Advertisement
E-Paper

ঝুলন্ত দেহ এসআইয়ের, অভিযুক্ত স্ত্রী

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার পূর্ব শিমলা গ্রামে বাড়ি তাপসবাবুর। বছর দু’য়েক আগে চাকরি পান তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫২
মৃত তাপস মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

মৃত তাপস মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

ভাড়া বাড়ির ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়নার ফাঁস লাগানো দেহ মিলেছে এক স্কুল পরিদর্শকের (প্রাথমিক)। তাপস মণ্ডল (২৯) নামে ওই যুবকের পরিবারের অভিযোগ, দাম্পত্যে সমস্যার জেরে তাঁদের ছেলেকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন পুত্রবধূ। পুলিশের দাবি, গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় স্ত্রীকে ‘হোয়াটসঅ্যাপে’ ছবি পাঠিয়েছিলেন ওই যুবক। যদিও অভিযুক্ত মহিলার সঙ্গে বহু চেষ্টাতেও এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। কথা বলতে চাননি তাঁর বাপেরবাড়ির কেউ।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার পূর্ব শিমলা গ্রামে বাড়ি তাপসবাবুর। বছর দু’য়েক আগে চাকরি পান তিনি। বর্তমানে মেমারির কলানবগ্রাম ও বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুল চক্রের দায়িত্বে ছিলেন। কর্মসূত্রেই ভাড়া থাকতেন মেমারি শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের রবীন্দ্রনগরে। দশ মাস আগে বিয়ে হলেও স্ত্রী বাদুড়িয়াতেই থাকতেন।

পুলিশ জানায়, মৃতের স্ত্রী বাদুড়িয়ার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। বিয়ের পরেও বেশির ভাগ বাপেরবাড়ি গোপালনগরেই থাকতেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোরে মেমারি এসেছিলেন ওই শিক্ষিকার বাবা-মা। বারবার তাপসবাবুর বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিয়ে সাড়া না পেয়ে তাঁরা যোগাযোগ করেন ব্লক অফিসে। সেখান থেকে তাপসবাবুর এক সহকর্মী ভজন ঘোষকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। ওই বাড়িতেই অন্য ঘরে ভাড়া থাকেন তিনি। ভজন ঘোষের দাবি, তিনিও বারবার ফোন করে, ডেকে সাড়া পাননি। শেষে কোনও রকমে জানালার পাল্লা খুলে দেখা যায়, ঝুলন্ত দেহ। পরে অবশ্য শিক্ষিকার বাবা-মাকে সেখানে দেখা যায়নি।

এ দিন সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে তাপসবাবুর বাবা তারকনাথ মণ্ডল দাবি করেছেন, ‘১০ মার্চ, ২০১৯-এ গোপালনগর থানার ধরমপুরের ওই মেয়েটির সঙ্গে দেখাশোনা করে বিয়ে হয় ছেলের। প্রায়ই বাপেরবাড়ি যেত বৌমা। সেখানেই বেশিটা থাকত। আমরা জানতে পারি, যে বৌমার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আছে। এ নিয়ে ছেলের সঙ্গেও প্রায়ই ফোনে ঝামেলা হত। এমনকি, বৌমা আমার ছেলেকে মরতে পর্যন্ত বলেছিল’। তাঁর দাবি, ‘‘শুক্রবার রাতে ছেলে বৌমাকে ফোন করে। খুব ঝগড়া হচ্ছিল।’’ তাপসবাবুর মায়ের দাবি, বিয়ের আগেই চেনাজানা ছিল তাপস ও ওই শিক্ষিকার। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই অশান্তি শুরু হয়। গত সপ্তাহে পুত্রবধূ তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন। তখনও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দেহের পাশে খাটে তাপসবাবুর মোবাইল ছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে গলায় দড়ি, পায়ের নীচে টুল নিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় গোটা চারেক ছবি স্ত্রীকে ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ পাঠিয়েছেন তিনি। পুলিশ জানায়, প্রথমে ১১টা ৫৭ মিনিটে ‘আমার মুখ দেখতে না চাইলে আর দেখতে হবে না’ বলে একটি মেসেজ পাঠানো হয়। ১২টা ১৯ মিনিটে পাঠানো হয় ছবিগুলি। রাত ২টো নাগাদ তা দেখেছিলেন ওই ঘটনা। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তির জেরে বা পারিবারিক কোনও গোলমালের জেরে এই ঘটনা।

এ দিন দেহ উদ্ধারের পরে, জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) নারায়ণচন্দ্র পাল, একাধিক স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারা থানায় যান। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন তাপসবাবু। দু’টি চক্রের দায়িত্বই খুব ভাল ভাবে সামলাতেন।’’

কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যা করার আগে নিজের ছবি ‘প্রিয়জন’কে পাঠাতে পারেন কেউ? বর্ধমানের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ দাঁয়ের বক্তব্য, ‘‘মারাত্মক ভাবে মানসিক চাপে ছিলেন উনি। যাঁর জন্য এই চাপ, তাঁকে কষ্ট দিতেই একদম শেষ মুহূর্তে ছবি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে মনে হচ্ছে। এর সঙ্গে কিছু মানসিক, পারিপার্শ্বিক চাপও ছিল, আমার মনে হয়।’’

Primary School SI Suicide Death Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy