Advertisement
E-Paper

ভোট-মরসুমে ফের চর্চায় সেই ‘সন্ত্রাস’

শান্তি ফিরেছে মঙ্গলকোটে? মানতে নারাজ বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, ‘নীরব সন্ত্রাসে’ তটস্থ হয়ে আছে গোটা এলাকা।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৪৫
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

ধানখেতের ধারে মুরগির খামারে বসে নিচু গলায় কথা বলছিলেন শান্তি ঘোষ। ভোটের আগে কী পরিস্থিতি এলাকার? বিজেপি-র মঙ্গলকোট মণ্ডল সভাপতি শান্তিবাবুর অভিযোগ, ‘‘পতাকা টাঙানোরও অধিকার নেই আমাদের। রাস্তায় দেখলে সবাই দূরে সরে যায়। জমিতে কাজের জন্য কোনও শ্রমিক পাই না। ভয়ে আত্মীয়-স্বজনেরাও আমাদের বাড়িতে আসেন না।’’

শান্তিবাবুর অভিযোগ মূলত যাঁর বিরুদ্ধে, তৃণমূলের সেই স্থানীয় নেতা মিহির ঘোষ তাঁর নিজের দাদা। রাজনৈতিক কারণে দু’জনের মধ্যে কার্যত মুখ দেখাদেখি বন্ধ। মিহিরবাবুর সাফ কথা, “ভাই বিজেপি করে। সে জন্য আমি কোনও কথা বলি না।’’

এক সময়ে কান পাতলেই শোনা যেত বোমা-গুলির শব্দ। লেগেই থাকত খুনখারাপি। অশান্তির সেই রকম আবহ এখন অনেকটাই অতীত। তাহলে কি শান্তি ফিরেছে মঙ্গলকোটে? মানতে নারাজ বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, ‘নীরব সন্ত্রাসে’ তটস্থ হয়ে আছে গোটা এলাকা। তারা কতটা ‘চাপে’ রয়েছে, তা এই দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক থেকেই পরিষ্কার বলে দাবি বিরোধীদের। তার সঙ্গে রয়েছে শাসকদলের ‘অন্তর্কলহ’। তৃণমূল নেতারা অবশ্য কোনও সন্ত্রাস বা দ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা দাবি করছেন, শান্তি এবং উন্নয়নের জন্য এলাকার মানুষ আছেন তাঁদের পাশেই।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

২০১১ সালে রাজ্যে ‘পরিবর্তনের’ ভোটেও মঙ্গলকোট বিধানসভা কেন্দ্র নিজেদের দখলে রেখেছিল সিপিএম। তবে সেই জয় এসেছিল মোটে ১২৬ ভোটে। তিন বছর পরে লোকসভা ভোটে তৃণমূল এগিয়ে যায় প্রায় ২৪ হাজার ভোটে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল এই কেন্দ্র দখলে আনলেও জয়ের ব্যবধান লোকসভা ভোটের তুলনায় দাঁড়ায় অর্ধেক, প্রায় বারো হাজারে। পঞ্চায়েত ভোটে সব আসনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। বিরোধীরা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছে। সেই সঙ্গে ওই ভোটের সময়ে ফের সামনে এসেছে তৃণমূলের ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব’।

গত কয়েক বছরে এলাকায় নানা খুনের ঘটনায় শাসকদলের দ্বন্দ্বের দিকেই আঙুল উঠেছে। শিমুলিয়া অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি ডালিম শেখ খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে জেলে রয়েছেন প্রবীণ তৃণমূল নেতা বিকাশ চৌধুরী। নাম জড়িয়েছে বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর ভাই রহমতুল্লারও। লোকসভা ভোটের প্রচার শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেলেও মঙ্গলকোটে এখনও দেখা মেলেনি বিধায়কের। তাঁর অবশ্য দাবি, “দল আমাকে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রচারের দায়িত্ব দিয়েছে। সেখানেই ছুটে বেড়াচ্ছি।’’

গত লোকসভা ও বিধানসভা, দুই নির্বাচনেই মঙ্গলকোটে প্রায় একই রকম ভোট পেয়েছিল বিজেপি। দলের নেতাদের দাবি, এলাকার একটি অংশে বিজেপি বরাবরই শক্তিশালী। এখন তৃণমূলের দ্বন্দ্বে পালে আরও হাওয়া লেগেছে। পূর্ব মঙ্গলকোট তো বটেই, পশ্চিম মঙ্গলকোটের চানক, পালিগ্রামের মতো জায়গাতেও বিজেপির পতাকা উড়ছে। দলের নেতা রানাপ্রতাপ গোস্বামীর অবশ্য অভিযোগ, ‘‘সিপিএম আমলেও মঙ্গলকোট, ঝিলু ১ ও ২ পঞ্চায়েতে বিরোধীরা কথা বলতে পারত না। এখনও সেই অবস্থা রয়েছে। বোমা-গুলির আওয়াজ কমলেও ক্রমাগত ভয় দেখানো, হুমকি রয়ে গিয়েছে।’’

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দুর্যোধন সর দাবি করেন, ওই সব এলাকায় তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরাও ভীত-সন্ত্রস্ত। তাঁর কথায়, ‘‘ভয়ে রাস্তায় নামতেই চাইছেন না কর্মীদের অনেকে। মোট ২১১টি গ্রামের মধ্যে ৫৫টিতে আমরা কোনও প্রচারই করতে পারিনি।’’

ওই এলাকায় তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা মঙ্গলকোটের উপপ্রধান শান্ত সরকারের অবশ্য বক্তব্য, “উন্নয়নের জোয়ারে বিরোধীরা ভেসে গিয়েছে।’’ দলের ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী দাবি করেন, “বিরোধীরা সন্ত্রাসের গল্প বলে বাজার গরম করতে চাইছে। বাম আমলের মতো এখন আর বোমা-গুলি শোনা যায় না। ব্যবসা বন্ধ করতে হয় না। সে জন্য আমরা শান্তি ও উন্নয়নের কথা তুলে ধরছি।’’

শাসকদলের নেতারা মানতে নারাজ। তবু বেহাল স্বাস্থ্য, ভাঙা-রাস্তা, বন্যা প্রতিরোধের মতো সমস্যাকে পিছনে ফেলে ভোট-মরসুমে মঙ্গলকোটে ঘুরপাক খাচ্ছে সেই সন্ত্রাসের কথাই।

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Mangalkot TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy