Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
এক রাতের ঝড়-জল

জমিতে গিয়েই নিথর রাধারমণ

এক রাতের ঝড়ে সর্বনাশ হয়ে গেল— কাঁদতে কাঁদতে বারবার একই কথা বলছিলেন ভাতারের অলকা সরকার। রবিবার রাতভর ঝড়-জলের পরে সকালে খেতজমির হাল দেখতে গিয়েছিলেন এরুয়ার পঞ্চায়েতের নবানগরের চাষি রাধারমণ সরকার (৫৬)।

স্বজন হারিয়ে কান্না মঙ্গলকোটে।

স্বজন হারিয়ে কান্না মঙ্গলকোটে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুসকরা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪২
Share: Save:

এক রাতের ঝড়ে সর্বনাশ হয়ে গেল— কাঁদতে কাঁদতে বারবার একই কথা বলছিলেন ভাতারের অলকা সরকার।

রবিবার রাতভর ঝড়-জলের পরে সকালে খেতজমির হাল দেখতে গিয়েছিলেন এরুয়ার পঞ্চায়েতের নবানগরের চাষি রাধারমণ সরকার (৫৬)। মাঠে নুইয়ে ভেঙে পড়ে পাকা ধান দেখে জমিতেই পড়ে যান তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যে চিকিৎসকেরা জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

ওই এলাকার বেশির ভাগ জমিরই একই দশা। অন্য চাষি পরিবারদেরও দাবি, অনেকে ধান কেটে ফেলেছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগেরই ধান কেটে ঘরে তোলা বাকি ছিল। তার মধ্যে ঝড়ে অর্ধেকের বেশি ধান নষ্ট হয়ে গেল। পড়শি শম্ভুনাথ শীলের কথায়, “আমাদের গ্রামের বেশ কয়েকজন চাষি রবিবার রাতে কালবৈশাখীর পর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।” রাধারমণবাবুর ছেলে ভোলাবাবুর দাবি, ‘‘চাষের জন্য রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ঋণ নিয়েছিলেন বাবা। এ ছাড়াও মহাজনের ঋণ ছিল। ধানের ফলনও ভাল হয়েছিল। কিন্তু ফসল নষ্টের ধাক্কাটা বাবা নিতে পারল না।”

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাধারমণবাবু এ বছর নিজের ও ভাগের মিলিয়ে ২৮ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন তিনি। ধান তোলার পর সেই সমস্ত চাষিদের হয় টাকা বা নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান দেওয়ার চুক্তি ছিল তাঁর। এছাড়াও নিজের তিনটে সাবমার্সিবল থেকে জল দিতেন তিনি। তাঁর পরিবারের দাবি, রাত থেকেই উচাটন হয়ে ছিল। সকাল হতেই পাকা ধান দেখতে মাঠে ছুটে যান। ক্ষতি দেখে আর সামলাতে পারেননি। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তখনই তাঁর শরীরে প্রাণ ছিল না বলে স্থানীয়দের দাবি। এরপরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

মৃতের ভাই বিশ্বজিৎ সরকার জানান, “দাদা বোরো চাষ করতে গিয়ে অনেকটা ধার করে ফেলেছিলেন। দু’একদিনের মধ্যে পাকা ধান কাটবে বলে ঠিক ছিল। ঝড়ের পর থেকেই দাদা কেমন উদভ্রান্তের মত হয়ে যায়। কেবলই বলছিলেন- সব শেষ হয়ে গেল, সব শেষ হয়ে গেল।’’ পরিবার সূত্রে আরো জানা যায়, রাধারমন সরকারের তিন মেয়ে এবং এক ছেলে আছে। তাঁর মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

ভাতারের বিডিও প্রলয় মণ্ডল জানান, ওই চাষির বাড়িতে ব্লক থেকে এক প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছিল। মানবিক দিক থেকে ওই পরিবারের পাশে থেকে সহযোগিতার প্রস্তাব জেলায় পাঠানো হয়েছে। ভাতারের বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। ভাতারের অন্য চাষিরাও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nor' wester Burdwan Farmer dies
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE