দূষণের অভিযোগ মঙ্গলপুর শিল্পতালুকে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
চৈত্রের বিকেলে অল্পবিস্তর হাওয়া বইছে। কিন্তু দরজা-জানলা বন্ধ পাড়ার প্রায় সব ঘরেই। এমন সময়ে এক রাজনৈতিক দলের মিছিল ঢুকল এলাকায়। পরিচিত এক জনকে দেখে চায়ের দোকান থেকে উঠে এসে কৈলাশ খাঁ বললেন, ‘‘দাদা, আর পারা যাচ্ছে না। ঘরদোর সব কালো হয়ে গেল।’’— দৃশ্যটা রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্পতালুক লাগোয়া বক্তারনগরের।
মঙ্গলপুর, জামুড়িয়ার ইকড়া শিল্পতালুক লাগোয়া বহু এলাকাতেই এই ‘কালো’-দৃশ্য। এর কারণ, স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলি, অভিযোগ এলাকাবাসীর একাংশের। অভিযোগ, কারখানাগুলি দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র না চালানোতেই এই হাল। তবে কারণ যা-ই হোক, দূষণ নিয়ে প্রচারে নেমে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পরস্পরকে বিঁধতে ছাড়ছে না।
তৃণমূলের নানা এলাকার নেতা, কর্মীরা প্রচারে নেমে জানাচ্ছেন, এই কারখানাগুলি তৈরি হয়েছে বাম আমলে। সুতরাং, এর দায় বামেদেরই। ঘটনাচক্রে, ২০০০ সাল থেকে রানিগঞ্জের মঙ্গলপুর শিল্পতালুকে সাতটি, ২০০৩ থেকে ইকড়া শিল্পতালুকে ১৪টি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা চালু হয়েছিল। ওই সব কারখানা চালুর পরে থেকেই মঙ্গলপুর শিল্পতালুক লাগোয়া বক্তারনগর, বাবুইশোল, পলাশবন, নতুনমদনপুর, চকরামবাটি, হরিশপুর, ধাণ্ডাডিহি, রনাই এবং ইকড়া শিল্পতালুকের পাশে ইকড়া, সার্থকপুর, চণ্ডীপুর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা বারবার দূষণে জেরবার হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন। তাঁদেরই এক জন সুকুমার খাঁয়ের বক্তব্য, ‘‘বাম আমল থেকে এলাকায় বিষ বাষ্প ছড়াচ্ছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এই কথার রেশ ধরেই তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেনের সমর্থনে প্রচার সারতে সারতে বক্তারনগরের লুইচাঁদ সূত্রধর জানান, ২০০৩-এ তাঁদের গ্রামে সমবায়ের উদ্যোগে মাছ চাষ শুরু হয়। কিন্তু মাস ছয়েকের মধ্যে সব মাছ মরে যায়। এমনকি, কারখানার ছাইয়ে ভাত হচ্ছে কালো, গাছের পাতার রংও তা-ই, জানান ইকড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন শিক্ষক সুশীল চট্টোপাধ্যায়।
কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণ না হওয়ার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছে সিপিএম, বিজেপি। জামুড়িয়া, রানিগঞ্জের দুই সিপিএম বিধায়ক যথাক্রমে জাহানারা খান, রুনু দত্তেরা জানান, ইকড়া থেকে জামুড়িয়ার তপসি পর্যন্ত সিঙ্গারন নদীর জলে স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলির বর্জ্য মিশছে। নদীর ‘লাল-জল’ দৈনন্দিন কাজকর্মে, চাষে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সিপিএম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শাসক দলের প্রশ্রয়েই কারখানাগুলি কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। প্রচারে সেটা বলছিও।’’ বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়কে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর মেলেনি এসএমএস-এরও। বিজেপির আসানসোল জেলা কমিটির নেতা সন্তোষ সিংহের অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় প্রশাসন তৃণমূলের জন্যই দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়নি। প্রচারে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে।” মুনমুন যদিও দাবি করেন, ‘‘এখন দূষণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। বিজেপি ও সিপিএম দূষণ নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে।’’
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ এলাকা থেকে কারখানা থেকে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ জমা পড়েছে। সেই অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে শুনানিতে ডাকা হবে। তার পরে পদক্ষেপ করা হবে। যদিও কারখানাগুলি জানিয়েছে, দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র চালানো হয়। ব্যবস্থা নেওয়া হয় দূষণ নিয়ন্ত্রণেও।
তবে পরিবেশকর্মী, সাহিত্যিক জয়া মিত্র মনে করেন, ‘‘স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলি দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র চালায় না। প্রশাসন সব জেনেও কেন ব্যবস্থা নেয় না, জানা নেই। এতে বায়ু, জল দূষণ তো হয়ই। সঙ্গে জমি উর্বরতা হারায়। ওই সমস্ত কারখানার কর্মীরাও অমানবিকতার শিকার হন। কারণ এই দূষণে তাঁদের কাজ করতে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy