Advertisement
E-Paper

ফের ধানচাষির মৃত্যু মন্তেশ্বরে

টানা বৃষ্টিতে ধান, সব্জিতে হওয়া লোকসান নিয়ে চাষিরা এমনিই বিপদে, তার মধ্যে দেনা শোধ করতে না পেরে ফের এক চাষির অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ উঠল মন্তেশ্বরে। হৃদয়নাথ বাগ (৪২) নামে ওই চাষির পরিবারের দাবি, শিলাবৃষ্টিতে আগেই বেশ কিছু জমিতে ক্ষতি হয়েছিল। তা সামলানোর আগেই বন্যার জলে নষ্ট হয়ে যায় ধান। ধার শোধ করতে না পেরে আত্মঘাতী হন তিনি। যদিও প্রশাসন তা মানতে চায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৪
শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

শোকার্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র।

টানা বৃষ্টিতে ধান, সব্জিতে হওয়া লোকসান নিয়ে চাষিরা এমনিই বিপদে, তার মধ্যে দেনা শোধ করতে না পেরে ফের এক চাষির অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ উঠল মন্তেশ্বরে।
হৃদয়নাথ বাগ (৪২) নামে ওই চাষির পরিবারের দাবি, শিলাবৃষ্টিতে আগেই বেশ কিছু জমিতে ক্ষতি হয়েছিল। তা সামলানোর আগেই বন্যার জলে নষ্ট হয়ে যায় ধান। ধার শোধ করতে না পেরে আত্মঘাতী হন তিনি। যদিও প্রশাসন তা মানতে চায়নি। কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, বিষয়টি এখনও জানেন না তিনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখবেন। আর ব্লক প্রশাসনের দাবি, পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি ও কৃষি দফতরকে ওই গ্রামে যেতে বলা হয়েছে।
মন্তেশ্বর ব্লকের মাঝেরগ্রাম পঞ্চায়েতের গাবরুপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, বাগ পরিবারের দুই ছেলের মধ্যে হৃদয়বাবুই বড়। তাঁর স্ত্রী এবং বোন স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজ করেন। এ দিন সকালে হৃদয়বাবুর ভাই দয়াময় বাগ মাঠের কাজে বেরিয়ে যান। বাড়ির অন্যরাও নানা কাজে বাইরে ছিলেন। এরপরেই সকাল ৮টা নাগাদ হৃদয়বাবুর আট এবং ছয় বছরের দুই ছেলে বাড়িতে ঢুকে দেখে বাবার ঝুলন্ত দেহটি দেখে। তারাই অন্যদের খবর দেয়। বিকেলে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিঘে দেড়েক নিজের জমি রয়েছে ওই পরিবারের। তবে আয়ে না কুলোনোয় ভাগচাষও করতেন হৃদয়বাবু। এ ছাড়া এলাকার সন্ধ্যা বাগ নামে এক মহিলার জমি এবং আমাটিয়া গ্রামের একটি মসজিদের জমিতেও ঠিকে চাষ করতেন তিনি। পরিবারের সদস্যদের দাবি, ভাগচাষের জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ বিঘা। তাঁরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে ভাগচাষ করলেও গত দু’বছর ধরেই তেমন লাভ মিলছিল না। তার মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে বেশ কিছু ধান নষ্টও হয়ে যায়। দাম না পাওয়ায় দেনাও বাড়তে থাকে। এর মধ্যেই গত মরসুমে কয়েক বিঘে জমিতে আলু চাষ করেন তিনি। তাতেও লোকসান হয়। মৃত চাষির ভাই দয়াময়বাবু বলেন, ‘‘পরিবারের সমস্ত চাষাবাদই দাদা নিজে দেখতেন। আমি দাদাকে সাহায্য করতাম। এ বার অনেক আশা নিয়ে দাদা আমন চাষ করেছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ জমিতে চারা পোঁতার কাজ যখন শেষের দিকে তখনই এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাতে বেশির ভাগ ধান চারা পচে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বাজারের দেনা শোধ করার চাপ বাড়ে।’’ এ নিয়ে মানসিক অবসাদ থেকেই হৃদয়বাবু এ সিদ্ধান্ত নেন বলে তাঁর দাবি। তবে ধারের পরিমাণ কত, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে পারেননি তিনি। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃতের এক আত্মীয় খোকন বাগ দাবি করেন, ‘‘দাদা ১৮ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিল। তার মধ্যে দশ বিঘাই ভাগে নেওয়া। গত বোরো মরসুমেও চাষে ক্ষতি হয়েছিল তাঁর। তিন বার ধানচারা পুঁতেও সামলাতে পারেননি। শেষে ৫০০ টাকা বস্তায় ধান বেচতে হয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, বাজারে লাখ দেড়েক টাকা ধার ছিল হৃদয়বাবুর। মৃতের বোন ছবিদেবীও বলেন, ‘‘কয়েকদিন ধরেই ধারদেনা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিল দাদা। চাপ সহ্য করতে পেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।’’

এলাকার অন্য চাষিরাও বন্যার জলে চাষের ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের অনেকে হৃদয়বাবুর বাজারে বেশ কিছু ধার ছিল বলেও মেনে নিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল বিশাস, ইয়াসিন শেখরা বলেন, ‘‘এলাকার বেশ কয়েকজনের জমি ভাগে চাষ করত হৃদয়। আমাদের গ্রামের অনেকের মতো বাজারে দেনাও ছিল।’’ কৃষক সভার জেলা সম্পাদক আব্দার রেজ্জাক মণ্ডলও বলেন, ‘‘ধান, আলুতে পরপর ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। বেশ কয়েকজন আত্মঘাতীও হয়েছেন। সরকারের ভুল নীতিই এর কারণ।’’

Farmer Monteswar rain flood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy