Advertisement
E-Paper

চাষে কেন চুপ মোদী, প্রশ্ন মমতার

দেশে কৃষক আত্মহত্যার বহু ঘটনা ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সে নিয়ে মুখ খোলেন না কেন, রাজ্যের ‘শস্যগোলা’ বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমানে সভা করতে এসে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সৌমেন দত্ত ও  কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৫১
পূর্বস্থলীর সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

পূর্বস্থলীর সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

দেশে কৃষক আত্মহত্যার বহু ঘটনা ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সে নিয়ে মুখ খোলেন না কেন, রাজ্যের ‘শস্যগোলা’ বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমানে সভা করতে এসে প্রশ্ন তুললেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার এই জেলার তিনটি সভাতেই চাষিদের ব্যাপারে মোদী সরকারের উদাসীনতা ও মিথ্যে প্রতিশ্রুতির অভিযোগে সরব হন তিনি। সেই সঙ্গে এ রাজ্যে তৃণমূলের সরকার চাষিদের সুবিধায় কী কী প্রকল্প এনেছে, তুলে ধরেন সেই খতিয়ান।

এ দিন পূর্বস্থলীর জামালপুর, বর্ধমানের দেওয়ানদিঘি ও রায়নার সেহারাবাজার— তিন জায়গায় নির্বাচনী জনসভা করেন মমতা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উপযুক্ত দাম না মেলার জেরে ধান, আলু থেকে পেঁয়াজ, বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ জেলার চাষিদের বড় অংশের। রবিবারও ঝড়বৃষ্টির জেরে বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিদের দাবি।

এ দিন মমতা বলেন, ‘‘আমি জানি, গত কয়েক দিন ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক জমির ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। আগের বার আমরা বিপর্যয় মোকাবিলায় তিনশো কোটি টাকা খরচ করেছিলাম। চিন্তা করবেন না, আমাদের প্রশাসন চাষের জমি, ঘরবাড়ি সমীক্ষা করার পরে এ বারও সাহায্য করা হবে।’’

মমতা জানান, এ রাজ্যে মাটি পরীক্ষা করে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। রাজ্য সরকার কৃষিজমির সব খাজনা মকুব করে দিয়েছে। মিউটেশন ফি মকুব করা হয়েছে। শস্যবিমার জন্য চাষিদের টাকা দিতে হয় না। সে বাবদ ন’শো কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য। এর পরেই তাঁর প্রশ্ন, ‘‘দেশে বারো হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এক বারও মোদী তা নিয়ে মুখ খোলেননি। ভোটের আগে ওরা বলেছে, দু’একর জমি পিছু টাকা দেবে। এত দিন দাওনি কেন?’’ বাস্তবে এই টাকা দেওয়া হবে না দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘দু’একর জমিই তো সবার নেই। কারও পাঁচ কাঠা, কারও সাত কাঠা। বাজেটেও বরাদ্দ ধরেনি। এটা করবে না।’’

তাঁদের সরকার চাষিদের সাহায্যে কী ভাবে এগিয়ে এসেছে, সেই খতিয়ান দিতে গিয়ে মমতা জানান, দালালেরা যাতে সুযোগ না পায়, সে জন্য সরকার চেক দিয়ে ধান কিনছে। আলুর অতিরিক্ত উৎপাদনের জন্য ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে যাঁর এক একর জমি আছে তাঁকে চাষ করার জন্য বছরে দু’দফায় পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হবে। প্রান্তিক চাষিরাও সাহায্য পাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এক হাজারের কম টাকা কাউকেই দেওয়া হবে না।’’

চাষের পাশাপাশি মমতা এ দিন জেলার নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন। মিষ্টি হাব থেকে তাঁতসাথী, নানা উদ্যোগের কথা উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় যখন রামপুরহাটে মামারবাড়ি যেতাম, বর্ধমানে ট্রেন থামলে কাজ ছিল সীতাভোগ, মিহিদানা কিনে নিয়ে যাওয়া।’’ তিনটি সভাতেই ভাল ভিড় হয়। জামালপুরে সভাস্থলের আশপাশে গাছেও লোকজনকে বসে থাকতে দেখা যায়।

রাজ্যে চাষিদের পরিস্থিতি নিয়ে মমতার দাবি অবশ্য মানতে নারাজ সিপিএম। দলের কৃষক সংগঠন কৃষকসভার জেলা সভাপতি উদয় সরকারের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য, সবাই দাবি করছে অনেক কিছু করেছে। কিন্তু তার পরেও কৃষকেরা হাহাকার করছেন। অভাবের জেরে তাঁরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত সাত বছরে এ রাজ্যেই দু’শো সাত জন কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন।’’ বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি সন্দীপ নন্দীর দাবি, ‘‘কেন্দ্র কৃষকদের জন্য যে কাজ করছে, তা প্রমাণিত। রাজ্য শুধু মুখেই দাবি করছে।’’

এ দিনই ভাতারে রবিবারের শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যায় কৃষি দফতরের তিনটি দল। এলাকায় গিয়েছিলেন বিধায়ক সুভাষ মণ্ডলও। স্বর্ণচালিদা এলাকার চাষি নবকুমার মণ্ডল, বিশ্বনাথ ঘোষদের দাবি, ‘‘ফসল তোলার মুখে বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’’ কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতারে প্রায় পাঁচ হাজার জমিতে হেক্টর বোরো ধানে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

বিধায়ক সুভাষবাবু বলেন, ‘‘বেশ ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা সাহায্যের আর্জি জানাচ্ছেন। প্রশাসন যে পদক্ষেপ করবেন, মুখ্যমন্ত্রী সেই বার্তা দিয়েছেন।’’

Lok Sabha Election 2019 Mamata Banerjee Narendra Modi Agrriculture
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy