Advertisement
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
অতিবৃষ্টির প্রভাবে জেলার ১,১২,৮৪৫ হেক্টর জমি
Farmlands Under water

খেত জলমগ্নই, নিকাশি নিয়ে ক্ষোভ চাষিদের

বৃষ্টি হলেই নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জমির জল বার হতে পারবে না বলে চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশও করেন তাঁরা। বাঁকা, বেহুলা, খড়ি, ব্রহ্মাণী, কুনুর নদী উপচেও খেত জমিতে জল ঢুকেছে, দাবি তাঁদের।

কাটোয়ায় ব্রহ্মাণী নদীর জল ভাসছে চাষজমি।

কাটোয়ায় ব্রহ্মাণী নদীর জল ভাসছে চাষজমি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ০৯:২৭
Share: Save:

বৃষ্টি ধরেছে। ব্যারাজ থেকেও জল ছাড়াও অনেকটাই কমিয়েছে ডিভিসি। কিন্তু এখনও জেলার ছোট নদীগুলি টইটম্বুর থাকায় খেতে জমে থাকা জল নামতে পারছে না। আবার বেশ কিছু জায়গায় নয়ানজুলি বা নিকাশি নালা বুজে থাকাতেও জমিতে কয়েক ফুট উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে জল। গত চার দিন ধরে জমির জমা জলে ধানের চারা পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। আবার জল দাঁড়িয়ে ধান বুনতেও পারছেন না অনেকে। সোমবার সকালেই নালা সংস্কারের দাবিতে রায়নার বাঁকুড়া মোড়ের কাছে বর্ধমান-আরামবাগ রোড অবরোধ করেন চাষিদের একাংশ। জেলা প্রশাসনের দাবি, ধান, পাট, আনাজ মিলিয়ে জেলায় ১,১২,৮৪৫ হেক্টর জমিতে অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়েছে। প্রায় সাড়ে চার লক্ষ চাষির কপালে ভাঁজ।

কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) নকুলচন্দ্র মাইতি বলেন, “যে সব জমিতে জল দাঁড়িয়ে রয়েছে, সেখানে চাষ দেরিতে শুরু হবে। তবে অগস্ট মাস জুড়েই ধান রোপণ করা হয়। ফলে অসুবিধা হবে না। আর ধান বসানো যে সব জমিতে জল দাঁড়িয়ে আছে, জল নামার পরে সেখানকার ক্ষতি বোঝা যাবে।’’

এ দিন রায়নার বাঁকুড়া মোড়ের কাছে নালা সংস্কারের দাবিতে প্রায় ৪৫ মিনিট বর্ধমান-আরামবাগ রোড অবরোধ করেন চাষিরা। দিঘা, হলদিয়া, আরামবাগ-সহ একাধিক ছোট রুটের বাস আটকে যায়। আটকে ছিল ট্রাক, ডাম্পারও। চাষিদের একটা বড় অংশের দাবি, মাটি, বালি পড়ে রাস্তার ধারে নয়ানজুলি বা জমির দু’ধারে থাকা নালাগুলি বুজে গিয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে চাষি ও ব্লক প্রশাসনের মধ্যে বৈঠক করার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। চাষিদের দাবি, গত সেপ্টেম্বরেই তাঁরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়ে জানান, বর্ধমান-আরামবাগ রোডের দু’ধারে বড় বড় বাড়ি, চালকল, হোটেল গড়ে উঠেছে। বুজিয়ে ফেলা হয়েছে নয়ানজুলি। বৃষ্টি হলেই নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জমির জল বার হতে পারবে না বলে চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশও করেন তাঁরা। বাঁকা, বেহুলা, খড়ি, ব্রহ্মাণী, কুনুর নদী উপচেও খেত জমিতে জল ঢুকেছে, দাবি তাঁদের।

কৃষি দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলার ২১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ২০২টিতে খেত জলমগ্ন। গত বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত কৃষি দফতরের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমির মধ্যে আমন চাষ হয়েছিল ২,০৬,৩৬৯ হেক্টরে। জলমগ্ন ছিল ৮৮,৮২০ হেক্টর। সোমবার তা বেড়ে হয়েছে ১,০০,৮২০ হেক্টর। আউশ রোপন হয়েছে ৮০৪৫ হেক্টর জমিতে। রবিবার পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল ২৯৭৭ হেক্টর জমি।

সোমবার সেটাই বেড়ে ৩২০০ হেক্টর হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন আনাজের ক্ষেত্রে সাত হাজার হেক্টর ও পাটের ১৮২৫ হেক্টর জমিতে জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভাতার, মেমারি ২, কালনা ১ ও ২, কাটোয়া ১ ও ২ ব্লকে ৮০ শতাংশ ধান জমি জলমগ্ন। কেতুগ্রাম ২ ও পূর্বস্থলী ২ ব্লকে সবটাই জলের তলায়। চাষিদের একাংশের দাবি, প্রতিটি মরসুমেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হতে হচ্ছে। দু’এক দিনের মধ্যে জল না সরলে পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Katwa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE