ফাটল ধরেছে বাড়িতে। কুলটির সাঁকতোড়িয়ায় শিশুবাগান এলাকায়। ছবি: পাপন চৌধুরী
অহরহ ধসের বিপদের মুখে পড়তে হয় ওঁদের। এই এলাকায় বসবাসের ভয়াবহতার কথাও জানা। তা সত্ত্বেও খনি লাগোয়া অঞ্চলের বাসিন্দারা অন্যত্র উঠে যান না কেন, সে প্রশ্ন ওঠে স্বাভাবিক ভাবেই। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ।
প্রথমত, কয়েক দশক ধরে বংশ পরম্পরায় ভিটেয় বাস লক্ষাধিক বাসিন্দার। অবৈধ খননই হোক বা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কয়লা তোলা, যে কোনও কারণে বিস্তীর্ণ এলাকা ধসপ্রবণ হয়ে উঠেছে। সালানপুরের সামডি, ডাবর, পাহারগোড়া, কুলটির ডিসেরগড়, সাঁকতোড়িয়া, বড়িড়া, দামাগড়িয়া, অন্ডালের পরাশকোল, জামবাদ, বারাবনির রসুনপুর, জামুড়িয়ার নন্ডি, সাতগ্রাম, বেনালি-সহ পশ্চিম বর্ধমানের প্রায় ১৪৬টি অঞ্চল এই বিপজ্জনক অবস্থায় তালিকায় রয়েছে। খনি রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হওয়ার পরে এ সব অঞ্চলের বাসিন্দাদের সমস্ত দায়িত্ব কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের উপরে বর্তেছে। বাসিন্দারা দাবি তুলেছেন, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়েই তাঁদের সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু পুনর্বাসন নিয়ে চলছে দীর্ঘ টানাপড়েন। ধস কবলিতদের পুনর্বাসনে প্রায় ২৯ হাজার বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্যের আবাসন দফতরের তত্ত্বাবধানে সেগুলি তৈরি করছে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। বারাবনির দাসকেয়ারি ও জামুড়িয়ার বাহাদুরপুরে প্রায় পাঁচ হাজার বাড়ি তৈরি হয়েছে। তবে এডিডিএ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ইসিএলের তরফে জমি ও টাকার জোগান ঠিক মতো না পাওয়ায় বাড়ি তৈরির কাজ থমকে যাচ্ছে। যদিও ইসিএলের ডিরেক্টর(পার্সোনেল) আহুতি সুঁইয়ের দাবি, ‘‘পুনর্বাসনের কাজে আমরা সব রকম সহযোগিতা করছি।’’ পুনর্বাসন না মেলায় এলাকা ছাড়তে পারছেন না বাসিন্দারা।
দ্বিতীয়ত, অপেক্ষাকৃত দরিদ্র বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক সমস্যা একটি বড় কারণ। ফাঁকা জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বেশ কিছু বসতি গড়ে উঠেছে। জামিগুলি খনি সংস্থার হলেও, সেখানে এখনও খননকাজ করেনি সংস্থা। এ সব অঞ্চলে কয়েক হাত মাটি খুঁড়লেই কয়লা উঠে আসে।বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বহু অবৈধ খাদান খুঁড়ে, মাটির তলায় সুড়ঙ্গ বানিয়ে কয়লা তোলার কারবার চালায় বেআইনি কারবারিরা। এলাকার কিছু বাসিন্দাও রোজগারের তাগিদে দৈনিক মজুরির বিনিময়ে সে সব খাদানে কয়লা কাটেন। বিপজ্জনক অবস্থা সত্ত্বেও আয়ের আশায় বাস করতে বাধ্য হন অনেকে।
ওই বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না কেন? জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, বেআইনি ভাবে কয়লা কাটার কাজে যুক্তদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য একশো দিনের প্রকল্পে কাজ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, অবৈধ খাদানে কাজ করে এক জন বাসিন্দা দিনে ন্যূনতম ৫০০ টাকা রোজগার করতে পারেন। কিন্তু একশো দিনের কাজে দৈনিক মজুরি তার চেয়ে অনেকটাই কম।
ফলে, বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। বেআইনি খননও বন্ধ হচ্ছে না পুরোপুরি। আর সে নিয়ে চলছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy