Advertisement
E-Paper

বছরভর বিকল যন্ত্র, হয়রানি হাসপাতালে

থ্যালাসেমিয়া রয়েছে কি না, ছ’মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন গলসির মতিউর রহমান। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এ মাথা-ও মাথা ছুটোছুটি করতে করতে বলছিলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুরা বলছেন, আমার মেয়ের শরীরে রক্ত উৎপাদন কম হচ্ছে।

সৌমেন দত্ত l

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০০:৩২
বর্ধমান মেডিক্যালে বন্ধ বিভাগ। নিজস্ব চিত্র।

বর্ধমান মেডিক্যালে বন্ধ বিভাগ। নিজস্ব চিত্র।

থ্যালাসেমিয়া রয়েছে কি না, ছ’মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে পরীক্ষা করাতে এসেছিলেন গলসির মতিউর রহমান। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এ মাথা-ও মাথা ছুটোছুটি করতে করতে বলছিলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুরা বলছেন, আমার মেয়ের শরীরে রক্ত উৎপাদন কম হচ্ছে। তাই সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষা করাতে কয়েক দিন ধরে ঘুরছি। কিন্তু বলা হচ্ছে, পরীক্ষা হবে না।’’

মতিউরের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন রায়নার সেহেরাবাজারের শওকত রহমান। তিনিও বেশ ক্ষুব্ধ। বললেন, ‘‘বিনামূল্যে চিকিৎসার এই তো নমুনা! আমাদের মতো গরিব মানুষেরা কোথায় যাবেন? সোনাদানা বন্ধক দিয়ে দেড় বছরের ছেলেটার থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করাতে হবে মনে হচ্ছে।’’

শুধু মতিউর বা শওকত নন, গত এক বছর ধরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করাতে আসা বেশির ভাগেরই এই এক অভিজ্ঞতা। থ্যালাসেমিয়া নির্ণায়ক যন্ত্রটি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে গত বছরের মে মাস থেকে। ফলে, দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজন চিকিৎসককে দেখানোর পরেও পরীক্ষা করাতে পারছেন না। সেই সুযোগে রমরমা বেড়েছে বেসরকারি কেন্দ্রগুলির। রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালের বাইরে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করাতে গেলে ইচ্ছে মতো টাকা নেওয়া হচ্ছে। কোথাও দাবি করা হচ্ছে দেড় হাজার টাকা, কোথাও আবার দু’হাজার।

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বৃহস্পতিবার থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। গড়ে ৫০ জন রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসেন চিকিৎসার জন্য। হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা হলেও রোগ নির্ণায়ক যন্ত্রটি রয়েছে মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেই পরীক্ষা করাতে যান রোগীরা। কিন্তু বছরখানেক ধরে যন্ত্রটি খারাপ হয়ে পড়ে থাকায় পরীক্ষার সুযোগ বন্ধ। ফলে, চিকিৎসকের কাছে পৌঁছে রোগীরা জানতে পারেন, বেসরকারি কেন্দ্রই ভরসা। ওই সব কেন্দ্রগুলি ঝোপ বুঝে কোপ মারে। ৫৫০ টাকা থেকে ১৯০০ টাকা, যে যেমন পারে আদায় করে।

মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় হয়, সেই ঘরটি তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পরীক্ষাগারটিও যে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ, দেখে বোঝা যায়। ওই বিভাগের এক কর্মী বলেন, “গত বছরের মে থেকে থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় বন্ধ হয়ে আছে। পরীক্ষার জন্য শিশুদের নিয়ে মায়েরা আসেন, কিন্তু ঘর বন্ধ দেখে ফিরে যান। কবে থেকে চালু হবে, তার কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।’’ হাসপাতালের কর্তারাও মেনে নিচ্ছেন, ওই যন্ত্র খারাপ থাকায় রোগীদের খুব অসুবিধে হচ্ছে।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথা মানতে নারাজ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার বসাক। তাঁর কথায়, “কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় করিয়ে আনা হচ্ছে। ফলে, কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ যন্ত্রটি খারাপ হয়ে পড়ে থাকার ব্যাপারেও যথাযথ জায়গায় রিপোর্ট করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

bardwan medical college thalassaemia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy