Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভরাট পুকুর ফেরতের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট

চোখের সামনে পুকুর ভরাট হতে দেখে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সরকারি নথিতেও ‘পুকুর-চুরি’ হয়েছিল বলে তাঁদের অভিযোগ। দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে সেই পুকুর ফেরতের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।

বাদামতলা এলাকার এই পুকুর নিয়েই মামলা হয়েছিল। নিজস্ব চিত্র।

বাদামতলা এলাকার এই পুকুর নিয়েই মামলা হয়েছিল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৪
Share: Save:

চোখের সামনে পুকুর ভরাট হতে দেখে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সরকারি নথিতেও ‘পুকুর-চুরি’ হয়েছিল বলে তাঁদের অভিযোগ। দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে সেই পুকুর ফেরতের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের তরফে মৎস্য দফতরকে নির্দেশ দিয়ে জানানো হয়েছে, ভরাট হওয়া পুকুরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। মৎস্য দফতরও যাঁদের বিরুদ্ধে ভরাট করার অভিযোগ তাঁদের নোটিস পাঠিয়ে ওই জমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান শহরের বাদামতলায় চৌধুরী চিড়ে মিলের কাছে রামকৃষ্ণ পল্লিতে সাড়ে দশ কাঠা জুড়ে একটি পুকুর ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা দৈনন্দিন প্রয়োজনে পুকুরটি ব্যবহার করতেন। নানা কাজে ব্যবহার হত পুকুর পাড়ও। অভিযোগ, ২০১১ সাল থেকে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ প্রথম থেকেই বাধা দিতে শুরু করেন। কিন্তু টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাতে ট্রাক্টরে করে বালি ও মাটি ফেলে পুকুর বোজানো হয় বলে তাঁদের অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দারা অসহায় হয়ে ‘বর্ধমান পৌর নাগরিক কল্যাণ কমিটি’কে চিঠি লেখেন। ওই চিঠির ভিত্তিতে পাড়ার বাসিন্দাদের নিয়ে লড়াইয়ে নামেন ওই কমিটির সম্পাদক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর চিঠির ভিত্তিতেই ২০১১ সালের ৫ নভেম্বর মৎস্য দফতর তদন্তে নেমে জানতে পারে, আইন ভেঙে পুকুরের একটা অংশ বালি দিয়ে বোজানো হচ্ছে। পুকুর বোজানো বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়।

কিন্তু এরপরেও ভরাট করা বন্ধ হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, বেশ কয়েক মাস পরে টিনের বেড়া সরিয়ে পুকুরের চারপাশে পাঁচিল তোলা হয়। শুরু হয় জোরকদমে পুকুর ভরাট। অভিযোগ পেয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, মৎস্য দফতর সরেজমিন তদন্তে আসে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এফআইআর করে। তারপরেও পুকুর ভরাট বন্ধ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষচন্দ্র সোম, তাপস পালদের অভিযোগ, ‘‘বিভিন্ন দফতরে শুধু চিঠি চালাচালি হয়েছে। আমরা আশ্বাসের পর আশ্বাস পেয়েছি। তার ফাঁকেই চোখের সামনে পুকুরটা বুজে গেল!!’’ তাঁদের দাবি, পুকুরের মালিকদের একটা অংশ দলিল জাল করে পুকুরটির জমির চরিত্র বদল করে ফেলেছিল। ফলে ভূমি দফতর পুকুর ভরাট হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেও নথিতে দেখা যায় তা বাস্তু জমি। মালিকরা ওই জমি সাত জনকে বিক্রিও করে দেয়।

আর কোনও উপায় না দেখে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বাসিন্দারা। সুশান্তবাবু-সহ কয়েকজন হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চে জনস্বার্থের মামলা করেন। প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তা, পুকুরের মালিক-সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপরেই পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। একই সঙ্গে মৎস্য দফতরকে ছ’সপ্তাহের মধ্যে নির্দেশ কতটা কার্যকর হল তার রিপোর্টও জমা দিতে বলেছেন বিচারক।

বর্ধমানের মীন ভবনের সহ-অধিকর্তা দেবাশিস পালুই বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে।’’ পুকুরের মালিকদের কেউ অবশ্য মুখ খুলতে রাজি হননি।

শহরের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিবির পুকুর বুজিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। সেখানেও রুখে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সুশান্তবাবু বলেন, “বিবির পুকুরটিকেও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মালিককে নির্দেশ দিয়েছে মীন ভবন। নির্দেশের প্রেক্ষিতে বর্ধমান পুরসভা মালিককে চিঠি দিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pond High court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE