Advertisement
০৯ মে ২০২৪

বিদ্যুৎ সংযোগ দরকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

সম্প্রতি আনন্দবাজারের কিছু পাঠকের মুখোমুখি হয়েছিলেন বারাবনির পাঁচগাছিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান মনোরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকাবাসীর নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় উঠল আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুশান্ত বণিক। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।সম্প্রতি আনন্দবাজারের কিছু পাঠকের মুখোমুখি হয়েছিলেন বারাবনির পাঁচগাছিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান মনোরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকাবাসীর নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় উঠল আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুশান্ত বণিক। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

সাফাই হয় না নিয়মিত, অভিযোগ বাসিন্দাদের।— শৈলেন সরকার

সাফাই হয় না নিয়মিত, অভিযোগ বাসিন্দাদের।— শৈলেন সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০১
Share: Save:

আমাদের এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির উপরে পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার বাসিন্দা নির্ভরশীল। কিন্তু কুকুের কামড়ানো ও সাপের ছোবলের ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশন মেলে না। বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েন। বাধ্য হয়ে চড়া দামে বাইরে থেকে কিনতে হয়। এ ব্যাপারে কি কোনও ব্যবস্থা হয়েছে?

শঙ্কর ঠাকুর পাঁচগাছিয়া

প্রধান: এই সমস্যা আমরা জানি। বাসিন্দাদের তরফে আগেও বহুবার আবেদন করা হয়েছে। তবে বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের এক্তিয়ারে পড়ে। আমরা আগেও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কর্তার কাছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কুকুের কামড়ানোর ইঞ্জেকশন মজুত রাখার আবেদন করেছি। কিন্তু ফল হচ্ছে না। এবার বিডিও-র মাধ্যমে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে তদ্বিরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্রে বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। প্রতিদিন শতাধিক রোগী আসেন। বিদ্যুৎ না থাকায় রোগী ও চিকিৎসক, সবাইকেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই সমস্যা মেটাতে কোনও পরিকল্পনা হয়েছে কি?

রাজু সিংহ নুনি মোড়

প্রধান: বিদ্যুৎহীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সকলেই সমস্যায় পড়ছেন, এ কথা ঠিক। আপনারা জানেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে পূর্ব রেলের একটি লাইন গিয়েছে। সেই লাইনের উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার আনার অনুমতি দিচ্ছেন না রেল কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে রেললাইনকে বাঁ দিকে রেখে দোমহানি হয়ে বিদ্যুৎ আনতে হলে প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেশি রাস্তা ঘুরিয়ে তার টেনে আনতে হবে। তার খরচ কয়েক গুণ বেশি। ফলে, কাজটি আটকে রয়েছে। বণ্টন সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররা স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করে খরচের হিসেব দিয়েছেন। আমরা ফের এক বার রেলের কাছে লাইন পেরিয়ে তার নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চাইব। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য ব্লক প্রশাসনের কাছেও আবেদন জানিয়েছি। রেলের সাহায্য পেলে ভাল। না হলে বেশি খরচ করে ঘুরপথেই তার টানা হবে।

যথেচ্ছ পলিথিন ব্যবহাের এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে। বিপর্যস্ত হচ্ছে নিকাশি ও সাফাই ব্যবস্থা। এলাকায় সাধারণ শৌচাগারগুলিতে জলের খুব সমস্যা রয়েছে। ফলে, নাগরিকেরা সেগুলি ব্যবহার করতে পারছেন না। যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ সব বিষয়ে কিছু ব্যবস্থা নিন।

মানস দাস ব্যাঙ্ক কলোনি মোড়

প্রধান: পলিথিন ব্যবহারে এলাকায় দূষণের মাত্রা বাড়ছে, এটা নতুন নয়। খেয়াল করলেই দেখবেন, পঞ্চায়েতের জনবহুল জায়গাগুলিতে আমরা পোস্টার, ব্যানার দিয়ে পলিথিন ব্যবহার বন্ধের আবেদন করেছি। কিন্তু আমাদের সেই পরিকাঠামো নেই যে প্রত্যেক এলাকায় পঞ্চায়েতের কর্মীরা গিয়ে পলিথিন ধরপাকড়ে অভিযান চালাবেন। বাসিন্দারা সচেতন না হলে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হবে না। তবু ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আবার পদক্ষেপ করব। সরকারের নির্দেশে আমরা এলাকায় সাধারণ শৌচাগার করেছি। কিন্তু আপনাদের অভিযোগ ঠিক, জলের অভাবে সেগুলি ঠিক মতো ব্যবহার করতে পারছেন না বাসিন্দারা। বিষয়টি ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছি। আশা করি সমস্যা মিটে যাবে।

আমাদের এলাকায় প্রায় সব ঋতুতেই মশার উপদ্রবে টিকতে পারি না। বর্ষায় সমস্যা আরও বাড়ে। নিয়মিত মশা মারার ওষুধ ছড়ালে উপকার হয়।

রবিন হাজরা মনোহরবহাল

প্রধান: এই সমস্যার কথা শুধু আপনারা নয়, নানা জায়গার মানুষই জানিয়েছেন। আমাদের আর্থিক ক্ষমতা সীমিত। তবে আমরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। বিভিন্ন এলাকায় মশা মারার ওষুধ ছড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে। বর্ষায় যেহেতু সমস্যা বাড়ে তাই তখন বেশি করে ছড়ানো হয়। আমরা ঠিক করেছি, পঞ্চায়েত এলাকাকে ভাগ করে মাসে অন্তত এক বার কীটনাশক ছড়ানো হবে।

এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা প্রকট। তা মেটাতে ব্যবস্থা নিন। একই সঙ্গে এলাকায় একটি শিশু উদ্যান নির্মাণের আবেদন জানাচ্ছি।

মিনু দেবনাথ সেনর‌্যালে বি ব্লক

প্রধান: পানীয় জলের সমস্যা বেশি দিন থাকবে না। আপনাদের এলাকায় পাইপলাইন বসানো হয়ে গিয়েছে। কিছু কারিগরি কাজ বাকি আছে। খুব দ্রুত পানীয় জল সরবরাহ হবে। শিশু উদ্যানের প্রস্তাব আগেও পেয়েছি। আমরাও এর প্রয়োজনীয়তা বুঝেছি। ব্লক প্রশাসনের কাছে একটি শিশু উদ্যান তৈরির প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি গৃহীত হবে।

আমাদের এলাকায় নিকাশির সমস্যা আছে। নিয়মিত নর্দমা সাফাই হয় না। রাস্তারও আলো নেই। ব্যবস্থা নিলে খুব সুবিধে হয়।

তরুলতা দত্ত ইসিএল আবাসন এলাকা

প্রধান: আপনাদের এলাকার এই সমস্যা আজকের নয়। কিন্তু আমরা তা সমাধান করতে পারব না। কারণ, অঞ্চলটি কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষের অধীন। তাঁদেরই উদ্যোগী হতে হবে। আমরা নিকাশির কাজ করতে চাইলে খনি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি নিতে হবে। চেয়েছিলাম, কিন্তু পাইনি। তাই হাত গুটিয়ে থাকতে হয়েছে। রাস্তায় আলো না থাকার সমস্যা নিয়েও আমাদের একই বক্তব্য।

আমাদের এলাকায় সাফাইয়ের সমস্যা রয়েছে। পঞ্চায়েতের সাফাই কর্মীরা নিয়মিত এলাকায় আসেন না। রাস্তাতেও আলো দরকার।

সন্তোষ মণ্ডল সেনর‌্যালে

প্রধান: রাস্তায় আলো লাগানোর ক্ষেত্রে আমরা সৌর আলো ব্যবহারে জোর দিচ্ছি। ব্লকের তরফে আমাদের পঞ্চায়েতে ২০টি সৌর আলো পাঠানো হয়েছে। বি-ব্লকে কয়েকটি লাগানোও হয়েছে। আপনার কথা আমি লিখে নিলাম। সেখানে কতগুলি সৌর আলো লাগাতে হবে, বাস্তুকার পাঠিয়ে তার হিসেব করে নেব। কথা দিচ্ছি, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পঞ্চায়েত এলাকায় সাফাইয়ের সমস্যা নিয়ে আমরাও চিন্তিত। দ্রুত উপায় বের করার চেষ্টা হচ্ছে।

আমাদের এলাকায় কয়েকশো মানুষ বাস করেন। প্রতি বছর ভোটও দেন। কিন্তু এই এলাকায় রাস্তা, পানীয় জল, বিদ্যুৎ কোনও কিছুই নেই। বহু বার আপনাদের দ্বারস্থ হয়েছি। ফল হয়নি। কিছু উন্নয়ন করুন।

অরুণ বাউড়ি বাউড়ি পাড়া

প্রধান: আপনাদের এলাকার গভীর সমস্যার কথা আমরা জানি। এলাকারই কিছু বাসিন্দাদের বাধায় আমরা কাজ করতে পারছি না। আপনাদের এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার প্রায় তিরিশ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছিল। খুঁটি পোঁতার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু জমির একাংশের উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার টানা হচ্ছে অভিযোগ তুলে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা বাধা দিয়েছেন। তাই কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সরকারের তরফে যে আর্থিক অনুমোদন এসেছিল তা-ও ফিরে গিয়েছে। জলের পাইপলাইন বসাতে গিয়েও একই সমস্যায় পড়েছি আমরা। তবে আমরা জমি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। আশা করি, দ্রুত সমাধান করে ফেলতে পারব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Electricity Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE