Advertisement
E-Paper

বাবার মুখাগ্নি করে পরের দিন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন মন্তেশ্বরের স্বর্ণাভ! পরীক্ষার্থীকে কুর্নিশ সকলের

সাগরবালা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র স্বর্নাভ চট্টোপাধ্যায়। শনিবার ওই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বাবাকে হারিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫ ০০:২৮
বাবার অন্তিম সৎকার সেরে পরীক্ষার হলে স্বর্ণাভ চট্টোপাধ্যায়।

বাবার অন্তিম সৎকার সেরে পরীক্ষার হলে স্বর্ণাভ চট্টোপাধ্যায়।

পরনে সুতির সাদা ধুতি। গায়েও এক খণ্ড সাদা কাপড়। ওই ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে দেখে খানিক থমকেই গিয়েছিলেন অন্য পরীক্ষার্থীরা। দ্রুত তাঁকে বসার জায়গা দেখিয়ে দেন এক পরীক্ষক। জানা গেল, আগের দিনই বাবার মুখাগ্নি করেছেন তিনি। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পরীক্ষায় বসছেন এ বারই। বর্ধমানের মন্তেশ্বরের ছেলে স্বর্ণাভ চট্টোপাধ্যায়ের এমন মানসিক দৃঢ়তাকে শিক্ষকেরা কুর্নিশ জানিয়েছেন। সমবেদনা জানান সহপাঠীরা।

এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী স্বর্ণাভ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর গ্রামে। সাগরবালা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রটির বাবা মলয় চট্টোপাধ্যায় কলকাতার একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কয়েক দিন আগে ‘সেরিব্রাল স্ট্রোক’-এ আক্রান্ত হন। তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু শনিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মলয় মারা যান ।

ছেলে তখন পড়াশোনা করছিলেন। গভীর রাতে বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে বইটা খানিক ক্ষণের জন্য বন্ধ করে মাকে সামলাতে ওঠেন। স্বামীর মৃত্যুশোকে বিহ্বল মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলের কথা ভেবে নিজেকে সামলান।

রবিবার দুপুরে নবদ্বীপ শ্মশানঘাটে মলয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। বাবার মুখাগ্নি করেন স্বর্ণাভ। চিরতরে বাবাকে হারানোর শোকের মধ্যেই বছর আঠারোর ছেলেটি সিদ্ধান্ত নেন এ বারই পরীক্ষা দেবেন। বাবার স্বপ্নপূরণের জন্য নিজেকে মানসিক ভাবে শক্ত করেন। বাবার মুখাগ্নি সেরে বাড়িতে ফিরে শোকের মধ্যেই বইয়ে মুখ গুঁজে দিয়েছিলেন। সকালে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যান পরীক্ষাকেন্দ্রে।

সোমবার কাছা দিয়ে সাদা ধুতি পরে মালডাঙার আরএম ইনস্টিটিউশনে বাংলা পরীক্ষা দিয়েছেন স্বর্ণাভ। পরীক্ষা শেষে বাইরে বেরিয়ে বললেন, “ভাল হয়েছে পরীক্ষা। কথা ছিল, বাবা আমায় পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে আসবে। হল না।” স্বর্ণাভর সংযোজন, “আমি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করব, এই স্বপ্ন দেখত বাবা। বলেছিল, কলকাতার নামী কলেজে আমাকে ভর্তি করাবে। বাবা আজ নেই। তার স্বপ্নপূরণ তো আমাকেই করতে হবে।”

স্বর্ণাভর মা মৌসুমি চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন,“ও ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। সে জন্য ছেলে লকে নিয়ে স্বামীর অনেক স্বপ্ন ছিল। ছোট থেকে বাবার হাত ধরেই ছেলে পরীক্ষা দিতে যেত। এ বার বাবাকে ছাড়াই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যেতে হল। আসলে এটাই বড় পরীক্ষা।’’

Bardhaman Higher Secondary Exam 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy