Advertisement
E-Paper

কাজ কি থাকবে, ভয়ে কাঁটা

জগবন্ধুবাবুর অভিযোগ, নিয়মিত বেতন হচ্ছে না। অসুখবিসুখ, সন্তানদের পড়াশোনা আর সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম অবস্থা।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩০
সংশয়: কারখানার কী হবে, চিন্তায় শ্রমিকেরা। ছবি: শৈলেন সরকার।

সংশয়: কারখানার কী হবে, চিন্তায় শ্রমিকেরা। ছবি: শৈলেন সরকার।

সাংবাদিক পরিচয় শুনেই চোখে মুখে বিরক্তি এনে ফিরে যাচ্ছিলেন বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কারখানার কর্মী জগবন্ধু মুখোপাধ্যায়। অনেক বুঝিয়ে দাঁড় করানো গেলেও প্রথমে কিছু বলতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে অবশ্য মান ভেঙে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। ছলছলে ছোখে বলেন, ‘‘এখনও সাত বছর চাকরি রয়েছে। এই সময় কারখানায় তালা পড়লে কোথায় যাই বলুন তো! সরকারের কি বিবেক বলে কিছুই নেই?’’

জগবন্ধুবাবুর অভিযোগ, নিয়মিত বেতন হচ্ছে না। অসুখবিসুখ, সন্তানদের পড়াশোনা আর সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম অবস্থা। কারখানার আনাচে কানাচে, আবাসন এলাকায় কান পাতলে এ রকম অনেক ক্ষোভের কথা শোনা যায়। সংস্থার শ্রমিক-কর্মীরা তো বটেই, অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকার ব্যবসায়ীরাও। ক্রমশ ধুঁকতে থাকা কারখানার হাল যত খারাপ হচ্ছে, ততই তলানিতে ঠেকছে এলাকার অর্থনীতি। কারণ, বার্নপুরের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছিলেন এই শ্রমিক-কর্মীরাই। তাঁদের বেতনে টান পড়ায় বেচাকেনাও তলানিতে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বার্নপুরে দেশের অন্যতম প্রাচীন রেল ওয়াগন তৈরির কারখানা বার্ন স্ট্যান্ডার্ডকে দেউলিয়া ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ ব্যাপারে পাকাপাকি সিদ্ধান্ত নিতে চলতি মে মাসে সংস্থাটিকে ন্যাশনাল ল’ ট্রাইব্যুনালেও পাঠানো হয়। কর্তৃপক্ষের একাংশে তরফে জানা গিয়েছে, ২৭ নভেম্বরের মধ্যেই চূড়ান্ত ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। যদিও সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন শ্রমিক-কর্মীরা। মামলার শুনানিও হয়েছে একাধিক বার। ২০ নভেম্বর ফের শুনানি হবে।

স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে এই মুহূর্তে প্রায় সাড়ে চারশো শ্রমিক-কর্মী রয়েছেন কারখানায়। তাঁরা প্রত্যেকেই চাকরি হারানোর ভয়ে কাঁটা। সরকার সংস্থাটিকে কেন দেউলিয়া ঘোষনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ১২ জন আধিকারিকের কেউই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের দাবি, কারখানার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। দেনা রয়েছে প্রায় ২০০ কোটি। সমস্ত দেনা মিটিয়েও কারখানার হাতে থাকার কথা ৬০০ কোটির সম্পত্তি। এর পরেও কেন দেউলিয়া ঘোষণা, তা নিয়েই ধন্দে সবাই।

কারখানা লাগোয়া আবাসন কলোনিতে গেলেই বোঝা যায়, শ্রমিক-কর্মীদের দুর্দশা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। আবাসনের উঠোনে বসেছিলেন সংস্থার প্রাক্তন কর্মী রঞ্জন বল। এক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু, আধিকারিকেরা পাওনা-গণ্ডা না মেটানোয় আবাসন ছেড়ে উঠে যেতে পারছেন না। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘সংস্কারের অভাবে আবাসনের একাংশ ভেঙে পড়ছে। এখানে থাকতে ভয় হয়। অবসরের পাওনা মিটিয়ে দিলেই উঠে যেতাম।’’ এক কালের সাজানো গোছানো ফুটবল স্টেডিয়াম আজ আগাছায় ঢাকা। এর ঠিক সামনের ঝাঁকড়া নিমগাছের তলায় বসে গল্প করছিল জনা কয়েক কিশোর। এদেরই এক জন, ক্লাস টেনের পড়ুয়া সমীর চক্রবর্তী বলে, ‘‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। তাই রাতে কেরোসিনের লম্ফ জ্বেলে পড়াশোনা করতে হয়।’’

সংস্থার বর্তমান কর্মী শিশির চট্টোপাধ্যায় জানালেন, বছর সাতেক আগে রেলের সঙ্গে বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের সংযুক্তির ঘোষাণায় আশার আলো দেখেছিলেন। ভেবেছিলেন সুদিন হয়তো ফিরবে। কিন্তু, বছর ঘুরতেই বোঝা গেল, কিছু হওয়ার নয়। কারখানার এই ডামাডোলে স্বামীর রক্তচাপ আরও বেড়ে গিয়েছে জানিয়ে এক কর্মীর স্ত্রী পারুল দুবে বলেন, ‘‘এমনটা হবে কখনও ভাবিনি। রাতে ঘুমোতে পারি না।’’ গৃহবধূ স্বপ্না সেনগুপ্তর অভিযোগ, আবাসনগুলি জঙ্গলে ঢেকেছে। দেওয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে। মেরমতির কোনও উদ্যোগই নেই কর্তৃপক্ষের। ‘‘মনে হয় যেন শুয়োরের খোঁয়ারে বসবাস করছি’’—মন্তব্য স্বপ্নাদেবীর। শ্রমিক-কর্মীরা জানান, অগস্টে শেষবার বেতন হাতে পেয়েছেন। আবার কবে হবে জানেন না কেউই। আপাতত তারই অপেক্ষা।

Burn Standard Factory Labours
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy