Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

তোলাবাজি করলে পাপে মৃত্যু, ফের সতর্কবার্তা দলনেত্রীর

তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট ব্যবসায় বারবার দলীয় কর্মীদের নাম জড়িয়ে পড়ায় মাথাব্যথা বেড়েছে তাঁর। ইদানীং দলের প্রায় প্রতিটি সভায় তোলাবাজি থেকে বিরত থাকার জন্য কর্মীদের সতর্ক করতে হচ্ছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বুধবার বর্ধমানের ঝিঙ্গুটির সভাও তার ব্যতিক্রম হল না। সরকারি সভামঞ্চ থেকে তিনি বার্তা দিলেন, “লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫১
Share: Save:

তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট ব্যবসায় বারবার দলীয় কর্মীদের নাম জড়িয়ে পড়ায় মাথাব্যথা বেড়েছে তাঁর। ইদানীং দলের প্রায় প্রতিটি সভায় তোলাবাজি থেকে বিরত থাকার জন্য কর্মীদের সতর্ক করতে হচ্ছে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বুধবার বর্ধমানের ঝিঙ্গুটির সভাও তার ব্যতিক্রম হল না। সরকারি সভামঞ্চ থেকে তিনি বার্তা দিলেন, “লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু।”

বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর নিয়মিত হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও রাজারহাট-নিউটাউন, বেলেঘাটা থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, এলাকা দখল নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ কার্যত রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বুধবারও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় বারবার এসেছে জোর করে টাকা আদায়ের প্রসঙ্গ। আর এ ক্ষেত্রে কোনও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কিন্তু অভিযোগ করেননি তিনি। বরং নিজের দলেরই নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, “না খেতে পেলে, না-খেয়ে থাকবেন। কিন্তু লোভ করবেন না। তোলা তুলে খাবেন না। জোর করে টাকা তুলবেন না। জানবেন, তা হলেই কিন্তু প্রচণ্ড পাপ হবে। লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু ঘটবে।”

দলীয় কর্মীদের বিশৃঙ্খল আচরণ ও তোলাবাজির অভিযোগে তিনি যে তিতিবিরক্ত, আজকের বক্তৃতায় একাধিক বার তা স্পষ্ট। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, অভাব থাকলে তাঁরা না খেয়ে থাকবেন। কিন্তু মানুষের উপরে অত্যাচার করে টাকা জোগাড় করা চলবে না। মমতার কথায়, “মনে রাখবেন, আমরা সকলের জন্যই উন্নয়নের ব্যবস্থা করেছি। কাউকে পাট্টা দিচ্ছি, কাউকে চাষবাসের জমি দিচ্ছি। কৃষি সরঞ্জাম দিচ্ছি। কন্যাশ্রী প্রকল্প করেছি। খোলা রাস্তা সকলের সামনে পড়ে রয়েছে। সেই রাস্তায় চলে নিজের উন্নতি ঘটান। তা হলে আর টাকা তুলে, তোলা তুলে কাউকে খেতে হবে না!” জমি পাইয়ে দেওয়ার নাম করেও যে তাঁর দলের লোক টাকা তোলে, এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে তার ইঙ্গিত মিলেছে। তাঁর নির্দেশ, কেউ জমি পাইয়ে দেবে বলে পয়সা চাইলে তাকে যেন এক পয়সা না দেওয়া হয়। “আমি চাইলে আমাকেও দেবেন না,” বলেছেন তিনি।

তোলাবাজি-দুর্নীতি নিয়ে দলে যে নিয়মিত অভিযোগ আসছে, তা স্বীকার করে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা দোষ চাপিয়েছেন ‘নবাগতদের’ উপরই। তিনি বলেছেন, “দলে অনেক নতুন লোক ঢুকছে। যাদের একটা অংশ সিপিএমের জমানাতেই তোলাবাজি করেছে। মূলত তাদের কাজেই বদনাম হচ্ছে আমাদের সকলের।”

তৃণমূলের ওই নেতার বক্তব্য মানতে নারাজ বিরোধীরা। তাঁরা বলছেন, তৃণমূলের একাংশ যে তোলাবাজির সঙ্গে যুক্ত, দলনেত্রীর বক্তব্যেই তা স্পষ্ট। কর্মীদের উপর মমতার নিয়ন্ত্রণ কতটা আছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা। কারও কারও মতে, তোলাবাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়ায় ব্যাপারটা লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বুঝতে পারছেন, তাঁর দল চালাচ্ছে তোলাবাজরা। কিন্তু কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে প্রকৃতপক্ষে তৃণমূল কর্মীদের তোলাবাজি ও সমাজবিরোধী কাজকর্মকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্রয় দিচ্ছেন।”

একই ভাবে একদা মুখ্যমন্ত্রীর সহকর্মী, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়ার মন্তব্য, “তিন বছরে রাজ্য সরকার চালাতে গিয়ে দলীয় স্তরে তাঁর নিয়ন্ত্রণ লাগামছাড়া হয়েছে। সেটা বুঝছেন বলেই তাঁকে বারেবারে সতর্কবার্তা দিতে হচ্ছে।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, এই বার্তা দিয়ে কাজের কাজ কিছুই হবে না। তাঁর কটাক্ষ, “আসলে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেন, তা করেন না। ওঁর এই বলাটা ফাঁকা আওয়াজ ছাড়া কিছু না।”

— ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE