Advertisement
E-Paper

জমি দখলের জোর লড়াই ‘শান্ত’ রায়নায়

গত লোকসভা ভোটের হিসেবে এলাকায় তৃণমূল এগিয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ভোটে। দু’বছর পরেই বিধানসভা ভোটে সেই ব্যবধান কমে দাঁড়ায় মাত্র ৪৪৮। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কোনও আসনে ছিল না সিপিএম বা বিজেপি

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গত লোকসভা ভোটের হিসেবে এলাকায় তৃণমূল এগিয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ভোটে। দু’বছর পরেই বিধানসভা ভোটে সেই ব্যবধান কমে দাঁড়ায় মাত্র ৪৪৮। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কোনও আসনে ছিল না সিপিএম বা বিজেপি। কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে জমি দখলের জন্য মরিয়া তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি— তিন পক্ষই। তাই সব দলের নেতাদের কপালেই ‘চিন্তার ভাঁজ’ রায়নায়।
২০১১ সালে রায়নায় জিতে বিধায়ক হন সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব খাঁ। প্রায় ১২ হাজার ভোটে জেতার পরেও দীর্ঘ সময় তিনি নিজের গ্রাম আলমপুরে ঢুকতে পারেননি বলে জানান সিপিএম নেতারা। তৃণমূলের একাংশের দাবি, এক সময়ে রায়নায় বিরোধীদের প্রবেশ কার্যত ‘নিষিদ্ধ’ ছিল। সেই সময়ের বেশ কিছু নেতা-কর্মী এখন দলে থেকেও নেই বলা চলে। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে তাঁরা দলের প্রার্থী হতে পারেননি। তার পর থেকেই দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক নেতার কথায়, “দ্বন্দ্ব বাড়তেই মিথ্যা অভিযোগের পাহাড় জমা শুরু হয়। আমাদের একপ্রকার একঘরে করে দেওয়া হয়। এই সুযোগে সিপিএম এবং বিজেপি কিন্তু এলাকায় মাথা তুলছে।’’

তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই জানান, ২০১৪ সালের লোকসভা ও ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে জেতানোয় যাঁরা ‘কান্ডারি’ ছিলেন, সেই নেতাদের অনেককেই এ বার দেখা যাচ্ছে না। তেমনই এক নেতার কথায়, “২০১৪ সালে আমরা রায়নায় দাপটে ভোট করেছি। দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপট থাকলেও আমাদের ছক কাজ করেছিল। রায়নার বিভিন্ন বুথে ৪৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল!”

রায়নায় ফের সংগঠন পোক্ত করার কাজ চলছে বলে জানায় সিপিএম-ও। দলের নেতাদের দাবি, হিজলনা ও গোতান অঞ্চল ছাড়া সব জায়গায় তাঁদের ‘জোর’ রয়েছে। সম্প্রতি গোটা আটেক বড় মিছিল হয়েছে, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথাও বলা হচ্ছে। দলের জেলা কমিটির সদস্য মির্জা আখতার আলির দাবি, “রায়নার মানুষ বাম-মনস্ক। গত কয়েক বছর ধরে তাঁদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা ভোট দিতে পারলেই ফল পাল্টে যাবে। তৃণমূলের বেশ কিছু কর্মী বসে যাওয়ার সুবিধা তো আমরা পাবই।’’

সিপিএম নেতাদের দাবি, ২০১৪ সালে বিভিন্ন বুথ তাঁরা বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েন। কিন্তু ২০১৬ সালে সেই সব বুথে তাঁরা ফের এগিয়ে যান। দু’টি অঞ্চলের ৪০টি বুথ ‘রক্ষা’ করতে পারলেই তৃণমূলের সঙ্গে ৪৪৮ ভোটের ব্যবধান মুছে ফেলা যেত বলে মনে করেন তাঁরা। দলের এক নেতার কথায়, “গোতান ও হিজলনার কিছু বুথ ছাড়া এই বিধানসভা এলাকার ২৮৪টি বুথের বেশিরভাগেই প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।’’

তৃণমূল-সিপিএম লড়াইয়ের মধ্যে নড়াচড়া করতে দেখা যাচ্ছে বিজেপি নেতা-কর্মীদেরও। নতু, শ্যামসুন্দর, সেহেরা, রায়না, উচালন, পাঁইটা ১ ও ২-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিজেপির কর্মকাণ্ড নজরে পড়ছে। দলের নেতা কৃষ্ণ ঘোষের দাবি, “কোনও কোনও পঞ্চায়েত ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে ফেলেছেন তৃণমূল নেতারা। একই গ্রাম বা বাড়ি থেকে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের একাধিক পদ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ভোটের পরে বোঝা যাবে আমরা কতটা এগিয়েছি।’’

তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ‘বসে যাওয়া’ কর্মীদের নিয়ে বিশেষ ভাবতে নারাজ। দলের নেতারা মনে করছেন, গত কয়েক বছর ধরে রায়নায় বিশেষ গোলমাল নেই। ওই সব নেতা ফের ‘সক্রিয়’ হলে এলাকা অশান্ত হয়ে উঠবে। বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট উত্তম সেনগুপ্তের বক্তব্য, “দলের উপরে কেউ নন। সবাই মিলে ঝাঁপিয়েছেন প্রার্থীকে জেতাতে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করে যাওয়ার পরে মনে হচ্ছে, এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি ‘লিড’ মিলবে।’’
ভোটবাক্স ভরানোর দিকে নজর সব দলের। কিন্তু এলাকায় সেচ ব্যবস্থার উন্নতির দাবি, চালকলের দূষণ, দামোদর-মুণ্ডেশ্বরী-দারকেশ্বর নদীর জল উপচে বন্যা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? একে অন্যের দিকে আঙুল তুলেই দায় সারছে সব পক্ষ।

Politics TMC Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy