ধান ঝাড়ার কাজে ব্যস্ত মহিলারা। খণ্ডঘোষে। নিজস্ব চিত্র
একে ধান, তার দোসর আলু।
একটায় জল না পেয়ে আতান্তরে পড়েছেন চাষিরা। অন্যটায় হিমঘরে রাখা গত বারের আলুর দাম মিলছে না। এ পরিস্থিতি সরকার পাশে না দাঁড়ালে মুশকিল বলেই দাবি করছেন ব্যবসায়ী, হিমঘর মালিকেরা। আজ, শুক্রবার কালনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। চাষিদের আশা, হয়তো কিছু সুরাহা হবে।
জলের অভাব ধানে
দুই বর্ধমান মিলিয়ে চাষযোগ্য জমি প্রায় ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার হেক্টর। তার একটি বড় অংশে চাষ হয় ধান, আলু। এ বছর অবশ্য পুরো আমনের মরসুমেই বৃষ্টি, জলের অভাবের দাবি তুলেছেন চাষিরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বোরো চাষের জন্য রাখা জল ছেড়েছে ডিভিসি। পাম্প দিয়ে পুকুর, দিঘি, নদী থেকে ক্রমাগত জল দেওয়া হয়েছে জমিতে। তার পরেও উৎপাদন মার খাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। তাঁদের দাবি, ধান কাটার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অনেক জায়গাতেই ধান এখনও পুষ্ট নয়। আবার ফসল কাটতে দেরি হলে পরের মরসুমেও ক্ষতি থেকেই যাবে। কৃষি দফতরের যদিও দাবি, ধান পুরোপুরি কাটা না হলে উৎপাদনে খামতির হিসেব করা যাবে না।
আলুর দাম নেই
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ীদের দাবি, টানা চার বছর ধরে হিমঘরে আলু রেখে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। মাঠ থেকে আলু বিক্রির সময় চাষিরা দাম পাচ্ছেন। কিন্তু হিমঘরে রাখার পরে সেই আলু বাজারজাত করার সময় দাম মিলছে না। এ বছরই ৫০ কেজির আলুর প্যাকেটে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। তাঁরা জানান, জেলায় গড়ে সাড়ে তিন কোটি প্যাকেট আলু উৎপাদন হয়। কিছুটা আলু বাজারে আসে। আর বাকি আড়াই থেকে তিন কোটি প্যাকেট আলু হিমঘরে ঢুকে যায়। হিমঘর থেকে বেরনোর পরে খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আলু রেখে বাকি আলু বিহার, নেপাল, ঝাড়খন্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে ভিন রাজ্যে এ জেলার আলুর চাহিদা কমেছে বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। তাঁরা জানাচ্ছেন, এ বছর এখনও পর্যন্ত আলুর কোনও বরাত আসেনি। উল্টে উত্তরপ্রদেশের আলু বর্ধমানেরও বাজার দখল করে নিচ্ছে। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের জেলা সম্পাদক সুনীল ঘোষের দাবি, ‘‘গুণগত মানের জন্য আলু ভিন্ রাজ্য বা দেশে পাঠানো যাচ্ছে না। উল্টে রং করা উত্তরপ্রদেশের আলু বাজারে বিকোচ্ছে। সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’’ হিমঘর অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা, মেমারির কৌশিকর দাবি, ‘‘ব্যবসায় বিপর্যয় হলে আলু কিনব কী ভাবে? চাষিরা দাম পেলেন আর ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন, এটা তো হতে পারে না— সে জন্য সরকারের একটা সুষ্ঠু নীতি করা দরকার।’’
কিসান মান্ডি বন্ধ
সরাসরি ফসল বিক্রির জন্য জেলার ২০টি ব্লকে কিসান মান্ডি রয়েছে। কৃষি বিপণন দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্ধমান, পূর্বস্থলী ১, গলসি ১, ভাতারে প্রতিদিন বাজার বসে। কিন্তু ২২টি দোকানের মধ্যে কোথাও ১২টি তো কোথাও ৬টি দোকান বিলি হয়েছে। বাকি মান্ডিগুলিতে সপ্তাহে দু’দিন করে বাজার বসে। মেমারি ১ ও আউশগ্রাম ২ ব্লকের কিসান মান্ডি এখনও চালু হয়নি বলে জেলা প্রশাসন সূতেরেই জানা গিয়েছে।
ধান কেনায় গতি নেই
এ বছর ধান কেনার জন্য পূর্ব বর্ধমানকে রাজ্য সরকার ৪ লক্ষ মেট্রিক টনেরও বেশি লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। খাদ্যা দফতরের দাবি, অক্টোবর থেকেই চাষিদের নাম নিবন্ধকরণের জন্য কিসান মান্ডিতে বসছেন আধিকারিকেরা। এ মাস থেকে ধান কেনাও শুরু হয়েছে। জেলায় ২৩টি জায়গা থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন ধান কিনতে পেরেছে খাদ্য দফতর। গত বছরের থেকে ২০০ টাকা বেশি দর মিললেও ধান কেনায় গতি নেই কেন? খাদ্য দফতরের কর্তারা বলেন, ‘‘সবে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’’
চাষিদের দাবি
মেমারির আলু চাষি সুব্রত ঘোষের দাবি, ‘‘সারের দাম আকাশ ছোঁয়া। আলু্ও জলের দরে বিকোচ্ছে। বছর বছর আলু-ব্যবসা মার খাচ্ছে। সরকার আগে থেকে সচেতন হোক।’’ কালনার চাষি আকবর শেখ, তপন কর্মকারদেরও দাবি, ‘‘বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। সারের দাম বাড়ছে। অথচ ফসলের দাম নেই। অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়তে হচ্ছে। সরকার কী দেখবে না!’’ ভাতারের চাষি রেজাউল শেখ, বিজয় দাসদের দাবি, ‘‘জলের অভাবে আমন ধান মার খেল। বোরোতেও জল পাওয়া যাবে না। প্রতি বছরই জলের সঙ্কট হচ্ছে। মুক্তির উপায় কী নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy