Advertisement
E-Paper

ভিড়ে ভরা পথে শেষযাত্রায় নিরুপম

বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ বর্ধমানে এসে পৌঁছয় বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক নিরুপমবাবুর দেহ। তার অনেক আগে থেকেই দলের জেলা অফিসে অপেক্ষা করছিলেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫৬
বর্ধমানে সিপিএমের জেলা অফিস থেকে নির্মল ঝিল শ্মশানের পথে নিরুপম সেনের দেহ নিয়ে মিছিল। বুধবার। ছবি: উদিত সিংহ

বর্ধমানে সিপিএমের জেলা অফিস থেকে নির্মল ঝিল শ্মশানের পথে নিরুপম সেনের দেহ নিয়ে মিছিল। বুধবার। ছবি: উদিত সিংহ

পথের দু’পাশে তিলধারণের জায়গা নেই। আশপাশের বাড়ির বারান্দা, ছাদে মানুষের ভিড়। দোকানপাট ছেড়ে পথে বেরিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। বর্ধমানের পার্কাস রোডে সিপিএমের জেলা অফিস থেকে নির্মল ঝিল শ্মশান পর্যন্ত এমন ছবিই দেখা গেল রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী নিরুপম সেনের শেষযাত্রায়।

বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ বর্ধমানে এসে পৌঁছয় বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক নিরুপমবাবুর দেহ। তার অনেক আগে থেকেই দলের জেলা অফিসে অপেক্ষা করছিলেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা। দুই বর্ধমান তো বটেই, বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলি থেকেও এসেছিলেন দলের নেতারা। একদা প্রতিদ্বন্দ্বীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পৌঁছে যান বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও।

কলকাতা থেকে এ দিন দেহ নিয়ে বর্ধমানে পৌঁছন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র ও রবীন দেব। ছিলেন দলের নেতা মদন ঘোষ। প্রথমে শববাহী কনভয় যায় নিরুপমবাবুর জেলখানা মোড়ের বাড়িতে। সেখানে পরিজন ও শুভান্যুধায়ীরা শ্রদ্ধা জানানোর পরে দেহটি নিয়ে যাওয়া হয় সিপিএমের জেলা অফিসে, যেটির রূপকার ছিলেন নিরুপমবাবুই। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার পরে গ্রন্থাগারের সামনে বড় চাতালে লাল পতাকায় মোড়া দেহ রাখা হয়। নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে লম্বা লাইন পড়ে। লাইনে দাঁড়িয়ে চোখের জল মুছতে-মুছতে শর্মিলা মাইতি বলেন, ‘‘স্মৃতিগুলো চোখে ভাসছে। মানুষটা আজ আর নেই, ভাবতেই পারছি না!’’ নাট্যকার-বাচিকশিল্পী দেবেশ ঠাকুর বলেন, ‘‘নিরুপমবাবু সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ ছিলেন। তিনি যে নাটক লিখতেন, অনেকেই জানতেন না। মন্ত্রী থাকাকালীন ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করার জন্য পড়াশোনাও শুরু করেছিলেন।’’

নিরুপমবাবুকে শ্রদ্ধা জানানোর পরে সিপিএমের রাজ্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল বিধায়ক রবিরঞ্জনবাবু। পরে তিনি বলেন, “রাজনীতি-ধর্ম পরে, আগে আমরা মানুষ। তাই শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম। এটা আমাদের দলের সংস্কৃতিও।’’ বিমানবাবু বলেন, “উনি ভদ্রলোক। সে জন্য সৌজন্য দেখিয়ে গেলেন।’’ বর্ধমানের উন্নয়নমূলক নানা কাজে নিরুপমবাবুর সঙ্গী ছিলেন বর্ধমানের প্রাক্তন পুরপ্রধান আইনুল হক। এ দিন অবশ্য ওই ‘বহিষ্কৃত’ নেতাকে দেখা যায়নি।

বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক ও রাজ্য কৃষকসভার সম্পাদক অমল হালদার দেহ কাঁধে তুলে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখেন। নির্মল ঝিলের দিকে মিছিল শুরু হয়। সামনে ছিলেন সিপিএম নেতারা। পিছনে ৭২টি অর্ধনমিত লাল পতাকা নিয়ে কর্মী-সমর্থকেরা। চার কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে পার্কাস রোডের মোড়ে, বাদামতলা মোড়ে, কার্জন গেটের মুখে, রানিগঞ্জ বাজার মোড়, সিএমএস স্কুল, বড়বাজার, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটি গেটের সামনে অনেকে শ্রদ্ধা জানান।

তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা অনুপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভাল মনের মানুষ ছিলেন বলেই এত মানুষ ভিড় করেছেন।’’ নির্মল ঝিলে এক ঝাঁক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক শ্রদ্ধা জানাতে দাঁড়িয়েছিলেন। বিমানবাবু বলেন, ‘‘আমাদের সম্পর্ক ছিল দাদা-ভাইয়ের মতো। ওঁর মতো সঙ্গী খুব কম পাওয়া যায়।’’

ঘন্টাখানেকের পথ পেরিয়ে নির্মল ঝিলে পৌঁছায় নিরুপমবাবুর দেহ। ততক্ষণে সেখানে চলে এসেছেন তাঁর স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলে। তাঁদের সামলাচ্ছিলেন বর্ষীয়ান নেতা মদনবাবু। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ নিরুপমবাবুর দেহ নিয়ে যাওয়া গ্যাসের চুল্লির ভিতরে। ৫টা ২৫ নাগাদ শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

নির্মল ঝিলের গ্যাসের চুল্লির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেছিলেন নিরুপমবাবুই।

Last Journey Nirupam Sen CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy