Advertisement
E-Paper

‘অন্তর্ঘাত’ দেখছেন মমতাজ

গণনাকেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে যান মমতাজ। গাড়িতে বসেই তিনি বলেন, ‘‘দেখতেই পাওয়া যাচ্ছে খারাপ ফল হচ্ছে। মনে হচ্ছে না আর ভাল হবে। অন্তর্ঘাত হয়েছে বোঝা যাচ্ছে।’’

সৌমেন দত্ত ও সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০৩:০৩
মমতাজ সংঘমিতা

মমতাজ সংঘমিতা

গণনা শুরুর আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই ফলের ‘ট্রেন্ড’ দেখেই অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করেছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতা। গণনা প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কার্যত দড়ি টানাটানি চলল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। শেষমেশ তৃণমূল প্রার্থীর থেকে ২,৪৩৯ ভোট বেশি পেয়ে এই কেন্দ্র থেকে জিতলেন বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া।

ফলে এই ‘অঘটন’ দেখে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তৃণমলের পূর্ব বর্ধমানে দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ-সহ অন্য নেতা, কর্মীদের একাংশ। বেলা ১১টা ২৩ মিনিট। গণনাকেন্দ্র ছেড়ে বেরিয়ে যান মমতাজ। গাড়িতে বসেই তিনি বলেন, ‘‘দেখতেই পাওয়া যাচ্ছে খারাপ ফল হচ্ছে। মনে হচ্ছে না আর ভাল হবে। অন্তর্ঘাত হয়েছে বোঝা যাচ্ছে।’’ স্বপনবাবুও বলেন, ‘‘অন্তর্ঘাত ছাড়া এমন ফল কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। কারা তা করেছেন, তাঁদের খুঁজে বার করতে হবে।’’

তবে এ দিন গোটা গণনা-পর্ব জুড়েই ছিল টি-২০ ম্যাচের উত্তেজনা। প্রথম রাউন্ডে বিজেপি এগিয়ে যায় ২৯ ভোটে। ঘণ্টা দুয়েক বাদে তা দাঁড়ায় ২৩,৭৭৩ ভোট। দশম রাউন্ডে বিজেপি প্রথম ধাক্কা খায়। ‘লিড’ কমে দাঁড়ায় ১১,৫৯২ ভোটে। ১৭তম রাউন্ডে তা হয় ২,৫৯৭ ভোটের। এর পরে প্রথম লিড পায় তৃণমূল। আগেই বেরিয়ে যাওয়া তৃণমূল প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট অরূপ দাস ফের গণনাকেন্দ্রে আসেন। তার পরেউ বিজেপি আবার ৫১৯ ভোটে এগিয়ে যায়। পরে পাঁচটি ইভিএম খারাপ থাকায় ভিভিপ্যাটের গণনা শুরু হয়। সন্ধ্যায় দেখা যায়, ১,৯৫১ ভোটে এগিয়ে বিজেপি।

সাতটি বিধানসভার মধ্যে দুর্গাপুর পূর্ব, পশ্চিম ও গলসি, এই তিন বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল প্রায় ৮৮,০০০ ভোটে পিছিয়ে গিয়েছে।

এ বার প্রচারে নেমে ২০১৪-য় জয়ী তৃণমূলের মমতাজ সংঘমিতাকে এলাকায় তেমন দেখা যায় না বলেও অভিযোগ করেছিল বিজেপি-সহ অন্য বিরোধী দলগুলি। ২০১৭-য় দুর্গাপুরে পুরভোটে তৃণমূল ছাড়া অন্য কেউ কোনও ওয়ার্ডে জিততে না পারলেও ভোটের দিন বেশ কিছু এলাকায় টক্কর দেয় বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন পানাগড়ে দুষ্কৃতীদের তাঁরা রুখে দিয়েছিলেন বলে জানান বিজেপি কর্মীরা। দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকার বিজেপির আহ্বায়ক অভিজিৎ দত্তের দাবি, ‘‘পুরসভা ভোটে মানুষ ভোট দিতে পারেননি। সুযোগ পেয়েই মানুষ ক্রোধ উগরে দিয়েছেন।’’

মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনের মাত্র এক দিন আগে এই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করে বিজেপি। আসানসোলের স্কুল, কলেজ ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সুরেন্দ্রবাবুর মতো ‘হেভিওয়েট’ নেতাকে দেখে ‘জয়ের গন্ধ’ পেতে শুরু করেন বিজেপি নেতৃত্ব। কেন্দ্রে অবাঙালি ভোটারদের বড় সংখ্যা তাঁদের পক্ষে যাবে বলে আঁচ করেন বিজেপি নেতৃত্ব।

সেই সঙ্গে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙার সভা ঘিরে ধুন্ধুমার, কাঁকসার রূপগঞ্জের জঙ্গলে দলীয় কর্মী সন্দীপ ঘোষ খুনের পরেও দলের টানা বিক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্গাপুরের সভা— সব মিলিয়ে দুর্গাপুরে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ শক্তিবৃদ্ধি হয়েছিল বিজেপির, মত রাজনৈতিক মহলের। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমানের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘সম্ভবত শ্রমিকেরা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। কেন এমনটা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করতে হবে।’’

সুরেন্দ্রবাবুর সঙ্গে রাত পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ছেলে রমনজিৎ সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘মানুষ আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। তাই এই জয়।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রদত্ত ভোটের তুলনায় চারশো ভোট বেশি পড়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। ফলে গণনায় দেরি হচ্ছে। এই সমস্ত বিষয়কে সামনে এনে বর্ধমান-দুর্গাপুর সব বুথেই পুনর্গণনা চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেন মমতাজ সংঘমিতার নির্বাচনী এজেন্ট অরূপবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘আটটি ইভিএম মেশিন খোলা হয়নি। বেশ কয়েকটি মেশিনের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের গণনা মেলেনি। পোস্টাল ব্যালটের গণনাতেও ভুল হয়েছে বলে আমাদের আশঙ্কা।’’ তৃণমূল জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘বেশ কিছু নিয়ম না মেনে গণনা হয়েছে। তাই এই দাবি।’’

Election Results 2019 Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Mamtaz Sanghamita TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy