স্কুল ভবন সংস্কারের দাবিতে শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন অভিভাবকদের একাংশ। তার জেরে পঠনপাঠন বিঘ্নিত হয়েছে বলে অভিযোগ হিরাপুর শিক্ষাচক্রের বড়থল প্রাথমিক স্কুলে। পরে শিক্ষকদের অনুরোধে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের জন্য রান্নাঘরের তালা খোলা হয়। শুক্রবার সকালে এই বিক্ষোভের খবর পেয়েই অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে জেলা শিক্ষা দফতর। তবে সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত পড়ুয়াদের শ্রেণিকক্ষে বসে পড়াশোনা করতে দেওয়ার বিষয়ে নারাজ অভিভাবকেরা।
বড়থল প্রাথমিক স্কুলে এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ দিন স্কুলে বিক্ষোভ দেখানো অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রায়ই শ্রেণিকক্ষের ছাদের চাঙড় খসে পড়ছে। মেঝে ফেটে গিয়েছে। যে কোনও সময়ে পড়ুয়ারা জখম হতে পারে। অভিভাবক বাপি ঘোষের কথায়, ‘‘ভবনটির সংস্কারের জন্য বহু বার স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের হেলদোল নেই। তাই আমরা প্রতিবাদে নেমেছি।’’ কিছু অভিভাবক শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। চড়া রোদে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে থাকে পড়ুয়ারা। পঠনপাঠনেও বিঘ্ন ঘটে। অভিভাবকেরা দাবি করেন, ভবন সংস্কার করা না হলে তাঁরা পড়ুয়াদের শ্রেণিকক্ষে বসতে দেবেন না। তাতে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হলেও তাঁদের আপত্তি নেই।
এ দিন পাণ্ডবেশ্বরে জেলা প্রাথমিক স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থাকায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন। অন্য শিক্ষকেরা বোঝানোর চেষ্টা করেন অভিভাবকদের। শিক্ষক রামমোহন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিভাবকদের বুঝিয়ে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের জন্য রান্নাঘর খোলাতে পেরেছি। তবে শ্রেণিকক্ষের তালা খোলানো যায়নি।’’ অভিভাবকদের অভিযোগ ঠিক বলে স্বীকার করেন শিক্ষকেরা। তাঁদেরও দাবি, ভবনের একাংশ বিপজ্জনক অবস্থায় আছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ‘‘অভিযোগ শুনেছি। দ্রুত সমস্যা মিটবে।’’ প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের জেলা স্কুল পরিদর্শক দেবাশিস সরকার জানান, ভবন সংস্কারের জন্য অর্থ অনুমোদন হয়েছে। দরপত্রও ডাকা হয়েছিল। তবে কারিগরি কারণে তা বাতিল হয়েছে। দ্রুত দরপত্র ডেকে কাজ শুরু হবে।
বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের দাবি, ‘‘রাজ্যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে মোচ্ছব হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে সরকারের কোনই ভূমিকা নেই। খুদে পড়ুয়ারা জীবন হাতে নিয়ে লেখাপড়া করতে বাধ্য হচ্ছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ‘‘এই রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে যে ব্যয় করে সরকার, তা দেশের অন্য কোনও রাজ্যে হয় না।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)