Advertisement
E-Paper

ফুটবলের ফিকে হওয়া স্মৃতি ফেরাবে উমাপতির মূর্তি

১৮৯৮-র ৮ ফেব্রুয়ারি জন্ম হয় উমাপতির। শৈশব গ্রামে কাটলেও পরে পরিবারের সঙ্গে তিনি চলে যান বিহারের কিষানগঞ্জে। তাঁর বাবা রজনীকান্ত কুমার ছিলেন ব্যারিস্টার।

চা গ্ৰামে এখানে বসানো হবে উমাপতি কুমারের মূর্তি।

চা গ্ৰামে এখানে বসানো হবে উমাপতি কুমারের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০৫
Share
Save

তাঁর থ্রু পাস ছিল বিখ্যাত। পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে ভক্তেরা তাঁকে ‘বল আর্টিস্ট’ আখ্যা দিয়েছিলেন। দীর্ঘসময় তিনি খেলেছেন দেশ এবং মোহনবাগানের হয়ে। অধিনায়কত্বও করেছেন। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত প্রিয় ক্লাব মোহনবাগানের ফুটবল প্রশাসনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। বিখ্যাত এই ফুটবলার উমাপতি কুমার এত দিন ব্রাত্য ছিলেন তাঁর নিজের জন্মস্থান কালনা ২ ব্লকে চা গ্রামে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ১২৭ তম জন্মদিনে উমাপতির আবক্ষ মূর্তি বসবে গ্রামে। মূর্তিটি গড়েছেন কৃষ্ণনগরের গৌতম পাল।

১৮৯৮-র ৮ ফেব্রুয়ারি জন্ম হয় উমাপতির। শৈশব গ্রামে কাটলেও পরে পরিবারের সঙ্গে তিনি চলে যান বিহারের কিষানগঞ্জে। তাঁর বাবা রজনীকান্ত কুমার ছিলেন ব্যারিস্টার। ছোট বেলা থেকেই উমাপতির নেশা ছিল ফুটবল। খেলতেন ফরোয়ার্ডে। ১৯১৬-১৯৩৬ পর্যন্ত তিনি খেলেন মোহনবাগানে। ছ’বার কোচবিহার ট্রফি-সহ বহু ট্রফি উপহার দেন দলকে। ভারতের জাতীয় দলে তিনি খেলেন ১৯২৩-১৯৩৬ পর্যন্ত।খেলা ছাড়ার পরে মোহনবাগান ক্লাবের সম্পাদক, সাধারন সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সহ-সভাপতির মতো বেশ কয়েকটি পদের দায়িত্ব সামলেছেন উমাপতি। ক্লাবের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে ছিলেন টানা ৭৫ বছর। ১৯৯২-র ২০ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক সময়ে চা গ্রামে প্রচুর সম্পত্তির মালিক ছিল কুমার পরিবার। কুলটি-কৃষ্ণপুর গ্রামে গাঙ্গুর নদীতে সেতু, ওমরপুর গ্রামে বেহুলা নদীতে সেতু, বাদলা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, চাগ্রামে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমিদানের মতো সামাজিক কাজেও অবদান ছিল এই পরিবারের। এখন আর এই পরিবারের হাতে সম্পত্তি কিছু নেই। গ্রামবাসী জানান, এক সময় জাঁকজমক করে কুমার বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। উমাপতির সঙ্গে কলকাতা থেকে আসতেন ফুটবল তারকারা। এখন পুজো বাড়িটির মালিক স্থানীয় এক বাসিন্দা।তিনি পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন।

গ্রামে ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছিল কুমার পরিবারের স্মৃতি। কয়েক মাস আগে উমাপতির স্মৃতি ধরে রাখতে এগিয়ে আসেন এক দল মানুষ। তৈরি হয় উমাপতি স্মৃতিরক্ষা কমিটি। কমিটি উমাপতির আবক্ষ মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা করে। এলাকার একটি ক্লাবের সামনে তৈরি হয় সবুজ মেরুন বেদি। তাতে লাগানো হয় উমাপতির নামফলক। স্মৃতিরক্ষা কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার বেদির উপরে বসানো মূর্তিটির উন্মোচন করবেন মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত।চা গ্রাম থেকে কিছু দূরে ইছাপুর শ্রী গদাধর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সে দিন ফুটবল ম্যাচ হবে। সেখানে মোহনবাগান এবং জাতীয় দলে খেলা শিশির ঘোষ, স্বরূপ দাস, তুষার রক্ষিত, অমিত ভদ্র, দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীর ঘোষ, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতো এক সময়ের ময়দান কাঁপানো এক ঝাঁক ফুটবলার মুখোমুখি হবেন কালনা ২ ব্লক একাদশের। হাজির থাকবেন উমাপতির পরিবারের সদস্যেরাও।

উমাপতি কুমার স্মৃতিরক্ষা কমিটির সম্পাদক প্রণব রায় বলেন, ‘‘চা গ্রামে বহু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে উমাপতি কুমারের। নতুন প্রজন্ম যাতে তাঁকে ভুলে না যায় তার জন্যই এই উদ্যোগ। একটি সংগ্রহশালা তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।’’ চা গ্রামের বাসিন্দা তথা স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি শ্রীমন্ত ঘোষ বলেন, ‘‘ছোটবেলায় দেখেছি, উমাপতির সঙ্গে বাড়ির পুজোয় আসতেন শৈলেন মান্না, চুনি গোস্বামী, তুলসীদাস বলরামের মতো খেলোয়াড়দের। গ্রামের বিখ্যাত এই মানুষটির স্মৃতিতে শিশুউদ্যান, সংগ্রহশালা, গ্রন্থগার তৈরি করতে চাই। গ্রামের মানুষ এই উদ্যোগে সঙ্গে রয়েছেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kalna Mohun Bagan

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}