বেশ কয়েকবছর পরে দু’ভাইকে নিয়ে ভাইফোঁটার আয়োজন করেছিলেন দিদি। সকাল সকাল স্ত্রী-ছেলেকে মোটরবাইকে চাপিয়ে জামালপুরে দিদির বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন বর্ধমান সদরের বাসিন্দা সৌমেন চট্টোপাধ্যায় (৪৪)। তবে ফোঁটা নেওয়া হল না। পথে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল সৌমেন ও তাঁর আট বছরের ছেলে অভিজ্ঞানের। সৌমেনের স্ত্রী মহুয়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বর্ধমানের জামালপুরে হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুতে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এসডিপিও (বর্ধমান সদর) সৌমিক সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আলু বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। চালক ও খালাসি পলাতক।”
বর্ধমান শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে জামালপুরের শ্রীকৃষ্ণপুরে দিদি রিনা চক্রবর্তীর বাড়িতে যাচ্ছিলেন বর্ধমান শহরের বনমসজিদ পাড়ার বাসিন্দা সৌমেনবাবু। পেশায় জীবন বীমা নিগমের এজেন্ট সৌমেনের গৃহশিক্ষক হিসেবেও পরিচিতি ছিল। অভিজ্ঞান বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, মোটরবাইক চালক সৌমেনবাবুর মাথায় হেলমেট ছিল। তাঁর ও মহুয়াদেবীর মাঝে বসেছিল অভিজ্ঞান। জামালপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার সময় উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাক হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইকটিকে ধাক্কা মারে। মোটরবাইক থেকে তিন জনেই রাস্তায় পড়ে যান। মুহূর্তে ট্রাকের সামনের চাকায় পিষ্ট হয়ে যান বাবা-ছেলে। মহুয়াদেবীর পায়ের উপর দিয়ে চলে যায় ট্রাকটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রাস্তার উপরে ট্রাক ফেলে দামোদরের বাঁধ ধরে চম্পট দেয় চালক ও খালাসি।
খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন রিনাদেবী এবং সৌমেনবাবুর ভাই বাবলু চট্টোপাধ্যায়। রিনাদেবী পরে কোনও মতে বলেন, “বেশ কয়েক বছর পরে ভাইদের এক সঙ্গে ফোঁটা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সবাইকে নিয়ে আসতে বলেছিলাম। ভগবান ফোঁটা দেওয়ার আনন্দটাই কেড়ে নিল!”
ভাইফোঁটা দিতে যাওয়ার পথে এ দিনই বীরভূমের মাড়গ্রােমে টোটো উল্টে মৃত্যু হয় এক তরুণীরও। মল্লিকা মাল (১৮) নামে ওই তরুণী মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম থানার গাফুল গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, একটি টোটোয় ন’জন যাত্রী উঠেছিলেন। রামপুরহাট–পারুলিয়া রাজ্য সড়কে টোটোটি উল্টে য়ায়।