Advertisement
E-Paper

রুগ্‌ণ দশা কাটছে অন্যত্র, দুর্গাপুরে সার কারখানা বন্ধ

তালচের, রামাগুন্ডম, বারাউনি, গোরক্ষপুর— রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজারের বন্ধ এই চার ইউনিটের পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাবে আগেই অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট। বৃহস্পতিবার অনুমোদন পেল ঝাড়খণ্ডের সিন্ধ্রিও। অসমের নামরূপেও রুগ্‌ণ সার কারখানা নতুন করে খোলার সিদ্ধান্ত পাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০১:৩৬
সিটুর মিছিল দুর্গাপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

সিটুর মিছিল দুর্গাপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

তালচের, রামাগুন্ডম, বারাউনি, গোরক্ষপুর— রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজারের বন্ধ এই চার ইউনিটের পুনরুজ্জীবনের প্রস্তাবে আগেই অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট। বৃহস্পতিবার অনুমোদন পেল ঝাড়খণ্ডের সিন্ধ্রিও। অসমের নামরূপেও রুগ্‌ণ সার কারখানা নতুন করে খোলার সিদ্ধান্ত পাকা।

অথচ দুর্গাপুরে সেই হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজারেরই (এইচএফসিএল) বন্ধ কারখানা খোলার ব্যাপারে কেন্দ্রের তরফে কোনও সাড়া এখনও মেলেনি। শিল্পাঞ্চলের বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় অবশ্য দাবি করেন, তাঁরা ওই কারখানা ফের খোলার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসানসোল শিল্পাঞ্চলে ঘুরে গেলেও রুগ্‌ণ কারখানার পুনরুজ্জীবন নিয়ে কিছুই বলেননি। তা নিয়ে শ্রমিক সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে যথেষ্ট ক্ষোভও রয়েছে। বৃহস্পতিবার মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সিন্ধ্রিতে ২০০২ সাল থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা নতুন করে খোলার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়। তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। তাতে দুর্গাপুরের ক্ষোভ আরও বেড়েছে।

হিন্দুস্তান ফার্টিলাইজার খোলার দাবিতে শুক্রবার বিকেলে প্রাক্তন ও স্বেচ্ছাবসর নেওয়া শ্রমিক-কর্মীদের নিয়ে দুর্গাপুরে মিছিল বের করে সিটু। কারখানার এক সময়ের কর্মী বিবেকানন্দ মনি, ইতি দাস, বরুণ চৌধুরীরা অভিযোগ করেন, ‘‘বারবার আশার কথা শুনেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একে-একে সব বন্ধ সার কারখানাই খোলার পথে। অথচ দুর্গাপুর নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য শুনছি না।’’ বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক অভিযোগ করেন, ‘‘ইউপিএ-টু এই কারখানা খোলার আশ্বাস দিলেও এই নতুন সরকার আসার পরে আমরা আর কোনও সাড়াশব্দ পাইনি। রাজ্যের তরফেও কোনও দাবি জানানো হচ্ছে না। পরিকল্পনা করেই এটা করা হচ্ছে।’’

কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ইউরিয়ার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৩১০ লক্ষ মেট্রিক টন। তার মধ্যে দেশে তৈরি হয় ২৩০ লক্ষ মেট্রিক টন। বাকিটা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বিদেশ থেকে সার আমদানির পরিমাণ কমাতে ইতিমধ্যেই ওড়িশার তালচের, তেলঙ্গানার রামাগুন্ডম, বিহারের বারাউনি ও উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা পুনরুজ্জীবনের সবুজ সংকেত দিয়েছে সরকার। এ বার সিন্ধ্রির ভাগ্যেও শিকে ছিঁড়ল। কেন্দ্রীয় সার ও রসায়ন মন্ত্রকের হিসেবে, সিন্ধ্রির কারখানায় প্রত্যক্ষ ভাবে পাঁচশো এবং অপ্রত্যক্ষভাবে তিন হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। সেখানে উৎপাদিত ইউরিয়া বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের ইউরিয়ার চাহিদা মেটাবে। দেশের দূরবর্তী প্রান্ত থেকে ইউরিয়া বয়ে আনার জন্য খরচে সরকারকে যে ভর্তুকি দিতে হয়, তা আর দিতে হবে না।

দুর্গাপুরে সার কারখানা চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ছয়ের দশকে। ১৯৬৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী সেটির শিলান্যাস করেন। প্রায় ছ’শো একর জমিতে কারখানা এবং চারশো একরে কর্মী আবাসন গড়ে ওঠে। কাঁচামাল হিসাবে ন্যাপথা ব্যবহার করে ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। কিন্তু উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় কেন্দ্র বিদেশ থেকে ইউরিয়া আমদানির উপরে জোর দেয়। ফলে, নয়ের দশকের গোড়া থেকেই কারখানাটি রুগ্‌ণ হতে থাকে। ১৯৯৮ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কারখানা বিআইএফআর-এ (বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন) চলে যায় ।

সার কারখানা ফের খোলার দাবিতে শুরু থেকে আন্দোলন করে আসছে সিটু তথা সিপিএম। দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতেও তদ্বির করেছেন। শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে অর্থনীতি বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটি কারখানার পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে সায় দেয়। ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন সার প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত জেনা সংসদে জানান, কারখানা ফের খোলার জন্য বিআইএফআর-এর কাছে ‘ড্রাফট রিহ্যাবিলিটেশন স্কিমস’ (ডিআরএস) জমা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার পরে গত বছর জুলাইয়ে রাজ্যসভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন সিপিএম সাংসদ তপন সেনও। সার প্রতিমন্ত্রী নিহাল চাঁদ তখন আশ্বাস দেন, নিলাম করে বেসরকারি উদ্যোগ আহ্বান করে কারখানাটি খোলা হবে। মে মাসের শুরুতে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্রও প্রধানমন্ত্রীকে দুর্গাপুর ও হলদিয়ার দু’টি বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা খোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

কিন্তু বৃহস্পতিবার সিন্ধ্রির বন্ধ কারখানা খোলা এবং অসমে নতুন সার কারখানা খোলার ব্যাপারে সিন্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হলেও দুর্গাপুর নিয়ে কোনও সাড়া মেলেনি। সাংসদ তপনবাবুর দাবি, ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত ছিল, দুর্গাপুরের সার কারখানা ফের চালু করা হবে। কাজেই কারখানা চালু হবে না এ কথা সরকার বলতে পারবে না। তবে তা সত্ত্বেও দুর্গাপুরের কারখানাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় কাটছে না। সিটুর বর্ধমান জেলা সম্পাদক বংশগোপাল রায়চৌধুরী, ‘‘এই বঞ্চনার প্রতিবাদে ধারাবাহিক আন্দোলন চলবে। অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলিকেও একজোট হয়ে এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’’

তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি কেন পথে নামছে না? সংগঠনের বর্ধমান জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এই সার কারখানা খোলার দাবিতে আমাদের সাংসদেরা দিল্লিতে ধারাবাহিক ভাবে দরবার করেন। এই কারখানাও সেই তালিকাতে আছে।’’ কিন্তু সব শ্রমিক সংগঠনের একযোগে আন্দোলনে সামিল হওয়া প্রসঙ্গে তিনি কোনও কথা দিতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে আমাদের রাজ্য নেতৃত্ব যেমন নির্দেশ দেবেন, তেমনটাই করা হবে।’’

ঘটনাচক্রে আজ, শনিবারই নিজের কেন্দ্রে যাচ্ছেন আসানসোল থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। দুর্গাপুর তাঁর নির্বাচনী ক্ষেত্রের মধ্যে না পড়লেও বেশ কিছু রুগ্‌ণ কারখানা খোলার জন্য কেন্দ্রে দরবার করছেন বলে তাঁর দাবি। শুক্রবার রাতে বাবুল বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে সার ও রসায়ন মন্ত্রী অনন্ত কুমার এবং পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে আমার এই নিয়ে বৈঠক হয়েছে। দুর্গাপুরে সার কারখানা খোলার ব্যাপারে আমরা তিন জনেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

ছাত্রীর অপমৃত্যু। শুক্রবার দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপে আমবাগান এলাকায় এক কিশোরীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতার নাম মিতা ক্ষেত্রপাল (১৬)। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ দিন সন্ধ্যায় আত্মীয়েরা দেখেন, একটি ঘরে মিতার দেহ ঝুলছে। পরিবারের লোকেরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মিতা এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। এ দিন ফল বেরোনোর পরে দেখা যায়, সে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। পুলিশ প্রাথমিক অনুমান, এর পরেই সে আত্মঘাতী হয়েছে।

Fertilizer Durgapur CPM Tapan sen Ananta Kumar UPA 2
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy