গভীর রাতে দরজায় ধাক্কা। সঙ্গে চিৎকার, ‘দরজা খোল, তুই চোর’। পুলিশের উপস্থিতিতে এক লজ-মালিকের দেওয়া এই অপবাদের জেরে পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরের প্রাণেশ বাউড়ি (২৫) আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ তাঁর মায়ের। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা জানান, প্রাণেশ যে লজে কাজ করতেন তার মালিককে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে ধরা হয়েছে।
সালানপুরের ফকারডির বাসিন্দা প্রাণেশের মা অমিতা বাউড়ি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা নাগাদ তাঁদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে আচমকা চেঁচামেচি শুরু করেন রূপনারায়ণপুরের একটি লজের মালিক বিশ্বনাথ রুজ ও তাঁর সঙ্গীরা। প্রাণেশ তখন ঘুমোচ্ছিলেন। গোলমালে তাঁর ঘুম ভাঙে।
অমিতাদেবীর অভিযোগ, ‘‘লজের টিভি চুরি করেছে, এই অপবাদে ওরা ছেলেকে খুনের হুমকি দিচ্ছিল। পুলিশ ও বিশ্বনাথবাবুর দলবল দেখে ঘাবড়ে গিয়ে ছেলে ঘরের দরজা আটকে দেয়।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘কত বার ছেলেকে বললাম, দরজা খুলতে। বলল, ‘খুলছি’। আর খুলল না!’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, আধ ঘণ্টা পরে পুলিশ ও বিশ্বনাথবাবু চলে যান। প্রাণেশ দরজা না খোলায় সন্দেহ হয় স্ত্রী চৈতালির। পরে দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় প্রাণেশের দেহ উদ্ধার হয়।
পরিবারের দাবি, বিশ্বনাথবাবুর লজের কর্মী প্রাণেশ গত তিন মাস বেতন পাননি। যৌথ পরিবার বলে কোনও মতে সংসার চলছিল। স্ত্রী ও মায়ের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে বকেয়া চাইতে গেলে বিশ্বনাথবাবু গালিগালাজ করেন প্রাণেশকে। ‘সকালে ও রাতের অপমান সহ্য না করতে পেরেই প্রাণেশ আত্মঘাতী হয়েছন।
প্রাণেশের দেহ এ দিন রূপনারায়ণপুর ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। বিশ্বনাথবাবুকে গ্রেফতারের দাবিতে সেখানে বিক্ষোভ দেখান মৃতের পড়শি-পরিজনেরা। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। তবে এসিপি (পশ্চিম) অগ্নীশ্বর চৌধুরীর দাবি, ‘‘পুলিশের উপস্থিতিতে প্রাণেশকে হুমকি দেওয়া হয়নি।’’
হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বনাথবাবু দাবি করেন, ‘‘লজের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, প্রাণেশ টিভি চুরি করেছে। পুলিশে আগেই অভিযোগ করেছি।’’ তাঁর সংযোজন, সাড়ে তিন মাস আগে লজের কাজ ছাড়েন প্রাণেশ। তখনই তাঁর বকেয়া মেটানো হয়েছে।