Advertisement
১৯ মে ২০২৪

টিফিনের সুযোগে ব্যাঙ্কে লুট কালনায়

আগ্নেয়াস্ত্র বের করে ও বোমা ফাটানোর ভয় দেখিয়ে নিঃশব্দে লুটপাট চালিয়ে তারা চম্পট দেয়। গোটা ঘটনাটি ঘটেছে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে। মঙ্গলবার এমন ব্যাঙ্ক ডাকাতি হয় কালনা ২ ব্লকের সিঙেরকোন এলাকায়।

ব্যাঙ্কের সামনে জটলা এলাকার বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র

ব্যাঙ্কের সামনে জটলা এলাকার বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৮ ১৩:৩০
Share: Save:

ভরদুপুর। তার উপরে টিফিন টাইম। হঠাৎই দু’টি মোটরবাইক এসে দাঁড়ায় ব্যাঙ্কের সামনে। প্রত্যেকের মুখে রুমাল বাঁধা ছিল। তার পরে ব্যাঙ্কে ঢুকে স্বমূর্তি ধারণ করে তারা।

আগ্নেয়াস্ত্র বের করে ও বোমা ফাটানোর ভয় দেখিয়ে নিঃশব্দে লুটপাট চালিয়ে তারা চম্পট দেয়। গোটা ঘটনাটি ঘটেছে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে। মঙ্গলবার এমন ব্যাঙ্ক ডাকাতি হয় কালনা ২ ব্লকের সিঙেরকোন এলাকায়। ঘটনাস্থলের কাছেই রয়েছে ব্লক তৃণমূল অফিস। ব্লক সভাপতি প্রণব রায় বলেন, ‘‘মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে দুষ্কৃতীরা ‘অপারেশন’ চালিয়ে চলে গেল। কেউ টের পেল না। পুলিশকে বলা হয়েছে, দ্রুত ঘটনার কিনারা করার।’’ ভরদুপুরে এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। খবির মোল্লা নামে এক যুবক বলেন, ‘‘দিনের বেলায় জনবহুল এলাকায় এমন ঘটনা ভাবা যায় না। পুলিশের উচিত দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা।’’ তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও (কালনা) শান্তনু চৌধুরী।

কালনা-বৈচি রোডের পাশে একটি ভবনের দোতলায় এই রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি মঙ্গলবার ব্যাঙ্কে ভাল ভিড় থাকে এখানে। কারণ, এ দিন সোনা বন্দক রেখে গ্রাহকদের ঋণ দেওয়া হয় ব্যাঙ্কের তরফে। দুপুর আড়াইটের পরে ব্যাঙ্ক কর্মীদের টিফিন শুরু হয়। প্রতিদিনই ৩০ মিনিট লেনদেন বন্ধ থাকে এই সময়। টিফিন পর্ব শেষ হওয়ার পরেই যাতে দ্রুত পরিষেবা নেওয়া যায়, তার জন্য আগে থেকেই গ্রাহকেরা ব্যাঙ্কে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। কারও কাছে থাকে নগদ টাকা, কারও কাছে সোনার গয়না। ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, এখানে নিরাপত্তার জন্য রয়েছেন দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার। এ দিন টিফিনের সময় তাঁরাও দোতলা থেকে নীচে নেমে আসেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পৌনে তিনটে নাগাদ দু’টি বাইক ব্যাঙ্কের সামনে এসে দাঁড়ায়। তাতে দু’জন করে যুবক ছিল। ব্যাঙ্কের পাশে চায়ের দোকান থেকে অনেকেই তাদের দেখেছিলেন। তবে সকলের ধারণা হয়, রোদ থেকে বাঁচতে গ্রাহকেরা মুখে রুমালে বেঁধে এসেছেন। কিন্তু চার যুবক ব্যাঙ্কে ঢুকেই স্বমূর্তি নেয়। সে সময় ব্যাঙ্কে জনা পঁচিশ গ্রাহক ছিলেন। দুষ্কৃতীরা প্রথমে রিভলভার বের করে। পরে গ্রাহকদের হুমকি দেয়, তাদের কাছে বোমাও রয়েছে। কথা না শুনলে বোমা-গুলি দুই চলবে। এর পরেই দুষ্কৃতীরা গ্রাহক ও ব্যাঙ্ক কর্মীদের একটি ঘরে আটকে রেখে লুঠপাট শুরু করে। আতঙ্ক তৈরির করার জন্য তারা দুই ব্যাঙ্ক কর্মীকে মারধরও করে বলে অভিযোগ।

এ দিন ব্যাঙ্কে এসেছিলেন বাজিতপুর গ্রামের অটো চালক আব্দুল রহমান। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, তিনি সোনা বন্দক রেখে ঋণ নেবেন। বিকেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘বাজারে কিছু দেনা ছিল। ভেবেছিলাম সোনার গয়না বন্দক রেখে কিছু ঋণ নেব। সে জন্য এ দিন কয়েক ভরি সোনার গয়না নিয়ে ব্যাঙ্কে এসেছিলাম। সোনার বাক্সটা এক ব্যাঙ্ক কর্মীর সামনে রাখতেই দেখি, দুষ্কৃতীরা হামলা শুরু করেছে। তারা আমার গয়নার বাক্সও কেড়ে নেয়।’’ তিনি জানান, ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে আসা গ্রাহকের কাছ থেকেও টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। দুষ্কৃতীরা ব্যাঙ্কের ভল্ট ও লকার ভাঙতে পারেনি। কিন্তু দৈনিক লেনদেনের নগদ টাকা নিয়ে গিয়েছে।

দুষ্কৃতীরা চলে যাওয়ার মিনিট দশেক পরে ব্যাঙ্কের তরফে ফোন করে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। এর পরেই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কালনার এসডিপিও, সিআই এবং কালনার ওসি। সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। ব্যাঙ্কের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তদন্ত শুরু করছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Loot Miscreants Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE