Advertisement
E-Paper

পাউডার উড়িয়ে টাকা লুঠ, ধৃত ওড়িশার ৯

মাস দুয়েক ধরেই বর্ধমান ও নদিয়ায় একের পর এক ব্যাঙ্ক ডাকাতি ঘুম কেড়ে নিয়েছিল পুলিশের। কোথাও দিনেদুপুরে, কোথাও পড়ন্ত বেলায় ব্যাঙ্ক থেকে বেরোনোর মুখে বা পথে লুঠ হয়ে যেত টাকার বান্ডিল। চেনা দুষ্কৃতীদের কাজ যে এটা নয়, তার আঁচ পেলেও ডাকাতির কিনারা করতে পারছিল না পুলিশ। অবশেষে শিকে ছিঁড়ল গুসকরায়।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০২:২৬
ব্যাঙ্কে লুঠে ধৃত ন’জন। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কে লুঠে ধৃত ন’জন। —নিজস্ব চিত্র।

মাস দুয়েক ধরেই বর্ধমান ও নদিয়ায় একের পর এক ব্যাঙ্ক ডাকাতি ঘুম কেড়ে নিয়েছিল পুলিশের। কোথাও দিনেদুপুরে, কোথাও পড়ন্ত বেলায় ব্যাঙ্ক থেকে বেরোনোর মুখে বা পথে লুঠ হয়ে যেত টাকার বান্ডিল। চেনা দুষ্কৃতীদের কাজ যে এটা নয়, তার আঁচ পেলেও ডাকাতির কিনারা করতে পারছিল না পুলিশ। অবশেষে শিকে ছিঁড়ল গুসকরায়।

বৃহস্পতিবার রাতে গুসকরার গরুর হাটে ওই দুষ্কৃতীদের ডেরায় হানা দিয়ে ন’জনকে ধরে ফেলল পুলিশ। ওড়িশার গঞ্জাম এবং কুদলা এলাকার ওই ন’জনের কাছে থেকে একটি মোটরবাইক, ৬০ হাজার টাকা, ব্যাঙ্কের পাশবই, প্যান কার্ড-সহ বেশ কিছু কাগজপত্রও উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে তারা দুই জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক গ্রাহকের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে।

মাস দুয়েক ধরেই গুসকরা, নতুনহাট, পূর্বস্থলী, কাটোয়া, কালনা-সহ বেশ কিছু জায়গা থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ আসছিল যে, ব্যাঙ্ক থেকে বেরোনোর পরেই নানা কৌশলে টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। একই ঘটনা ঘটছিল নদিয়া জেলার নবদ্বীপ-সহ বিস্তীর্ণ এলাকাতেও। দিন ছয়েক আগে শেষ ডাকাতিটি হয় কালনা মহকুমায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কালনা ১ ব্লকের ধাত্রীগ্রামের কালীনগর এলাকায় আনজার আলি মেমোরিয়াল নামে একটি আন্তঃরাজ্য কবাডি প্রতিযোগিতা হয়। এর উদ্যোক্তা ছিল গ্রামেরই কিনার স্মৃতি কবাডি ক্লাব। টুর্নামেন্টের পরে বাজারে ধার দেনা মেটানোর জন্য ক্লাবের কোষাধক্ষ্য আবু তায়েব মোল্লা ধাত্রীগ্রাম এলাকার একটি ব্যাঙ্ক থেকে ৩০ হাজার টাকা তোলেন। ব্যাঙ্কের কাগজপত্র-সহ নগদ টাকা একটি ব্যাগে রেখে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। টাকার ব্যাগ ছিল সাইকেলের হ্যান্ডেলে। অভইযোগ, পথে একটি দোকানে ক্লাবের কিছু জিনিস কিনতে নামলে মুহূর্তে সাইকেল থেকে হাওয়া হয়ে যায় ওই ব্যাগটি। ক্লাব কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানায় কালনা থানায়। দোষীদের গ্রেফতারের জন্য যখন খোঁজখবর ছলছে তখন নদিয়া জেলার একটি সূত্র থেকেও কালনার এসডিপিও ইন্দ্রজিত্‌ সরকারের কাছে ছিনতাইবাজদের সমন্ধে কিছু তথ্য আসে। এরপরেই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে মহকুমা পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে নিপুণ হাতে অপারেশন চালানো দলটি ভিন রাজ্যের।

পুলিশ খবর পায়, ভিন রাজ্যের দলটি তাঁবু গেড়ে রয়েছে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের একটি ইটভাটার কাছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে দলটি রাতারাতি সরে গিয়েছে গুসকরার একটি গরুর হাটের কাছে। এরপরেই ওই দলের এক সদস্যের মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ধরে অভিযান চালায় পুলিষ। বৃহস্পতিবার রাতে কালনা থানার একটি দল গুসকরায় পৌঁছয়। সেখানকার পুলিশের যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় অভিযান। ঘটনাস্থলেই হাতেনাতে ধরে ফেলা হয় ন’জনকে। পুলিশ জানিয়েছে ধৃত যুবকদের নাম এম দিলীপ, সুমন দাস, কৃষ্ণা আউল, এ রাজা, আউল ভুলু, শিবা আউল এবং বালু দাস ওরফে বাল রাজু। ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরাও শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দলটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০ জন। অনেকে সপরিবারেও থাকতেন। যাযাবরের মতো তাঁবু গেড়ে বিভিন্ন এলাকায় তারা বসবাস করতেন। সাধারন মানুষকে জানাতেন বিভিন্ন এলাকায় মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করাই তাদের জীবিকা। পুলিশ তদন্তে জেনেছে, ওই দলটির হাতিয়ার ছিল বাইক। একএকটি মোটরবাইকে দু’জন করে চেপে বেড়িয়ে পড়ত। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে এক জন সোজা গ্রাহক সেজে ব্যাঙ্কে ঢুকে যেত। তারপর লক্ষ্য রাখত ভারি অঙ্কের টাকা কারা তুলছে, কীভাবে টাকা রাখছে। এরপরেই বেরিয়ে টার্গেটের পিছনে বাইক নিয়ে শুরু হতো দৌড়। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই যুবকেরা নিজেদের কাছে এক ধরনের পাউডার রাখত। টার্গেটের দেহে ওই পাউডার লাগলেই শুরু হতো চুলকুলি, জ্বলুনি। সেই ফাঁকেই টাকার ব্যাগ কেড়ে হাওয়ার হয়ে যেত বাইকের নানা কেরামতিতে পারদর্শী ওই যুবকেরা।

মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ওড়িশা থেকে এসে ওরা ভাঙা ভাঙা বাংলা শিখেছিল। হিন্দিও বলতে পারত। আপাতত দুটি জেলায় ওদের গতিবিধির কথা জানা গিয়েছে। অন্য রাজ্যেও একই ধরনের কাজ করেছে কি না তা জানার চেষ্টা চলছে। ওই আধিকারীকের দাবি, বহু জায়গায় ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজে এদের দেখা গিয়েছে। তবে কেউই এলাকার লোক না হওয়ায় খোঁজ পেতে সমস্যা হচ্ছিল।

kedarnath bhattacharya Money plundered 9 inhabitants bank robbery south bengal news guskara
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy