সবে বৈঠকের আগে এক এক করে চেয়ারে বসতে শুরু করেছেন পঞ্চায়েতের আধিকারিকেরা। আচমকা প্রধান আর উপপ্রধানের মধ্যে কথা কাটাকাটি বেধে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা গড়ায় চুলোচুলি, হাতাহাতিতে। নেত্রীদের সামলাতে দু’এক পা এগিয়ে এলেও কেউই সাহস জুটিয়ে ছাড়াতে পারেন নি যুযুধান দু’পক্ষকে। মঙ্গলবার দুপুরে এমন দৃশ্যেরই সাক্ষী থাকল ভাতারের বড়বেলুন ১ পঞ্চায়েত দফতর।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে পঞ্চায়েতটি দখল করেছিল সিপিএম। প্রধান হয়েছিলেন বাণেশ্বরপুরের মানোয়ারা বেগম। কয়েক মাস পরেই ওই পঞ্চায়েতের ২জন সিপিএম সদস্যা তৃণমূলে যোগ দেন। নয় সদস্যের পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সদস্য হয় ৬ জন, সিপিএমের তিনজন। ওই প্রধানের নেতৃত্বেই পঞ্চায়েতটি দখল করে তৃণমূল। পরে গত বছর ডিসেম্বরে মানোয়ারা বিবির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী। অনাস্থায় হেরে যান মানোয়ারা বেগম। তার বদলে প্রধান নির্বাচিত হন সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বড়বেলুন গ্রামের পূর্ণিমা দাস। পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে খবর, এর পর থেকে নানা কারণে দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য লেগে থাকত। বিভিন্ন বৈঠকে কথা কাটাকাটিও চলত। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনা সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে বলে পঞ্চায়েত সদস্যদের দাবি।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ বৈঠক শুর হয়। সবে পঞ্চায়েত সদস্য, আধিকারিকরা চেয়ারে বসেছেন, এমন সময়ে প্রাক্তন প্রধান মানোয়ারা বেগম চিৎকার করে বলতে শুরু করেন, ‘বৈঠক পরে শুরু হবে, প্রধানকে জবাব দিতে হবে, পঞ্চায়েত সদস্যকে বাদ দিয়ে কেন মোটিভেটারের মাধ্যমে শৌচাগার তৈরির জন্য ইট, বালি আমার এলাকায় নামানো হল? আমি জানতে পারলাম না কেন?’ প্রধান পূর্ণিমা দাস জবাবে বলেন, ‘নিয়ম মেনেই মোটিভেটার দিয়ে নামানো হয়েছে। কর্মীদেরকে এই সব দায়িত্ব দিলে পঞ্চায়েত দফতর তো ফাঁকা হয়ে যাবে। মানুষ পরিষেবা পাবে কী করে?’ এরপরেই দু’জনে পরস্পরকে তুই বলে সম্বোধন করতে শুরু করেন। শুরু হয়ে যায় চুলোচুলি-হাতাহাতি। সব দেখেশুনে থ হয়ে যান পঞ্চায়েত সদস্য, আধিকারিকেরা। তাঁরাই জানান, ঘরের ভিতরে এক প্রস্থ চুলোচুলির পরে বারান্দায় বেরিয়েও হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। রীতিমতো কান ধরে টানাটানি হচ্ছে দেখে সদস্যরা চিৎকার করতে শুরু করে দেন। হকচকিয়ে হুঁশ ফিরে পেয়ে পিছু হটেন দুই নেত্রীও। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যায়, বাণেশ্বরপুর গ্রামে ২১ জন উপভোক্তার শৌচাগার তৈরির জন্য নির্মাণ সামগ্রী পড়েছিল। তা নিয়েই গোলমাল শুরু।
প্রাক্তন প্রধান, বছর বিয়াল্লিশের মানোয়ারা বেগমের অভিযোগ, “শৌচাগারের মালপত্র আমাকে না জানিয়ে কেন গ্রামে পড়ছে, এই কথা বলতেই প্রধান আমাকে বেরিয়ে যেতে বলেন। আমার সম্মানে লাগে। তারপরেই উনি চেয়ার ছেড়ে উড়ে এসে আমার কানে চড় মারেন। চুল ধরে টানতে থাকেন। আমি গোটা ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছি।” পাল্টা অভিযোগে পঞ্চায়েত প্রধান, বছর বাইশের পূর্ণিমা দাসেরও। তিনি বলেন, “উনি আমাকে সভা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। কেন বেরোবো বলতেই উনি চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে বলেন, হাত ভেঙে দেব। তারপরেই পিছন দিক থেকে চুল ধরে আমাকে জাপটে মারধর শুরু করেন। মাটিতে ফেলে দেন।”
সব শুনে ভাতারের সিপিএম নেতা বামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “এরা চালাবে পঞ্চায়েত! কখনও তোলাবাজি নিয়ে গোলমাল করছে তো কখনও ক্ষমতা দখল নিয়ে পঞ্চায়েতের ভিতর মারপিট করছে।” ভাতারের তৃণমূল নেতা তথা ঘটনার সাক্ষী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “লজ্জাজনক ও দুঃখজনক ঘটনা। দলকে বিষয়টি জানানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy