Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
পুলিশ ফাইল থেকে

দুপুরে বচসা পুজো‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ মণ্ডপে, সন্ধ্যায় খুন

কথা কাটাকাটি দিয়ে গোলমালটা শুরু হয়েছিল। সেটা ছিল সরস্বতী পুজোর দিন। সেই বচসা থেকে মারধর, আর তার জেরে একেবারে গুলি করে খুন— বছর চব্বিশ আগে জামুড়িয়ার ইস্ট কেন্দায় এমনটাই ঘটেছিল, দাবি করেন এলাকার পুরনো বাসিন্দারা।

এই আবাসনেই থাকতেন প্রমোদবাবু। খুন হন বাড়ির পাশেই।  ইস্ট কেন্দায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

এই আবাসনেই থাকতেন প্রমোদবাবু। খুন হন বাড়ির পাশেই। ইস্ট কেন্দায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৯
Share: Save:

কথা কাটাকাটি দিয়ে গোলমালটা শুরু হয়েছিল। সেটা ছিল সরস্বতী পুজোর দিন। সেই বচসা থেকে মারধর, আর তার জেরে একেবারে গুলি করে খুন— বছর চব্বিশ আগে জামুড়িয়ার ইস্ট কেন্দায় এমনটাই ঘটেছিল, দাবি করেন এলাকার পুরনো বাসিন্দারা। পরে ঘটনায় মূল অভিযুক্তেরও মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। যদিও আদালতে তার প্রমাণপত্র দাখিল হয়নি। সেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণও শুরু হয়নি এখনও।

১৯৯২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে যাঁকে কেন্দ্র করে এই গোলমালের শুরু, খুনের মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় নাম উঠেছিল তাঁরও। রাজু রাম নামে সেই যুবকই জানালেন সে দিনের ঘটনার কথা। তাঁর কথায়, ‘‘তখন আমার বয়স ১২ বছর। আমি বরাবরই চোখে কম দেখি। বাড়ির কাছে একটা মণ্ডপে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলাম। মণ্ডপটি সুতো দিয়ে ঘেরা ছিল। আমি বুঝতে না পারায় পায়ে লেগে এক দিকের সুতো ছিঁড়ে যায়। তাতে টান লেগে সামনে রাখা গামলার প্রসাদ পড়ে যায়।’’ রাজু অভিযোগ করেন, এই ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমাও চান। পুজোর কর্তা প্রমোদ সিংহ তা সত্ত্বেও তাঁকে মারধর করেন। সে নিয়েই গোলমাল শুরু হয়।

রাজুক দাবি, প্রমোদ সিংহ নামে পাশের পাড়ারই আর এক জন ও ধর্মেন্দ্র পাসোয়ান এই ঘটনার প্রতিবাদ করেন। তাঁরে পুজোর কর্তা প্রমোদবাবুর কাছে জানতে চান, রাজুর চোখে কম দেখার কথা এলাকার সকলে জানা সত্ত্বেও এই ঘটনার জন্য তাঁকে মারধর করা হল কেন। সে নিয়ে বচসা বেধে যায়। রাজু দাবি করেন, বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল শুরু হওয়ায় তাঁকে বাড়ি চলে যেতে বলেন ধর্মেন্দ্ররা। তিনি বাড়ি চলে যান। তার পরে কী ঘটেছিল তাঁর জানা নেই।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যায় বাড়ির পিছনে গুলিতে খুন হয়ে যান পুজোর কর্তা প্রমোদ। অভিযোগ ওঠে ধর্মেন্দ্র ও অন্য প্রমোদের বিরুদ্ধেই। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। ওই দু’জন ছাড়াও রাজু এবং ধর্মেন্দ্রর ভাই শ্যামসুন্দর পাসোয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নিহতের পরিবার। ঘটনার পরে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান রাজু। ধৃত দু’জন মাস তিনেক পরে জামিনে ছাড়া পান। তার পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন রাজু ও শ্যামসুন্দর। বছর আটেক পরে আদালতে হাজিরা না দেওয়ায় রাজুর নামে সমন জারি হয়েছিল। তখন দিন দশেকের জেল হয় তাঁর। রাজুর দাবি, দুই অভিযুক্ত ধর্মেন্দ্র ও প্রমোদ পরে ভিন্‌ রাজ্যে খুন হয়ে গিয়েছেন বলে শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এর সত্যি-মিথ্যে জানি না। তবে শ্যামসুন্দর ও আমার কোনও দোষ নেই। বিচারের অপেক্ষায় রয়েছি।’’

নিহত প্রমোদের পরিবারের কেউ এখন আর এই এলাকায় থাকেন না। প্রতিবেশীরা জানান, প্রমোদের বাবা খনিকর্মী ছিলেন। ছেলের মৃত্যুর কিছু দিন পরেই পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান। খুনে অভিযুক্ত ধর্মেন্দ্রের দাদা সাগর পাসোয়ান দাবি করেন, “আমার ভাই ধর্মেন্দ্র ও শ্যামসুন্দর এই ঘটনায় জড়িত ছিল না। ধর্মেন্দ্র অনেক দিন আগে বিহারে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আর এক অভিযুক্ত প্রমোদ সিংহ ও তাঁর ভাই বিনোদ সিংহের এক সময়ে এলাকায় দাপট ছিল। দলবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন তাঁরা। বিনোদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। রাজুর আইনজীবী শান্তনু চক্রবর্তী জানান, ধর্মেন্দ্র ও প্রমোদের মৃত্যু হয়েছে বলে দু’টি পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর সার্টিফিকেট বা অন্য কোনও প্রমাণপত্র আদালতে পেশ করেনি তারা। এলাকাবাসীর একাংশের আবার দাবি, অভিযুক্ত প্রমোদ ভিন্‌ রাজ্যে রয়েছেন বলে শুনেছেন তাঁরা।

আইনজীবী শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘পুলিশের দাখিল করা চার্জশিটে লেখা আছে, ধর্মেন্দ্র পাসোয়ান গুলি করে প্রমোদকে খুন করে। এখন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুই হয়নি। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব মামলার নিষ্পত্তি হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Broil Police file
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE