Advertisement
১১ মে ২০২৪
প্রেমিকার নালিশে শ্রীঘরে

লগ্ন বয়ে যায়, বর তখন মহিলা থানায়

বিয়ে ঠিক হয়েছে। নেমন্তন্ন শেষ। বিয়ের দিন ছিল শুক্রবার। এই অবধি সব ঠিক ছিল। কিন্তু, পাত্র যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমও চালাচ্ছেন, তা কে জানত!

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৭
Share: Save:

বিয়ে ঠিক হয়েছে। নেমন্তন্ন শেষ। বিয়ের দিন ছিল শুক্রবার। এই অবধি সব ঠিক ছিল। কিন্তু, পাত্র যে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমও চালাচ্ছেন, তা কে জানত!

হাটে হাঁড়ি ভাঙল বিয়ের দিনই! তা-ও চূড়ান্ত নাটকীয় ভাবে।

শুক্কুরবারের রাত। বর্ধমানের কলিগ্রামের বিয়েবাড়িতে আমন্ত্রিতেরা আসতে শুরু করেছেন। ক্যাটারারের কর্মীরা পরিবেশন করার জন্য তৈরি। লগ্নের সময় বয়ে যাচ্ছে, অথচ বরেরই দেখা নেই। বরের বাড়িতে ফোন করলে বারবার ‘এই তো রাস্তায়’ বলে জানানো হচ্ছিল কনেপক্ষকে। তার পরেও অনেকটা সময় কেটে গেলেও বর বা বরযাত্রীর দেখা নেই।

কপালে বড় ভাঁজ কনের পরিবারের। কোনও অঘটন ঘটল কি? বর কোথায় গেল?

এমন সময় খবর এল, বরকে আটক করেছে বর্ধমান মহিলা থানা। বর অর্থাৎ সায়ন্তন পালের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ হয়েছে এ দিনই। শুনে মাথায় বাজ কনের। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ আত্মীয় পরিজনদের নিয়ে সোজা মহিলা থানায় বিয়ের সাজে ঢুকে গেলেন পাত্রী। বললেন, ‘কেন আমার বরকে ধরে আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। মাস ছ’য়েক ধরে আমাদের পরিচয়। আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা সে করতে পারে না!” ওই চিৎকারের মধ্যেই গোলাপি রঙের সালোয়ার পরে ছিপছিপে চেহারার বছর আঠাশের এক যুবতী খুব শান্ত গলায় বলেন, “আমার সঙ্গে তিন বছর ধরে ওর প্রণয়ের সম্পর্ক রয়েছে। আমাকে বিয়ে করব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।” হবু কনে সে কথা মানতে নারাজ। ওই তরুণী তখন নিজের ব্যাগ খুলে তাঁর ও সায়ন্তনের একাধিক ছবি দেখান। দেখে পাত্রী কান্না চেপে রাখতে পারেননি।

পুলিশ সূত্রের খবর, এই কথোপকথনের সময় লক-আপে মুখ গুঁজে পড়েছিলেন সায়ন্তন। দুই তরুণীই লক-আপের কাছে গিয়ে যখন তাঁর জবাব চাইছিলেন, তখন ওই যুবক মুখে রুমাল দিয়ে সরে যান। পাত্রীর বাবা মেয়ের মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘ভগবান যা করেছেন মঙ্গলের জন্য। বিয়ের পর জানতে পারলে আর কিছু করার থাকত না’। এর পরে পাত্রীর বাবা মহিলা থানাতেই লিখিত অভিযোগে জানান, প্রায় তিন বছর ধরে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্য এক মহিলার সঙ্গে সহবাস করতেন সায়ন্তন। পাত্রপক্ষ সব কিছু জানার পরেও লুকিয়ে গিয়েছে। এবং তাঁর মেয়ের সঙ্গে ছ’মাস আগে সামাজিক ভাবে বিয়ে ঠিক করেছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপপুরের দুবরাজদিঘি এলাকার বাসিন্দা সায়ন্তনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, জিএসআইয়ের পদস্থ কর্মী সায়ন্তন নাগপুরে কর্মরত। শনিবার মহিলা থানার সামনে দাঁড়িয়ে পাত্রীর বাবা বলেন, “আমার মেয়ে স্নাতোকোত্তর পড়ছে। এই ঘটনার পর খুবই ভেঙে পড়েছে। আমাদের সামাজিক সম্মান তো গেলই, প্রচুর আর্থিক ক্ষতিও হল। এখন আমাদের মেয়ের পাশে থাকতে হবে।” শুধু তাই নয়, পাত্রীপক্ষের তরফেও শনিবার মহিলা থানায় সায়ন্তনের বিরুদ্ধে হবু কনের সঙ্গে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

পাত্রীর এক আত্মীয় বলছিলেন, ‘‘শুক্রবার লগ্ন লাগার কিছুক্ষণ পরে তাঁদের কাছে খবর আসে সায়ন্তনকে পুলিশ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করার অভিযোগে আটক করেছে। বাড়ির মেয়ে কিন্তু কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায়নি। বারবারই বলতে থাকে, ‘‘ও (সায়ন্তন) আমাকে ঠকাবে বিশ্বাসই করতে পারি না। আমি থানায় গিয়ে ওকে ছাড়িয়ে আনব।’ শেষ পর্যন্ত তিন দিনের জন্য শ্রীঘরে ঠাঁই হয়েছে সায়ন্তনের।

যাঁর অভিযোগের জেরে এই কাণ্ড ধরা পড়ল, বর্ধমানের শাঁখারিপুকুরের বাসিন্দা সেই যুবতী এ দিন দাবি করেন, তিন বছর ধরে তাঁর ও সায়ন্তনের ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাসও করেছেন ওই যুবক। কিন্তু, সায়ন্তন তাঁকে ঠকিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করছে, এই খবর পেয়েই ঠিক করেন, বিয়ে আটকাতে হবে। সোজা মহিলা থানায় গিয়ে নালিশ ঠোকেন তিনি। ওই যুবতীর কথায়, ‘‘আর যেন কোনও মেয়েকে না ঠকাতে পারে সায়ন্তন, সে জন্যই থানায় জানিয়েছিলাম। ওই প্রতারকের যেন কড়া সাজা হয়।’’

সায়ন্তনের পরিবারের কেউ মুখ খুলতে চাননি। তাঁর এক আত্মীয় শুধু বলেছেন, ‘‘যা ঘটেছে, তাতে ঢি ঢি পড়ে গিয়েছে। আইন নিজের পথে চলুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage groom police station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE