খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র, খুন হওয়ার সময় সুমিতা ঘোষের পোশাক কী ছিল, এ সব জানতে এবং দ্বিতীয় ট্রলি ব্যাগের সন্ধান পেতে মধ্যমগ্রামকাণ্ডে ধৃত ফাল্গুনী এবং আরতি ঘোষকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। কিন্তু ফাল্গুনী বার বার বয়ান বদল করছেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে খবর। ধৃত মা-মেয়েকে মুখোমুখি বসিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু মেয়ে ফাল্গুনীর বিভিন্ন বয়ান বিভ্রান্তিমূলক মনে করছেন তদন্তকারীরা। গত মঙ্গলবার ঘটনার পুনর্নির্মাণ পর্বে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফাল্গুনীর মা। পুলিশ সূত্রের খবর, তখন মায়ের মুখে এবং মাথায় জলের ছিটে দেন ফাল্গুনী। কিন্তু এক ঝটকায় মেয়েকে নাকি সরিয়ে দেন আরতি। মেয়ের কর্মকাণ্ডে তিনি যে বিপদে, তা-ই হয়তো বোঝাতে চান ওই মহিলা। তবে মা এবং মেয়ের দু’রকম কথাবার্তায় ধন্দে পড়েছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, পিসিশাশুড়ি সুমিতাকে খুনের পর দেহ লোপাটের চেষ্টা শুরু করেন ফাল্গুনী। তাঁকে সাহায্যে এগিয়ে আসেন মা। কিন্তু প্রমাণ লোপাট করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়েন দু’জনে। বৃদ্ধার দেহ কেটে টুকরো টুকরো করলেও সেগুলো যে একটি ট্রলি ব্যাগে ভরা সম্ভব নয়, সেটা বুঝতে পেরে আরও একটি ব্যাগ ব্যবহার করেন মা-মেয়ে। একটি ট্রলি ব্যাগে দেহাংশ পুরে ফেলার জন্য ছুরি এবং বঁটি ব্যবহার করে সুমিতার পায়ের গোড়ালি থেকে একটা অংশ কাটা হয়। একই ভাবে কব্জির কিছুটা অংশ দেহ থেকে আলাদা করে দেন অভিযুক্তেরা। পিসিশাশুড়ির দেহের কাটা অংশ দিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে কাপড় দিয়ে বেঁধে দেন ফাল্গুনী। মেঝে থেকে রক্ত মোছা হয় দুটো কাপড় দিয়ে। তার পর মৃতার রক্তমাখা পোশাক ঘরের মেঝেয় জমে থাকা রক্ত মোছার জন্য ব্যবহার করা কাপড়, ছুরি, হাতুড়ি, বঁটি, দা পুকুরে ফেলে দেন তাঁরা।
আরও পড়ুন:
তদন্তের গতি আটকাচ্ছে বেশ কিছু জায়গায়। এখনও দ্বিতীয় ট্রলি ব্যাগের খোঁজ মেলেনি। সেটি বাড়ির পাশের পুকুরে, না কি স্থানীয় নোয়াই খালে ফেলেছিলেন, তার সুস্পষ্ট জবাব মেলেনি ধৃতদের কাছ থেকে। এই খুনের পরিকল্পনায় মায়ের কতটা সম্মতি ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া বলেন, ‘‘দু’রকম কথা বলে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন ধৃতেরা। দ্বিতীয় ট্রলিটি সম্ভবত ওঁরা নোয়াই খালে ফেলেননি। ট্রলি ব্যাগ ছাড়াই নিহতের জামাকাপড়-সহ অন্যান্য সামগ্রী ফেলা হয়ে থাকতে পারে। পুকুরে হাতুড়ি ও দা ফেলার কথা আরতি অস্বীকার করলেও আমাদের ধারণা, ওই দু’টি জিনিস তিনিই ফেলেছিলেন। মনে করা হচ্ছে, খুনে সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল। দুই অভিযুক্ত এখনও পুলিশকে পূর্ণ সহযোগিতা করছেন না বলে আমরা মনে করছি। ধোঁয়াশা কাটাতে মা-মেয়েকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।’’