Advertisement
E-Paper

খনিগর্ভ ঠান্ডা হবে তরল নাইট্রোজেনে

অবৈধ খননের জেরেই চুরুলিয়ায় খনিতে আগুন জ্বলছিল, তা নিশ্চিত খনি বিশেষজ্ঞ থেকে এলাকাবাসী, সকলেই। কিন্তু জেলা প্রশাসন বা দমকল শুধু জল ছিটিয়ে বা বালির বস্তা দিয়ে আগুন সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০০
জল ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে চুরুলিয়ায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

জল ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে চুরুলিয়ায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

অবৈধ খননের জেরেই চুরুলিয়ায় খনিতে আগুন জ্বলছিল, তা নিশ্চিত খনি বিশেষজ্ঞ থেকে এলাকাবাসী, সকলেই। কিন্তু জেলা প্রশাসন বা দমকল শুধু জল ছিটিয়ে বা বালির বস্তা দিয়ে আগুন সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে যে পদ্ধতিতে তা সম্ভব, তা জানা রয়েছে, দাবি বিশেষজ্ঞদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাটির উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, খনিতে আগুন নিভে গিয়েছে বা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু আদৌ তা নিভেছে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান খনি বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের আশঙ্কা, হয়তো আগামী দিনে ফের আগুন বার হতে পারে এলাকায়। কোল ইন্ডিয়ার প্রাক্তন আধিকারিক তথা বিশিষ্ট খনি বিশেষজ্ঞ অনুপ গুপ্ত বলেন, ‘‘সাধারণ ভাবে এ সব ক্ষেত্রে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে আগুনের উৎসস্থল বন্ধ ও অবৈধ খনিমুখ (র‌্যাটহোল) দিয়ে খনিগর্ভে অক্সিজেন ঢোকার রাস্তা বন্ধ করতে হয়। আর এই দু’টি কাজই একসঙ্গে করতে হয়।’’ কিন্তু এর জন্য দরকার উন্নত প্রযুক্তির।

কী সেই প্রযুক্তি? অনুপবাবু জানান, খনি লাগোয়া এলাকায় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মতো একাধিক জায়গায় মাটিতে ড্রিল করে ‘বোরহোল’ তৈরি করতে হয়। তা দিয়ে তরল নাইট্রোজেন ভূগর্ভে পাঠাতে হবে। ওই নাইট্রোজেন আগুনের উৎসস্থলে গিয়ে তা নিয়ন্ত্রণের কাজ করবে। একই সঙ্গে যে ‘র‌্যাটহোল’গুলি থেকে আগুন বেরোচ্ছে, সেখানে পাম্পের সাহায্যে জল ঢোকাতে হবে। ভূগর্ভে অক্সিজেন ঢোকা বন্ধ করতে অন্য ‘র‌্যাটহোল’গুলি মাটি, পাথর, বালি ও সিমেন্ট ভর্তি বস্তা দিয়ে ভরাট করতে হবে। এই জোড়া অভিযান ভাল ভাবে হলে তবেই খনির শীতল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দমকল বা রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই কাজটি করার প্রযুক্তি রয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান খনি বিশেষজ্ঞরা।

এ পর্যন্ত যে ভাবে, অর্থাৎ জল ঢেলে বা বালি, মাটির বস্তা ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ হয়েছে, তা যে উপযুক্ত নয়, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ খনি বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, শুধু জল নয়, তরল নাইট্রোজেন ছা়ড়া এই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা প্রায় অসম্ভব। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ও বলেন, ‘‘ওই খনিটির দায়িত্বে আমরা নেই। ফলে এ বিষয়ে মন্তব্য করব না। তবে বছর খানেক আগে জামুড়িয়াতেই আমরা জার্মানি থেকে বিশেষজ্ঞকে ডেকে তরল নাইট্রোজেন ভূগর্ভে পাঠিয়েছিলাম।’’

তবে প্রযুক্তি যা-ই হোক না কেন, এই আগুন, ধোঁয়া থেকে পুরোপুরি মুক্তি পেতে পদক্ষেপ করা দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই। কারণ অদূরেই রয়েছে চুরুলিয়া, জয়নগর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ কয়লা পুড়ে গিয়ে রাজস্ব ক্ষতিও হচ্ছে। অনুপবাবুর মতে, ‘‘আমি যতদূর জানি, ওই এলাকা থেকে বীরভূমের পাঁচামি পর্যন্ত কয়েকশো কোটি টাকার কয়লা এখনও মজুত রয়েছে।’’

কিন্তু খনিকে শীতল করার প্রযুক্তি যখন জানা, তা হলে তা প্রয়োগ করতে এত দেরি হচ্ছে কেন, উঠেছে সে প্রশ্নও।

Fire Mine Cooling Liquid Nitrogen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy