Advertisement
E-Paper

বাড়িতেই খুন ইস্কোর কর্মী

বিকেলে বাড়িতে এসেছিল চার জন যুবক। তাদের সঙ্গে নিয়ে দোতলায় উঠে গিয়েছিলেন বাড়ির কর্তা। পর দিন দুপুরে সেই দোতলা থেকে মিলল তাঁর রক্তাক্ত দেহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৬ ০১:৩৪
দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় ভিড় জমেছে বাড়ির সামনে।

দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় ভিড় জমেছে বাড়ির সামনে।

বিকেলে বাড়িতে এসেছিল চার জন যুবক। তাদের সঙ্গে নিয়ে দোতলায় উঠে গিয়েছিলেন বাড়ির কর্তা। পর দিন দুপুরে সেই দোতলা থেকে মিলল তাঁর রক্তাক্ত দেহ।

হিরাপুরের ইসমাইল এলাকায় নিহত ভেঙ্কটেশ্বর রাও (৫৫) ইস্কোর কর্মী। পুলিশ জানায়, তাঁর দেহের পাশেই একটি রড মিলেছে। সেটি দিয়ে মাথায় আঘাত করেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। তবে কে বা কারা কী কারণে এমন ঘটনা ঘটাল, সে ব্যাপারে বুধবার রাত পর্যন্ত অন্ধকারে পুলিশ। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতো অবশ্য বলেন, ‘‘কী কারণে খুন এখনই বলা যাবে না। তবে কিছু সূত্র মিলেছে। তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’’

বার্নপুরের ইস্কো কারখানার প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কর্মী ছিলেন ভেঙ্কটেশ্বর। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, তিনি অফিস অ্যাটেনন্ড্যান্টের পদে কাজ করতেন। ইসমাইলে নিজের বাড়িতেই থাকতেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভেঙ্কটেশ্বরের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। দুই মেয়েকে নিয়ে বিশাখাপত্তনম চলে গিয়েছেন স্ত্রী। আশি বছর বয়সী মাকে নিয়ে ইসমাইলের বাড়িতে থাকতেন ভেঙ্কটেশ্বর।

পুলিশ জানায়, নিহতের বৃদ্ধা মা সরস্বতী দেবী জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেল ৪টে নাগাদ চার জন যুবক বাড়ির সামনে এসে তাঁর ছেলেকে ডাকাডাকি করে। তা শুনে ছেলে বাইরে বেরোন। তাঁদের বাড়ির বাইরের দিকে একটি সিঁড়ি রয়েছে, যেটি দিয়ে দোতলায় ওঠা যায়। সেই সিঁড়ি দিয়ে আগন্তুকদের নিয়ে উঠে যান ভেঙ্কটেশ্বর। এর পরে সে দিন আর তিনি নামেননি। অসুস্থ সরস্বতী দেবী ছেলের খোঁজে উপরে যেতে পারেননি। ছেলে উপরেই রয়েছেন মনে করে তিনি নীচে ঘুমিয়ে পড়েন। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, এ দিন সকালেও ভেঙ্কটেশ্বর নেমে না আসায় কয়েক বার তাঁর নাম ধরে ডেকেছিলেন। কিন্তু সাড়া না মেলায় মনে করেছিলেন, ছেলে হয়তো কোনও কারণে বাইরে গিয়েছে।

দুপুর ১২টা নাগাদ পরিচারিকা শম্পা বাউড়ি দোতলার ঘর পরিষ্কার করতে যান। আর তখনই খুনের ঘটনা সামনে আসে। রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ির মালিককে পড়ে থাকতে দেখে পরিচারিকা চেঁচামেচি করেন। জড়ো হন প্রতিবেশীরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ জানায়, বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে ছিল দেহটি। ঘর থেকে কিছু খোয়া যায়নি বলেই প্রাথমিক ভাবে জেনেছে পুলিশ। দেহ ময়না-তদন্তের জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনাস্থলে তদন্তে যান এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎবাবু।

বার্নপুরের ইসমাইলে এই বাড়িতেই খুন।

কিন্তু ইস্কোর কর্মীকে এ ভাবে খুন করা হল কেন, সে নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, ভেঙ্কটেশ্বর এলাকায় ভাল মানুষ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। সকলের সঙ্গেই হেসে কথা বলতেন তিনি। নিজের বাড়িতেই তাঁর খুন হয়ে যাওয়ার ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন পড়শিরা। খানিকটা আতঙ্কিতও হয়ে পড়েছেন তাঁরা। এমন ঘটনায় হতচকিত ভেঙ্কটেশ্বরের সহকর্মীরাও।

ইস্কো সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার থেকে তিন দিন ছুটি নিয়েছিলেন ভেঙ্কটেশ্বর। সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন, বাড়ির কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাকি পড়ে গিয়েছে। এই ক’দিনে সে সব মেটাতে হবে। তার পরেই কাজে যোগ দেবেন। সহকর্মীরা জানান, ভাল কর্মী হিসেবেই সকলে চিনতেন ভেঙ্কটেশ্বরকে। গত বছরই কৃতী কর্মী হিসেবে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সহকর্মীরা তাঁকে নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ বলেই জানতেন।

পুলিশ জানায়, নিহতের জামাকাপড় অবিন্যস্ত ছিল। যা দেখে অনুমান, খুনের আগে আততায়ীদের সঙ্গে ভেঙ্কটেশ্বরের ধস্তাধস্তি হয়েছিল। তবে নিহতের মা জানান, ছেলে দোতলায় উঠে যাওয়ার পর থেকে তিনি কোনও অস্বাভাবিক আওয়াজ পাননি। যে চার জন এসেছিল, তারা কখন বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে, তা-ও তিনি টের পাননি। প্রতিবেশীরা জানান, ভেঙ্কটেশ্বরের বাড়ি থেকে তাঁরাও তেমন সাড়া-শব্দ পাননি। পুলিশের অনুমান, যে চার যুবক এসেছিল তারা সকলেই বা তাদের মধ্যে কেউ ভেঙ্কটেশ্বরের পূর্ব পরিচিত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভেঙ্কটেশ্বরের বাড়ির একতলার কিছুটা অংশ একটি অর্থলগ্নি সংস্থা ভাড়া নিয়ে অফিস করেছিল। কয়েক মাস আগে সেই সংস্থা অফিসের ঝাঁপ ফেলে দেয়। ভেঙ্কটেশ্বর ওই সংস্থার সঙ্গে কোনও ভাবে জড়িত ছিলেন কি না, তা আশপাশের বাসিন্দারা জানাতে পারেননি।

তবে পুলিশ জানায়, খুনের সঙ্গে ওই অফিস বন্ধ হওয়ার কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গত ১ জানুয়ারি বার্নপুরের নেহরু পার্কে ইস্কোর এক ঠিকাদার খুন হন। সেই ঘটনার সঙ্গে এই খুনের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। পুলিশকর্তারা জানান, সমস্ত সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তদন্ত শুরু হয়েছে। যে চার যুবক এসেছিল ওই বাড়িতে, তাদের খোঁজ চলছে। আত্মীয়-পরিজনদের মাধ্যমে নিহতের স্ত্রীর কাছে খবর পাঠিয়েছে পুলিশ।

—নিজস্ব চিত্র।

isco worker murder asansol venkateswar rao
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy