সংকীর্ণ আন্ডারপাসের দু’পাশে জমে পাথর-বালি। ভেদিয়ায় বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
গাড়ি থেকে বালি-পাথর পড়ে রাস্তা আটকে যায়। আবার নিকাশির ব্যবস্থা না থাকায় এক পশলা বৃষ্টিতেই জল জমে রাস্তায়। এই পরিস্থিতিতে আউশগ্রামের ভেদিয়ার কাছে রেল লাইনের নীচে সংকীর্ণ আন্ডারপাসে নিত্য যানজট লেগেই থাকে। যাত্রীরা জানান, ভোগান্তিই দস্তুর ওই রাস্তার। তবে রেল ও রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে ওই এাকায় উড়ালপুল তৈরি করে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
ভেদিয়ার কাছে এই একফুঁকোর (আন্ডারপাস) উপরে রয়েছে পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের সাহেবগঞ্জ লুপ লাইন। আন্ডারপাসটি মেরেকেটে আট-ন’ফুট চওড়া। উচ্চতা ১৫ ফুট। অথচ কলকাতা থেকে বোলপুর যাতায়াতের অন্যতম ভরসা বর্ধমান-সিউড়ি ২বি জাতীয় সড়কের বেশির ভাগ গাড়ি ওই ‘এক ফুঁকো’ দিয়ে দিনভর যাতায়াত করে। চলে কলকাতা-বোলপুর বাস, ট্রাকও। এ ছাড়া পাঁচামি থেকে পাথরের লরি ও বীরভূমের বিভিন্ন এলাকা থেকে বালির গাড়িও যাতায়াত করে। এ ছাড়াও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসতে গেলেও বীরভূমের একটা বড় এলাকার মানুষদের ভরসা এই রাস্তাটিই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মূলত তিনটি কারণে যানজট হয়। প্রথমত, গভীর রাতে অতিরিক্ত পাথর বা বালিবোঝাই গাড়ি, ট্রাকগুলি রাস্তার উপর থাকা রেলের তিন কাঠিতে আটকে যায়। ফলে রাস্তার উপরে পাথর, বালি পড়ে যায়। আবার মূল রাস্তা থেকে আন্ডারপাসটি নিচু। ফলে আন্ডারপাস থেকে রাস্তায় উঠতে গিয়ে পাথর, বালিতে আটকে যায় ছোট ও মাঝারি গাড়ি। তখনই বিপত্তি ঘটে। দ্বিতীয়ত, নিকাশির ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই আন্ডারপাসটিতে জল জমে। রাস্তা থেকে নিচু হওয়ায় লাগোয়া এলাকার খেতজমির জলও আন্ডারপাসে জমা হয়। এর জেরে অনেক সময়েই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ খারাপ হচ্ছে বলে দাবি চালকদের। তৃতীয়ত, পাথর বা বালিবোঝাই ট্রাক চালকদের পক্ষে অনেক সময়েই আন্ডারপাসের দু’ধারে জায়গা কতখানি, তা আন্দাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে সংকীর্ণ আন্ডারপাসে ট্রাক আটকে যায়। ওই এলাকার এক গাড়ির চালকের কথায়, ‘‘ওখান দিয়ে গেলে মনে হয়, যেন মৃত্যু ফাঁদ পাতা রয়েছে! একটু নড়চড় হলেই গেল!’’
এই পরিস্থিতিতে মাঝেসাঝেই দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে জানান বাসিন্দারা। পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, গত দু’মাসে আন্ডারপাসের উপরে যাওয়া ট্রেন লাইনে এক সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ মোট ছ’জন মারা গিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ মাঝি, উন্নতি সাঁতরাদের দাবি, ‘‘নীচে আন্ডারপাস, উপরে রেল লাইন—এক দিক থেকে অন্য দিকে যেতে গেলে মৃত্যু অবধারিত।” তা ছাড়া আন্ডারপাসে গাড়ি থাকলে এক জন মানুষের চলাচলও দায় হয়ে পড়ে। বাসিন্দারা জানান, সপ্তাহের মধ্যে শনি ও রবিবার সমস্যা আরও জটিল হয়ে যায়। কারণ ওই দু’দিনে পর্যটকদের গাড়ির চাপ তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকে। তার মধ্যে আন্ডারপাসে জল জমা থাকলে বা পাথর পড়ে থাকলে ঘণ্টাখানেক ধরে গাড়ি আটকে থাকে। যানজট হলে এক দিকের গাড়ি ছাড়ার পরে আরেক দিকের গাড়ি ছাড়ে। তার মধ্যেও অনেক সময় আন্ডারপাসের নীচে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় ঠাই দাঁড়িয়ে থাকা আর উপায় থাকে না।
স্থায়ী ভাবে ওই এলাকায় পুলিশ না থাকায় সমস্যা আরও বাড়ে বলে বাসিন্দাদের দাবি। যদিও পুলিশের দাবি, আন্ডারপাসের দু’দিকে সিভিক ভলান্টিয়ার থাকেন। পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই রকম পরিস্থিতিতে এক বার যানজট ছাড়ানোর জন্য এক সিভিক ভালন্টিয়ার লাইন পার হচ্ছিলেন। তখনই ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় তাঁর। ওই আন্ডারপাসের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মাঝাসাঝেই ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে বলে দাবি বাসিন্দা ও যাত্রীদের। যদিও পুলিশের দাবি, কয়েক মাস ধরে ওই এলাকায় রাতভর টহল দেওয়ায় ছিনতাই বন্ধ করা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy