Advertisement
E-Paper

নির্দেশের পরেও উদ্ধার হয়নি অনেক আগ্নেয়াস্ত্র

শিল্পাঞ্চলে ভোটের মরসুমে দেদার আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকেছে, অভিযোগ জানাচ্ছিল বিরোধীরা। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানো একটি রিপোর্টে জানিয়েছিলেন, বেশ কয়েকটি জেলায় বোমা-বন্দুক মজুত হয়েছে।

সুব্রত সীট ও নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪৮

শিল্পাঞ্চলে ভোটের মরসুমে দেদার আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকেছে, অভিযোগ জানাচ্ছিল বিরোধীরা। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানো একটি রিপোর্টে জানিয়েছিলেন, বেশ কয়েকটি জেলায় বোমা-বন্দুক মজুত হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেই তালিকায় বর্ধমানও ছিল। ভোটের মুখে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তার পরেও যে অস্ত্র দুষ্কৃতীদের হাতে রয়ে গিয়েছে, সোমবার দুর্গাপুরে হার ছিনতাইয়ে বাধা পেয়ে প্রকাশ্যে দুষ্কৃতীদের গুলি চালানোর ঘটনাতেই তা পরিষ্কার, মনে করছেন শিল্পাঞ্চলবাসী।

সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানা এলাকার শঙ্করপুরে নিবেদিতা পার্ক লাগোয়া এলাকায় ওই ঘটনার পরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মহিলারা জানান, হার পরে রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। যে মহিলার গলার হার ধরে এ দিন দুষ্কৃতীরা টান দেয়, সেই খুকু মুখোপাধ্যায় যেমন বলেন, ‘‘যা হল তা ভেবে এখনও বুক কাঁপছে। আর হার পরে বেরবো কি না ভাবতে হবে!’’

রাজ্যের সীমানায় এই খনি-শিল্পাঞ্চলে ভিন্‌ রাজ্য থেকে অস্ত্র ঢোকে, পুলিশ-প্রশাসনের কাছে সেই রিপোর্ট রয়েছে অনেক দিন ধরেই। বছর তিনেক আগে আসানসোলের এক সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নির্দেশ দিয়েছিলেন, অন্ডাল থেকে যেন কোনও অস্ত্র ঢুকতে না পারে। পুলিশকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে সক্রিয় হতে বলেছিলেন তিনি। যদিও তার পরে অস্ত্রের আনাগোনা বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। অধরা রয়ে গিয়েছে অস্ত্র কারবারিরাও।

পুলিশের নানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহার থেকে বীরভূম হয়ে অজয়ের পাণ্ডবেশ্বর ঘাট পেরিয়ে অস্ত্র ঢুকছে। তার পরে তা পৌঁছে যাচ্ছে অন্ডাল, লাউদোহা-সহ লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকায়। এ ছাড়া ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া থেকে সালানপুর, রূপনারায়ণপুর, বারাবনি হয়ে বেআইনি অস্ত্র শিল্পাঞ্চলে পৌঁছচ্ছে। অজয়ের রুনাকুড়া ঘাট, দরবারডাঙা ও বাঘডিহা-সিদ্ধপুর ঘাট দিয়ে, বরাকর নদ পেরিয়ে নানা পথে ওয়ান শটার, নাইন এমএম পিস্তল ঢুকে পড়ছে। কখনও বাসে-ট্রেনে চাল, গমের বস্তায়, আবার কখনও কয়লার বস্তায় ভরে সাইকেলে এই সব অস্ত্র আনা হয় বলে নানা সূত্রের দাবি।

ভোটের আগে এ ভাবে অস্ত্র ঢোকা আটকাতে নানা চেকপোস্টে সিসিটিভি বসিয়েছিল পুলিশ। ধরপাকড়ও শুরু হয়েছিল। তবে তাতে যে পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছিল, তা যথেষ্ট নয় বলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ভোটের দিনে গোলাগুলি না চললেও দুষ্কৃতীদের হাতে যে অনেক বেআইনি অস্ত্র রয়ে গিয়েছে, তা এ দিনের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল বলে দাবি সিপিএমের জেমুয়া-বিধাননগর লোকাল কমিটির সম্পাদক কবি ঘোষের। এডিসিপি (পূর্ব) কুমার গৌতমের জানান, দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য রুখতে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শঙ্করপুর এলাকায় হার ছিনতাই এটাই প্রথম নয়। ২০১৪-র সেপ্টেম্বরে স্থানীয় বাসিন্দা সুজাতা চট্টোপাধ্যায় সন্ধ্যায় পাড়ার একটি মন্দিরে যাচ্ছিলেন। মোটরবাইকে চড়ে আসা দুষ্কৃতীরা তাঁর গলার হার ধরে টান মারে। তিনি পড়ে যাওয়ায় হার নিতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। তবে সুজাতাদেবীর মাথায় চোট লাগে। মস্তিষ্কের ভিতরে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ২২ দিন পরে অস্ত্রোপচার হয়। সে দিনের ঘটনার কথা উঠলে এখনও শিউরে ওঠেন তিনি। ২০১৫-র জানুয়ারিতে বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ একই ঘটনা ঘটে গায়ত্রী কোনারের সঙ্গে। তখন শীতকাল। বাড়ির সামনে বসে তিনি রোদ পোহাচ্ছিলেন। মোটরবাইকে চড়ে আসা দু’জন প্রথমে একটি ঠিকানা জানতে চায়। তিনি কথা বলতেই পিছনের আসনে বসা দুষ্কৃতী হার ছিঁড়ে নিয়ে চম্পট দেয়। গায়ত্রীদেবী বলেন, ‘‘ভয়ে আর গলায় সোনার হার পরি না। প্রাণটা তো আগে!’’

firearms election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy