারের ফাঁসি চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

murder rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE