Advertisement
E-Paper

টিভিতে নাম ভেসে উঠতেই চওড়া হাসি

আসানসোলের ঊষাগ্রামের আটাচাকি গলিতে অ্যাবসেস্টসের ছাউনির ছোট দু’কামরার বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে রোহিত। মাধ্যমিকে সে রাজ্যে ষষ্ঠ হয়েছিল। রোহিত এ দিন বলে, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক অনেক কঠিন, জানতাম। তাই দ্বিগুণ পরিশ্রম করেছি। ফলও পেলাম। তবে এতটা ভাল ফল হবে ভাবিনি!’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০০:৩২
সাফল্য: সহপাঠীদের কাঁধে আসানসোলের রোহিত কুমার। নিজস্ব চিত্র

সাফল্য: সহপাঠীদের কাঁধে আসানসোলের রোহিত কুমার। নিজস্ব চিত্র

মাধ্যমিকেও ঠাঁই হয়েছিল মেধা তালিকায়। তাই আশা ছিল এ বারও। কিন্তু আগের ফল যে টপকে যাবে, ভাবেনি আসানসোল ওল্ড স্টেশন হাইস্কুলের ছাত্র রোহিত কুমার। ৪৮৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধাতালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে সে। সেই স্থানে রয়েছে আসানসোলেরই আর এক ছাত্র, ঊষাগ্রাম বয়েজ হাইস্কুলের শমীক দত্ত। মেধাতালিকায় জায়গা না পেলেও ভাল ফল করেছে দুর্গাপুরের বিধানচন্দ্র ইনস্টিটিউশন ফর গার্লসের ছাত্রী ঈশিতা নন্দী ও বর্ধমান টাউন স্কুলের দ্বৈপায়ন দুবে। তারা পেয়েছে ৪৭৯।

আসানসোলের ঊষাগ্রামের আটাচাকি গলিতে অ্যাবসেস্টসের ছাউনির ছোট দু’কামরার বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে রোহিত। মাধ্যমিকে সে রাজ্যে ষষ্ঠ হয়েছিল। রোহিত এ দিন বলে, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক অনেক কঠিন, জানতাম। তাই দ্বিগুণ পরিশ্রম করেছি। ফলও পেলাম। তবে এতটা ভাল ফল হবে ভাবিনি!’’ স্থানীয় এক চিকিৎসেক চেম্বারে সামান্য মাস মাইনেতে কাজ করেন রোহিতের বাবা অসীমবাবু। সংসার চালাতেই হিমসিম হতে হয়। অভাবের সংসার থেকে ছেলে ভাল ফল করায় এ দিন বারবার কেঁদে ফেলেন তিনি। অসীমবাবু জানান, মাধ্যমিকে ছেলে ভাল করার পরে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনায় সব রকম ভাবে সাহায্য করেছেন স্কুলের শিক্ষকেরা। রোহিত ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। এ বছর জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাও দিয়েছে। অসীমবাবু বলেন, ‘‘আমি চাই ছেলে আরও শিক্ষিত হোক। কিন্তু কী ভাবে খরচ সামাল দেব, জানি না!’’ তবে রোহিতের স্কুলের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সাউয়ের আশ্বাস, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও নানা প্রয়োজনে রোহিতের পাশে থাকবেন তাঁরা।

শমীক দত্ত।

আসানসোলের মহিশীলা কলোনি এলাকার বাসিন্দা শমীক সোমবার সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি। মঙ্গলবার সকালে টেলিভিশনের সামনে বসেছিল দুরুদুরু বুকে। কিন্তু পর্দায় নাম ভেসে উঠতেই মুখে চওড়া হাসি। ৪৮৫ নম্বর পেয়ে সে-ও রাজ্যে পঞ্চম হয়েছে। শমীক বলে, ‘‘মেধাতালিকায় জায়গা হবে, কখনও ভাবিনি!’’ কমার্সের ছাত্র শমীক বড় হয়ে চার্টার্ড ফার্ম গড়তে চায়। এ বার সেই প্রস্তুতি শুরু করতে হবে, জানায় সে। সেই সঙ্গে গানের চর্চাও চালিয়ে যেতে চায়। তার কথায়, ‘‘রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলে মনে আলাদা জোর আসে।’’ শমীকের বাবা কৌশিক দত্ত গৃহশিক্ষকতা করেন। তিনি বলেন, ‘‘ছেলের সাফল্যে আমি অভিভূত।’’

দুর্গাপুরের বিধাননগরের সেক্টর ওয়ানের বাসিন্দা ঈশিতা মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে অমৃতা বিদ্যালয়ে। একাদশ শ্রেণিতে বিধানচন্দ্র ইনস্টিটিউশন ফর গার্লসে ভর্তি হয়। কত্থক নাচে পারদর্শী ঈশিতা জানায়, দিনে ৮-৯ ঘণ্টা পড়াশোনা করত সে। অল্পের জন্য মেধাতালিকায় নাম না আসায় সামান্য হতাশ। তার বাবা বিক্রমবাবু আসানসোলের বিসি কলেজে কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষক। বড় হয়ে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে চাওয়া ঈশিতা এ বার দুর্গাপুরেরই কোনও কলেজে অ্যাকাউন্টেন্সি নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়।

ঈশিতা নন্দী।

পূর্ব বর্ধমানের দ্বৈপায়ন দুবেও অল্পের জন্য মেধাতালিকায় ঠাঁই পায়নি। বর্ধমান টাউন স্কুলের ওই ছাত্রও পেয়েছে ৪৭৯। বাবা দেবব্রত দুবে কুড়মুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট। দ্বৈপায়ন জানায়, আরও কিছু নম্বর বেশি পাওয়ার আশা ছিল তার। দেবব্রতবাবু জানান, দিনে ১৪ ঘণ্টা পড়াশোনা নিয়ে থাকত ছেলে। মাঝেমধ্যে ক্রিকেট খেলা দেখতে ভালবাসত। দ্বৈপায়ন জানায়, ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চায় সে।

কালনার ছোট দেউড়ি পাড়ার রিয়া গাইন অবশ্য পড়াশোনার সঙ্গে আঁকা, গান গাওয়া, গল্পের বই পড়া চালিয়ে গিয়েছে। হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী ৪৭১ পেয়েছে। বাবা আলাউদ্দিন গাইন অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক। তবে পড়াশোনার ব্যাপারে মেয়েকে বেশি সহযোগিতা করতেন মা নাসরিন বেগম। রিয়া বলে, ‘‘সরকারি আমলা হওয়া আমার লক্ষ্য।’’

Higher Secondary Results 2017 Merit List উচ্চ মাধ্যমিক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy