প্রতীকী ছবি।
গর্ভপাত করাতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ‘হাতুড়ের’ (গ্রামীণ ডাক্তার, আরএমপি) কাছে, সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে দাবি আসানসোলের রেলপাড়ের এক মহিলার! কিন্তু, যন্ত্রের মাধ্যমে গর্ভপাত করানোর সময়, ওই মহিলার জরায়ু ফুটো করার পরে ক্ষুদ্রান্ত্রেও আরও দু’টি ছিদ্র হয়ে যায়। এর ফলে, মহিলার প্রাণ সংশয় তৈরি হয়। এমনটাই জানা গিয়েছে আসানসোল জেলা হাসপাতাল সূত্রে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, অস্ত্রোপচার করে সমস্যার সামাল দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা সামনে আসার পরে নাগরিক সচেতনতা, হাতুড়ের অস্ত্রোপচার করার এক্তিয়ার রয়েছে কি না, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করার কথা ভাবা হচ্ছে কি না, এই প্রশ্নগুলি উঠছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলপাড়ের ওই মহিলা সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে জানাচ্ছেন, তাঁকে এলাকারই এক হাতুড়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই মহিলার স্বামী জানান, গত ২০ নভেম্বর ওই হাতুড়ের কাছে স্ত্রীর ‘অস্ত্রোপচার’ করানো হয়। কিন্তু তার পরে মহিলার পেটে ব্যথা ও পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়, জানান হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ নিশা আগরওয়াল। গত ২৪ নভেম্বর তাঁকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার চিকিৎসা শুরু করেন শল্য চিকিৎসক সন্দীপ বেরা। সন্দীপ জানান, মহিলার আল্ট্রাসোনোগ্রাফি এবং সিটি স্ক্যান করার পরে, তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, পেটে অস্ত্রোপচার করতে হবে। ২৫ তারিখ অস্ত্রোপচারটি হয়। ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন, জরায়ু এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে তিনটি ফুটো হয়ে গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে নানা জটিলতা তৈরি হয় এবং মহিলার পেট ফুলে প্রবল যন্ত্রণা শুরু হয়।
সন্দীপ জানিয়েছেন, পেটে অস্ত্রোপচার করে প্রথমে জরায়ুর ফুটো ঠিক করা হয়। তার পরে ক্ষুদ্রান্ত্রের ফুটো দু’টিও ঠিক করা হয়। পুরো বিষয়টিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘লুপ ইলিওস্টমি’ বলা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অস্ত্রোপচারে সহযোগিতা করেছেন শল্য চিকিৎসক মহম্মদ আহমেদ, চিকিৎসক রবি প্রকাশ এবং দু’জন অ্যানাস্থেসিস্ট বিরাজ মণ্ডল ও শুভজিৎ পাল।
পুরো বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস রবিবার বলেন, “সরকারি হাসপাতালে বিনা খরচে সবরকম চিকিৎসা করা হয়। সবার কাছে আবেদন, ঠিক জায়গায় চিকিৎসা করান। ওই মহিলাকে ঠিক সময়ে হাসপাতালে না নিয়ে এলে, তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারত।” চিকিৎসকদের অস্ত্রোপচার ‘সফল’ জানিয়ে তিনি তাঁদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন।
পাশাপাশি, প্রশ্ন উঠেছে কী ভাবে এক জন হাতুড়ে অস্ত্রোপচার ‘করলেন’? রুরাল মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিম বর্ধমান জেলার উপদেষ্টা বিকাশ রাউত বলেন, “কোনও ভাবেই কোনও গ্রামীণ চিকিৎসক (হাতুড়ে) অস্ত্রোপচার করতে পারেন না। পুরোপুরি অবৈধ কাজ হয়েছে এটা। কার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠছে, সে বিষয়ে সাংগঠনিক ভাবে খোঁজখবর করা হবে।” সে সঙ্গে, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শেখ মহম্মদ ইউনুস বলেন, “যা অভিযোগ উঠছে, তেমনটা হলে পুরো বিষয়টিই আইন বিরুদ্ধ। এখনও কেউ লিখিত ভাবে বিষয়টি জানাননি। তা হলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy