E-Paper

জেএমবি এখন ‘সুপ্ত’, দাবি গোয়েন্দাদের

২০১৪ সালে তখন দুর্গাপুজোর আনন্দে মেতে আছে রাজ্য। তারই মধ্যে ওই দিনে দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ বর্ধমান থানার পুলিশ খবর পায়, বিকট আওয়াজে একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে খাগড়াগড়ে।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১০:০৫
এই বাড়িতেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল।

এই বাড়িতেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। —নিজস্ব চিত্র।

একটি বিস্ফোরণ। বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে ঘটে যাওয়া সেই বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে দেখা গিয়েছিল, জাল ছড়িয়ে রয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। ৯ বছর পার করে করে ফেলল সেই ঘটনা। তবে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের স্মৃতি এখনও টাটকা পূর্ব বর্ধমান-সহ রাজ্যের কয়েকটি জেলার কিছু এলাকার মানুষের কাছে।

২০১৪ সালের ২ অক্টোবরের ওই ঘটনায় উঠে এসেছিল জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’ (জেএমবি)-এর নাম। অভিযুক্তদের মধ্যে ৩০ জন সাজা পেলেও, এখনও তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র খাতায় দু’জন পলাতক। টানা ধরপাকড়ে ওই সংগঠন এখন আর ‘সক্রিয়’ নয় বলে তদন্তকারী নানা সংস্থার দাবি। তার পরে জঙ্গিদের ‘ডেরা’ হিসেবে পূর্ব বর্ধমানের কোনও এলাকার নামও তদন্তকারীদের কাছে উঠে আসেনি। তবে সম্প্রতি কালনার তিন পরিযায়ী শ্রমিক যুবককে গুজরাতের এটিএস (অ্যান্টি টেররিজ়ম স্কোয়াড) গ্রেফতার করায় গোয়েন্দারা নজর রাখছেন বলে খবর।

২০১৪ সালে তখন দুর্গাপুজোর আনন্দে মেতে আছে রাজ্য। তারই মধ্যে ওই দিনে দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ বর্ধমান থানার পুলিশ খবর পায়, বিকট আওয়াজে একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে খাগড়াগড়ে। গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার আওয়াজ বলে মনে করেছিলেন এলাকাবাসী। খাগড়াগড় মোড় থেকে দু’আড়াইশো মিটার দূরে অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার মহম্মদ হাসান চৌধুরীর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে। কয়েক জন বাসিন্দা জানান, ঘটনার পরেই রক্ত ধুয়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। পুলিশ ঢুকতে গেলে বাড়িতে থাকা মহিলারা পিস্তল তাক করে। পরে পুলিশ গ্রিল ভেঙে ঢুকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শাকিল আহমেদ ওরফে শাকিল গাজি ও আব্দুল করিম নামে দু’জনকে। বাংলাদেশের বাসিন্দা শাকিল ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় বীরভূমের কীর্ণাহারের আব্দুলের।

সে দিন দেহ তুলতে গিয়েই ঘরে আধপোড়া বইয়ের কিছু কাগজের টুকরো পেয়েছিল পুলিশ। সেখান থেকে জঙ্গি-যোগ সন্দেহ করে জেলা পুলিশ। পুজোর মধ্যেই তদন্তভার নেয় সিআইডি। পরে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দিল্লিতে নিজস্ব থানায় মামলা রুজু করে তদন্তভার হাতে তুলে নেয়। এনআইএ-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘খাগড়াগড় কাণ্ডের পরেই পশ্চিমবঙ্গে এনআইএ-র নিজস্ব পরিকাঠামোয় অফিস গড়া হয়েছিল। বর্তমানে রাজ্যের অনেকগুলি মামলার তদন্তভারই আমাদের হাতে রয়েছে।”

খাগড়াগড় কাণ্ডের পরে জঙ্গি মোকাবিলায় বিশেষ টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) গঠন করেছে রাজ্য। সিআইডি-ও তাদের নেটওয়ার্ক ঢেলে সাজিয়েছে। ওই ঘটনার পরেই বর্ধমান স্টেশন থেকে মুসা নামে এক জঙ্গিকে সিআইডি গ্রেফতার করে। তদন্তে জানা গিয়েছিল, জেএমবি এবং আইএসের মধ্যে ‘লিঙ্কম্যান’-এর কাজ করছিল মুসা। সিআইডির এক কর্তার দাবি, “খাগড়াগড়ের পরে জঙ্গি কার্যকলাপ বা ডেরার খোঁজ পূর্ব বর্ধমানে পাওয়া যায়নি। ধরপাকড়ের জেরে জেএমবি কিছুটা সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে।”

খাগড়াগড় কাণ্ডে পরপর উঠে আসে বাংলাদেশের কওসর থেকে মঙ্গলকোটের ইউসুফ-সহ বেশ কিছু নাম। তদন্তে জানা যায়, নানা জায়গায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গিরা থাকতে শুরু করেছিল। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ার নাম উঠে আসে। সেখানে মেয়েদের জেহাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত বলেও তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন। তদন্ত চলাকালীন খাগড়াগড়ে এসেছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। তদন্ত শেষে তিন
বাংলাদেশি-সহ ৩২ জনের নামে চার্জশিট জমা দেয় এনআইএ। ৩০ জনের সাজা ঘোষণা করেছে এনআইএ-র বিশেষ আদালত।

এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ বলেন, “প্রাথমিক তদন্ত ভাল হলে সাজার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। খাগড়াগড় কাণ্ডে ৩০ জন সাজা পেয়েছে। সর্বোচ্চ ২৯ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ওই কাণ্ডের মূল চক্রী কওসর। দু’জন এখনও পলাতক।”
(চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy